ডুয়ার্সে আসার সাধপূরণ হয়নি চিপকো আন্দোলনের প্রাণপুরুষের

ডুয়ার্সে আসার সাধপূরণ হয়নি চিপকো আন্দোলনের প্রাণপুরুষের

ডুয়ার্সে আসার সাধপূরণ হয়নি চিপকো আন্দোলনের প্রাণপুরুষের; ডাঃ পার্থপ্রতিম; ২৩ মে ২০২১; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
নাগরাকাটা, ২২মে: শান্ত, দীপ্ত চেহারা। পরনে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি। গালে তুষারশুভ্র দাড়ি। মাথার সাদা ফেট্টিতে ঢাকা পড়েছে পাকা চুল। চুল দাড়িতে বয়স ছাপ ফেললেও তাঁর সবুজ মনে টোল ফেলতে পারেনি সময়ের বলিরেখা। হিমালয়ের গাড়োয়াল পাহাড়ি অরণ্যে জানা-অজানা গাছগাছালির ফাঁকে যে নামটি আজও সবুজ বনানী আর পাখপাখালির কলতানে মিশে আছে, তিনি সুন্দরলাল বহুগুণা। অরণ্য বাঁচানোর অদম্য বাসনায় যে মানুষটি প্রবাদপ্রতিম হয়ে উঠেছিলেন, চিপকো আন্দোলনের  সঙ্গে যাঁর নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, তাকেই কেড়ে নিল কোভিড-১৯’এর করার থাবা। অরণ্যঘেরা ডুয়ার্সে আসতে চেয়েছিলেন সুন্দরলাল। যদিও তাঁর সেই সাধ আর পূরণ হল না।

তখন নয়ের দশকের শুরু। ডুয়ার্সের পরিবেশ সচেতন যুবক পার্থপ্রতিমের সঙ্গে সুন্দরলালের এক আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পার্থপ্রতিম উচ্চ শিক্ষার জন্য সেসময় কলকাতায় আস্তানা গেড়েছিলেন। পড়াশোনা ও কাজকর্মের ফাঁকে তিনি সেখানে পরিবেশ আন্দোলন ও বিজ্ঞান সচেতনতার কাজে নিজেকে যুক্ত করেন। সেসময় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সুন্দরলাল বহুগুণাকে ‘দেশিকোত্তম’ সম্মাননা জানানো হয়। শান্তিনিকেতনে সেই আশ্রমের পরিবেশে সুন্দরলালের সান্নিধ্যে আসেন পার্থপ্রতিম। পরবর্তীতে কলকাতার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যখন সুন্দরলাল বহুগুণাকে স্টুডেন্ট হেলথ হোমে সংবর্ধনা জানানো হয়, সেই অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেছিলেন পার্থপ্রতিম। কথাপ্রসঙ্গে সে সময় ও তারপরেও ডুয়ার্সে আসতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন সুন্দরলাল।
ডুয়ার্সের আদিবাসী জনজাতিদের গাছ এবং প্রকৃতিকেন্দ্রিক নানা উৎসব রয়েছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম করমপুজো। করম আদৃতে একটি গাছ। যা চিকরাশি নামে পরিচিত। সারনা ধর্মাবলম্বী ওই আদিবাসীরা প্রকৃতির উপাসক। একইভাবে মেচ, রাভা, জনজাতিদের মধ্যে হাতিপুজোর প্রচলন রয়েছে। প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন  রূপে এখানে ‘ঈশ্বর’-এর জায়গা নিয়েছে। এইসব বিভিন্ন কারণে ডুয়ার্সের প্রতি সুন্দরলাল বহুগুণার এক বিশেষ আগ্রহ ছিল পরবর্তীকালে নাগপুরে আয়োজিত ‘ইকোলজি অ্যান্ড স্পিরিচুয়ালিটি ’ শীর্ষক একটি জাতীয় কর্মশালায় উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে পার্থপ্রতিম অংশ নেন। সেখানে মেধা পাটকরের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছিল।

পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, সুন্দরলাল বহুগুণা বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক কচকচানিতে না গিয়ে দেশের সনাতন আধ্যাত্মিক ভাবনার সঙ্গে পরিবেশ আন্দোলনকে যুক্ত করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। গঙ্গাদূষণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও তিনি গঙ্গার ধর্মীয় পবিত্রতার কথা বারবার বলেছেন। বনজঙ্গলে ঘেরা ডুয়ার্সে আসার জন্য একাধিকবার তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যু পরিবেশ আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি।’
ভারতবর্ষের বৃক্ষচ্ছেদন রোধ ও অরণ্য বাঁচানোর যে আইন , তাতে চিপকো আন্দোলনের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে কোভিডে বহু সহস্র প্রাণ অক্সিজেনের জন্য হাঁসফাঁস করছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে চলছে ব্যাপক কালোবাজারি। সেসময় সুন্দরলালের প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি করে উঠে আসছে বলে মত তাঁর অনুগামী পার্থপ্রতিমের।

 

Join our mailing list Never miss an update