শান্তির বার্তা নিয়ে আসছে ‘ডুয়ার্স ডে’; নাসিরুদ্দিন গাজী / কালচিনি; ২৫ নভেম্বর, ২০১০; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
ডুয়ার্স অর্থাৎ দরজা, ভারত-ভুটানের আসা-যাওয়ার দরজা, প্রায় ১৬০ কিমি ভূখন্ড জুড়ে ডুয়ার্স। এখানে প্রায় ১৪৫ টি ভাষা, ছোটো জায়গায় বহু ভাষাভাষী মানুষের বাস। বিভিন্ন জনজাতির বাসও এই ডুয়ার্সে। পৃথিবীর বিরলতম জনজাতি টোটো সম্প্রদায়ের বাস এই ডুয়ার্সে। পাহাড়ের পাদদেশে, জঙ্গল, নদী, চা বাগান, পশুপাখিতে সমৃদ্ধ ডুয়ার্স। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মনোরম পরিবেশের বৈচিত্র্য উপভোগ করতে ডুয়ার্সে আসেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা।
বর্তমানে ডুয়ার্সে অস্থিরতা লক্ষ্যণীয়। ডুয়ার্স-এর অধিবাসীদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে, চিড় ধরেছে ভ্রাতৃত্ববোধ, মানুষে মানুষে রেষারেষি বেড়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন চা বাগান বন্ধ হয়ে আছে। বন্ধের মুখেও বেশ কিছু। জঙ্গল পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ইদানিং হাতি জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে বেরিয়ে আসছে, ট্রেনে কাটা পড়ে মরছে। জাতীয় পাখি ময়ূর নিয়ে ব্যবসায় মেতেছে বেশ কিছু মানুষ। অরাজকতা চরমে পৌঁছেছে। মুন্ডা, সাঁওতাল, টোটো, নেপালি, রাভা, আদিবাসী, বাঙালী সহ বিভিন্ন মানুষের সমন্বয়ে চিড় ধরেছে। হাতে হাত মিলিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে, সুরে সুর মিলিয়ে চলতে কোথায় যেন একটু সমস্যা হচ্ছে। ডাঃ পার্থপ্রতিম এর কথায় আমরা অতীতটাকে ভুলতে বসেছি।’
সমাজ ব্যবস্থা-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সব জায়গাতে বোধ হয় চিড় ধরেছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ১৪ জানুয়ারি ‘ডুয়ার্স ডে’ শান্তির বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে। পার্টি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলেই ওই দিনে মিলতে বসেছে। সমগ্র ডুয়ার্সজুড়ে ওই দিন পালিত হবে ‘ডুয়ার্স ডে’। সমগ্র ডুয়ার্সবাসীর বাড়িতে ওই দিন প্রদীপ জ্বলবে, মন্দির-মসজিদ-গির্জা সহ বিভিন্ন ধর্মস্থানে ও তীর্থক্ষেত্রে জ্বলবে আলো। সেই আলোর রোশনাই মুছে দেবে আমাদের মনের দ্বেষ-হিংসা-ঘৃণা এমনটাই দাবি বিভিন্ন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের।
সম্প্রতি ‘ডুয়ার্স ডে’ উদযাপন উপলক্ষ্যে বানারহাটে একটি সভায় উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদ, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, ডুয়ার্স মিল্লাতি ইসলামিয়া, প্রোগ্রেসিভ পিপলস পার্টি, কামতাপুরি পিপলস পার্টি, ওদলাবাড়ি উন্নয়ন কমিটি, চামুর্চি সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সি পি এম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন চা বাগানের বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা। প্রত্যেকেই এই শুভক্ষণে উপস্থিত থেকে ‘ডুয়ার্স ডে’ উদযাপনের মাধ্যমে ডুয়ার্সের শান্তির বার্তা বয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
আদিবাসী বিকাশ পরিষদ-এর ঘুরন্ড ওরাওঁ, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার লক্ষী মুখিয়া সহ অন্যদের আশা ডুয়ার্সবাসীরা সানন্দে মিলিত হবে ‘ডুয়ার্স ডে’ তে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলিত হবে গোটা ডুয়ার্সবাসী। বাংলা, হিন্দি, নেপালি সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরাও ইতিমধ্যেই সঙ্গ দিয়েছে। টি ভি চ্যানেলগুলিও এগিয়ে এসেছে। শ্রমিক আন্দোলনের নেতা চিত্ত দে, ডুয়ার্স জার্নালিস্ট ক্লাবের ডাঃ পার্থপ্রতিম, বিনয় দে, স্বপন সরকার, জীবন মিত্র, ভুজেন্দর ওরাওঁ, কুমার ছেত্রী, মুক্তার খান, মণিকুমার ডার্নাল, রাজেন্দ্রকুমার প্রধান, দেবানন্দ রায়, পীযুষকুমার রায়, ঘুরন্ড ওরাত্তঁ, লক্ষ্মী মুখিয়া, কিরণ কালিন্দী, নীলা ছেত্রী, রেমা গাঙ্গুলি, ফিরোজ খান দের প্রচেষ্টায় ‘ডুয়ার্স ডে’ উদযাপনের প্রচার অনেকটা এগিয়ে।
ছাত্র-ছাত্রীদের র্যালি, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, রাখিবন্ধন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হবে ডুয়ার্স ডে। যারা কর্মসূত্রে বা বৈবাহিক সূত্রে ডুয়ার্সের বাইরে আছেন, তারাও ফিরবেন ওই দিন এমনটাই আশা সমগ্র ডুয়ার্সবাসীর। সমস্ত ক্লাব নিজ নিজ উদ্যোগে মাতবে 'ডুয়ার্স ডে' -তে। স্থানীয় উদ্যোগে বিশিষ্ট মানুষদের সংবর্ধনা দেওয়ার প্রচেষ্টাও থাকবে।