হৃদয় কপাটিকার ত্রুটি; ডাঃ পার্থপ্রতিম। ২৪ শে মে ১৯৯৯; পৃষ্ঠা -তিন; দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত
এই প্রাসাদে রয়েছে চারটি নিরস্ত্র প্রহরী। একঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়া যায়, কিন্তু ফিরে আসতে গেলেই দরজা বন্ধ। এ অট্টালিকায় রয়েছে আমাদের প্রাণ ভ্রমরা।
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন হৃদযন্ত্রের কথাই বলছি। হৃৎপিন্ডের চারটি ভাগের মধ্যে যে যোগাযোগের দরজা রয়েছে সেগুলি ঢাকা থাকে একমুখী ভালভের সাহায্যে। কার্বন-ডাই অক্সাইড পূর্ণ রক্ত মহাশিরাগুলির মাধ্যমে ডান অলিন্দে আসে। তারপর সেই রক্ত যায় ডান নিলয়ে। ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মধ্যে রয়েছে একটি তিন পাল্লাওয়ালা দরজা। এই দরজার নাম ট্রাইকাসপিড ভালভ (Tricuspid Valve)। ডান নিলয় থেকে অর্ধচন্দ্রাকার কপাটিকা (Semilunar Valve) দিয়ে রক্ত যায় ফুসফুসে। ফুসফুস থেকে অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত প্রথমে বাম অলিন্দে আসে। বাম অলিন্দ ও নিলয়ের মধ্যে আছে দু’পাল্লার দরজা বাইকাসপিড ভালভ (Bicuspid Valve)। একে মাইট্রাল ভালভও বলে। বাম নিলয় থেকে অক্সিজেন পূর্ণ রক্ত মহাধমনীর (Aorta) মধ্য দিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। মহাধমনীর মুখে থাকা অর্ধচন্দ্রাকার কপাটিকার নাম অ্যাওর্টিক ভালভ (Aoric Valve)।
হৃদযন্ত্রের এই চারটি ভালভের ত্রুটি-বিচ্যুতির ফলে আমাদের শরীরে রক্তের চলাচল ব্যাহত হয়। কপাটিকার যে দু’টি ত্রুটি মূলত দেখা যায় তা হ’ল- ভালভ সংকুচিত হওয়া বা স্টেনসিস (Stenosis) ও ভালভ ঠিকমতো কাজ করতে না পারা বা ঠিকমতো বন্ধ না হওয়া বা রিগারজিটেশন (Regurgitation)।
মাইট্রাল স্টেনসিস (Mitral Stenosis): মাইট্রাল ভালভের ছিদ্রের মাপ সাধারণভাবে ৫ বর্গ সেমি। এই রোগে ছিদ্র ৪ থেকে ৩ বর্গ সেমি হয়ে যায়। এর ফলে রক্ত বাম অলিন্দ থেকে বাম নিলয়ে আসতে কিছুটা বাধা পায়। গবেষণা থেকে দেখা যায়- এ রোগ একদিনে হয় না। দীর্ঘদিন ধরে ধীরে ধীরে কপাটিকাগুলি ছোটো হতে থাকে। পরে ব্যাধি হৃদয়ে জাঁকিয়ে বসে। রক্ত যাওয়ার পথে বাধা থাকার জন্য বাম অলিন্দ বড়ো ও শিথিল (Left Atrial dilatation) হয়ে পড়ে। প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটে।
রিউম্যাটিক জ্বর ও কোরিয়া (Chorea) থেকে সাধারণত মাইট্রাল স্টেনসিস হয়। এই অসুবিধা মেয়েদের মধ্যেই বেশি। নিঃশ্বাসে কষ্ট, পা ফোলা, লিভার বড়ো হয়ে যাওয়া, শুকনো কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া, বুক ধড়ফড় প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। কষ্টগুলি পরিশ্রমের সময় বিশেষভাবে নজর আসে। ডাক্তারবাবুরা যখন স্টেথোস্কোপ দিয়ে রোগীর বুক পরীক্ষা করেন তখন এক্ষেত্রে প্রথম হৃদধ্বনি (First Heart Sound) খুব জোরালো ভাবে শুনতে পান। শোনা যায় হার্টের অস্বাভাবিক শব্দ (Murmur)। ই.সি.জি., ইকোকার্ডিওগ্রাফি থেকে রোগের প্রকৃত স্বরূপ ধরা পড়ে।
এসব রোগীদের লবণ খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে বেশি পরিশ্রমের কাজও বন্ধ করা উচিত। মেয়েদের এ রোগ ধরা পড়লে, তা ঠিকমতো চিকিৎসা না করে গর্ভবতী না হওয়াই ভালো। মাইট্রাল স্টেনসিসের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে পেনিসিলিন জাতীয় জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। যাতে থ্রম্বোসিস না হতে পারে তার জন্য রক্ত জমাট না বাঁধার ওষুধ (Anticoagulant) দেওয়া হয়ে থাকে। তবে রোগ একবার খুঁটি গেড়ে বসলে তখন শল্য চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। মাইট্রাল ভালভোটমি (Mitral Valvotomy)-তে যন্ত্রের সাহায্যে সংকুচিত কপাটিকাকে বড়ো করে দেওয়া হয়। অনেক সময় এ কাজে ব্যবহার করা হয় বিশেষ ধরনের বেলুন (Mitral Ballon Valvuloplasty)। যদি মাইট্রাল কপাটিকাগুলি শক্ত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ভালভ পাল্টানোর (Valve replacement) দরকার হয়ে পড়ে। তবে ভালভোটামি বা ভালভ রিপ্লেসমেন্ট যাই হোক না কেন, এসবের পর রোগীকে চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেই হবে।
মাইট্রাল রিগারজিটেশন (Mitral Regurgitation): এ ব্যাধির অন্য নাম ঢিলেঢালা মাইট্রাল বা ফ্লপি মাইট্রাল (Floopy Mitral)। মাইট্রাল কপাটিকার অল্পস্বল্প ঢিলেঢালা থাকাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। জন্মগতভাবে এটা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। হৃদযন্ত্রের সংযোজক কলার (Connective Tissuse) ত্রুটির জন্যও এটি হতে পারে। ফ্লপি মাইট্রাল পুরুষের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। উপসর্গগুলি নির্ভর করে মাইট্রাল ভালভের রিগারজিটেশনের হার কত তার ওপর। অন্যভাবে বলা যায় যে, ভালভ শিথিল হওয়ার কাজ কত দিন ধরে চলছে। যদি এই প্রক্রিয়া খুব ধীরে ধীরে হয় তবে প্রকাশিত লক্ষণগুলি মোটামুটি মাইট্রাল স্টেনসিসের মতোই। মায়োকার্ডিয়াল ডিজিজ্ থেকে এই রোগ হলে তখন তা ভয়াবহ আকার নেয়।
শারীরিক পরিশ্রম করলেই শ্বাসকষ্ট, সবসময় ক্লান্তি বা পরিশ্রান্তভাব, সবরকম কাজেই অনীহা এসব উপসর্গ সাধারণভাবে দেখা যায়। এক্স-রে থেকে জানা যায় রোগীর হৃদযন্ত্রের বাম অলিন্দ বড়ো বা শিথিল হয়ে গেছে কি না। ই.সি.জি. থেকেও অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তবে মাইট্রাল ভালভের সঠিক অবস্থা জানার জন্য ডপলার ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা প্রয়োজন।
এ রোগের চিকিৎসার জন্য হৃদরোগীকে প্রস্রাব হওয়ার ওষুধ (Diuretic) দেওয়া হয়। দেওয়া হয় রক্তনালী ফুলে বড়ো হওয়ার ওষুধ (Vasodilator), রক্ত যাতে জমাট না বাঁধে তার জন্য রোগীকে খেতে হয় তঞ্চন বিরোধী ওষুধ (Anticoagulant)। তবে এসবে তেমন কোনো উপকার না হলে ভালভ অপারেশন করে সেটি পুনর্গঠন করা হয় বা ভালভটি পাল্টে দেওয়া হয়। হোমিওপ্যাথি মতে এ রোগের চিকিৎসার জন্য এডোনিস ভার্ন্যালিস (Adonis Ver) একটি খুব উপকারী ওষুধ। এছাড়াও আর্সেনিক আয়োড (Arsenic iod), ডিজিটেলিস (Digitalis), ক্যাকটাস (Cactus) প্রভৃতিও ব্যবহার করা যায়।
ট্রাইকাসপিড স্টেনসিস (Tricuspid Stenosis): ট্রাইকাসপিড ভালভ এ রোগের উৎপত্তির মূলে রয়েছে রিউম্যাটিক জ্বর। সাধারণভাবে মাইট্রাল ও অ্যাওর্টিক কপাটিকার ত্রুটির সঙ্গে এ ব্যাধি দেখা যায়। আলাদাভাবে শুধু ট্রাইকাসপিড স্টেনসিস খুবই বিরল। এ রোগের লক্ষণও মাইট্রাল ভালভ স্টেনসিসের মতোই, তবে এক্ষেত্রে গলার শিরা জুগলার ভেন (Jugular Vein)-এর রক্তচাপ খুব বেড়ে যায়। বুকের এক্স-রে থেকে ডান অলিন্দের বিবর্ধন চোখে পড়ে। এ রোগের চিকিৎসা মাইট্রাল স্টেনসিসের মতোই।
ট্রাইকাসপিড রিগারজিটেশন (Tricuspid Reguriation): হৃদযন্ত্রের এ অবস্থা প্রায়ই দেখা যায়। ট্রাইকাসপিড শিথিলতার জন্য ফ্লপি মাইট্রালের মতো এত অসুবিধা হয় না। এ রোগীর নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় ডাক্তারবাবুরা হৃৎপিন্ডের মার্মার শুনতে পান। এ ব্যাধির চিকিৎসাও মাইট্রাল রিগারজিটেশনের মতো।
অ্যাওর্টিক স্টেনসিস (Aortic Stenosis): মহাধমনীর মুখে থাকা অর্ধচন্দ্রাকার অ্যাওর্টিক ভালভ সরু হয়ে গেলে শরীরের রক্ত চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। এ রোগীর ৮০ শতাংশই পুরুষ। মহিলাদের মধ্যে যেটুকু দেখা যায়, তারও বেশির ভাগ বাচ্চা মেয়ে। অ্যাওর্টিক ভালভ খুব ধীরে ধীরে সরু হয়ে যায়। এ ব্যাধি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জন্মগত বা রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজের ফল। আবার বৃদ্ধ বয়সে যখন প্রাকৃতিক কারণে শরীর কর্ম অক্ষম হয়ে পড়ে, তখন এই ত্রুটি দেখা যায়। অনেকক্ষেত্রে বেশি বয়সে এ ব্যাধির সঙ্গে দেখা দেয় করোনারি ধমনীর স্ফীতি (Coronary Atheroma)।
এই ত্রুটিতে রোগী অল্প পরিশ্রমে কাহিল হয়ে পড়ে, বুকের বাঁ-দিকে ও বাঁ-হাতে ব্যথা (Angina Pectories), ফুসফুসে জলীয় পদার্থ জমে তা ফুলে যাওয়া (Pulmonary Oedema), ডান হার্ট ফেল হওয়া (Right Heart Failure) আরো বহু উপসর্গ দেখা যায়। রোগ নির্ণয়ের জন্য ই.সি.জি. করলে জানা যায়- ডান অলিন্দ ও নিলয় বড়ো হয়ে গেছে। তবে বয়স্ক রোগীদের অ্যাওর্টিক স্টেনসিস থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় ই.সি.জি স্বাভাবিক থাকে। সেক্ষেত্রে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করতে হয়। ডপলার কার্ডিওগ্রাফি থেকে রক্তপ্রবাহ কোথায় কতটা বাধা পাচ্ছে? রক্ত প্রবাহের বেগ কত? এসব তথ্য পাওয়া সম্ভব। এতেও সুস্পষ্টভাবে রোগের স্বরূপ ধরা না পড়লে অ্যাঞ্জিওগ্রাম (Angiogurm) বা, কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন Cardiac Catheterization)-এর সাহায্য নিতে হয়।
এ রোগের চিকিৎসা প্রথম থেকেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করতে হবে। বেশি দেরি করলে রোগী হঠাৎই মারা যেতে পারে। বেলুন ভালভিউলোপ্লাস্টির সাহায্যে সংকুচিত কপাটিকা মেরামত করা যায়। আর ভালভ যদি বদলাতে হয় তবে তাড়াতাড়ি এ কাজ করে নেওয়াই ভালো, কারণ বয়স যত বেশি হবে এই অপারেশনের ঝুঁকি ততই বাড়বে। ভালভ পরিবর্তন করে কৃত্রিম ভালভ বসানোর পরেও রোগীকে সারাজীবন ওষুধ খেয়ে যেতে হয়।
অ্যাওর্টিক রিগারজিটেশন (Aortic Regurgitation): মাইট্রাল ভালভ-এর জন্মগত ত্রুটি, রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিস্, হৃদযন্ত্রের এন্ডোকার্ডিয়াম পেশিতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমন (Infective Endocarditis) থেকে এ রোগের উৎপত্তি। এছাড়া সিফিলিস, গনোরিয়া থেকেও পরবর্তীকালে এ ব্যাধি দেখা যায়।
হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, মাথার ভেতর মাঝে-মাঝে দপ্-দপ্ করে ব্যথা করা, শ্বাস নিতে কষ্ট, গলার শিরা ফুলে ওঠা এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। ডাক্তারবাবুরা এসব রোগীর ব্লাডপ্রেসার মাপার সময় সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক চাপের মধ্যে খুব বেশি ব্যবধান দেখতে পান। এই ব্যাধিতে ডায়াস্টোলিক চাপ খুব কমে যায়, এমন কী ১০ থেকে ৫ mm Hg হতে পারে। চিকিৎসকেরা যখন স্টেথোস্কোপ দিয়ে রোগীর বুক পরীক্ষা করেন তখন নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় হৃদযন্ত্রের মার্মার শুনতে পান। অ্যাওর্টিক ভালভের বিকলতা থেকে বাম নিলয় শিথিল হয়ে পড়ে। এভাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাম নিলয় দ্বিগুণ বা তিনগুণ বড়ো হতে পারে। বুকের ছাতির এক্স-রে থেকে নিলয় বড়ো হওয়ার ব্যাপারটি বোঝা যায়। তাছাড়া ই.সি.জি., ইকোকার্ডিওগ্রাফি, অ্যাঞ্জিওগ্রাম, কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন-এর সাহায্যে রোগের তীব্রতা বোঝা সম্ভব। এসব রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি মোটামুটিভাবে মাইট্রাল রিগারজিটেশনের মতো। কার্ডিওপালমোনারি বাইপাস করে অ্যাওর্টিক ভালভ পাল্টানো হয়।
পালমোনারি স্টেনসিস (Pulmonary Stenosis): এই ত্রুটির বেশিই ভাগই জন্মগত। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এ ব্যাধির সঙ্গে অন্যসব রোগ যেমন- ফ্যালটস্টেট্রালজি দেখা যায়। হৃৎপিন্ড সংকোচনের সময় বুকের বাঁ-দিকের উপরিভাগে মার্মার হয়। পালমোনারি ভালভের অল্পস্বল্প সংকোচনে তেমন বিপদের আশঙ্কা নেই, যদি না এটা উত্তরোত্তর সংকুচিত হতে থাকে। পালমোনারি বেলুন ভালভিউলোপ্লাস্টি (Pulmonary ballon valvuloplasty) করে ভালভ প্রসারিত করে দিলে, তা বহুদিন পর্যন্ত ঝঞ্ঝাট মুক্ত থাকে।
পালমোনারি রিগারজিটেশন (Pulmonary Regurgitation): পৃথকভাবে এই ত্রুটি তেমন দেখা যায় না। পালমোনারি হাইপারটেনশনের সঙ্গে এ রোগ বেশি দেখা যায়। রক্তচাপ বেশি থাকার জন্য ফুসফুসের ভেতরে থাকা রক্তজালক ছিঁড়ে মুখ দিয়ে রক্ত উঠতে থাকে। আলাদাভাবে এ রোগের তেমন চিকিৎসা হয় না। শরীরের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকেরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেন।
হৃদযন্ত্রের ভালভ বা কপাটিকাগুলির অবস্থার ওপরেই নির্ভর করে হৃদয়ের কার্যক্ষমতা। তাই ভালভের ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়ে রোগী ও তার চিকিৎসককে প্রথম থেকেই সজাগ হতে হবে। জীবনতরীর হাল-মাস্তুল-পাল ঠিক-ঠাক ভাবে থাকলে, তবেই না হেসে-খেলে পৌঁছে যাওয়া যাবে জীবন নদীর ওপারে।