ছবিতে বাড়ি সাজিয়ে নীতিশিক্ষা ডাক্তারের; রাজকুমার মোদক; ৮ ডিসেম্বর ২০১৭; আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত
বানারহাট: কোথাও বাঘ রাখালের ছবি। কোথাও কুয়োয় সিংহ নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছে, সেই ছবি। কোথাও আবার খরগোশ-কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতার ছবি বা কলসির উপর নুড়ি মুখে কাকের ছবি। এক সময় মুখে মুখে ফিরলেও এখন বাবা-মায়ের মুখে এ সব গল্প আর তেমন শোনে না ছোটরা। বিভিন্ন নীতিবাক্য বা নীতিশিক্ষা এখনকার শিশুদের বই থেকেও উধাও।
পুরনো দিনের নীতিশিক্ষার এই গল্পগুলি এখনকার কচিকাঁচাদের কাছে তুলে ধরতে এক অভিনব প্রয়াস শুরু করেছেন ডুয়ার্সের বানারহাটের এক চিকিৎসক। গল্পকথার সেই সব পশু-পাখির ছবি এঁকে তিনি সাজিয়ে তুলেছেন নিজের বাড়ির পাঁচিল ও দরজা জানালা। ফলও মিলেছে। এমন অসংখ্য ছবি দেখে তার গল্প জানার জন্যে শিশুদের মনে প্রবল উৎসাহও তৈরি হয়েছে।
বানারহাটের আদর্শপল্লীর বাসিন্দা, প্রতিষ্ঠিত হোমিও চিকিৎসক পার্থপ্রতিম। বাড়ির নাম ‘মধুবন’। বাড়ির সীমানা প্রাচীর, ঘরের দরজা জানলায় নীতিশিক্ষার কিছু ছবি একে তা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এলাকার শিশুদের জন্য। স্কুলে যাওয়া আসার পথে শিশুদের দ্রষ্টব্য এখন পার্থপ্রতিমবাবুর বাড়ি। প্রাচীর বা দেওয়ালের গায়ে আঁকা ছবির কাহিনী এখন আর শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে নেই, এমনকি তা নিয়ে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও আর আলোচনা করেন না। প্রাচীরের গায়ে বিভিন্ন ছবি দেখে শিশুদের মনে প্রশ্ন জাগে, কিসের ছবি?
পার্থপ্রতিমবাবু রোজ সকালে চলে যান নিজের চেম্বারে। পার্থপ্রতিমবাবুর স্ত্রী শিক্ষিকা, তিনি চলে যান স্কুলে। তবে বাড়ির চত্বরে সবুজ লনে শিশুদের ঢুকবার জন্য লোহার গেট খোলা থাকে সবসময়। ফলে ছবির গল্প খুঁজতে ছোট্ট পড়ুয়ারা তাঁদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ডেকে নিয়ে আসে চিকিৎসক পার্থপ্রতিম বাবুর বাড়িতে।
এছাড়াও সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা পার্থপ্রতিমবাবুর বাড়িতে রকমারি ফুলের গাছ, হাঁস, হরিণ ও পাখির মডেল দেখতেও শিশুদের ভিড় জমে।
পার্থপ্রতিমবাবুর বাড়ির কাছেই এক বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা অনিমিতা চৌধুরী বলেন, ‘‘অভাবনীয় একটা পরিকল্পনা। আমি স্কুলে যেতে এসে একদিন নিজে দেখেই অবাক হয়ে যাই । চিকিৎসক পার্থপ্রতিমবাবুর নীতিশিক্ষার এই প্রয়াস খুবই ধন্যবাদযোগ্য কাজ। কার্টুনের যুগে এই সব ছবি এখন হারিয়ে গিয়েছে। আমার স্কুলের পড়ুয়ারা তো আমাদের শিক্ষিকাদের পার্থপ্রতিমবাবুর বাড়িতে নিয়ে ছবি দেখিয়ে সেই গল্প শুনতে চাইছে।”
চিকিৎসক পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, ‘‘আমি চাই, আমরা ছোট বেলায় যে নীতিশিক্ষার কথা বড়দের কাছে শুনতাম বা পড়তাম তা এখনকার শিশুরাও জানুক শিখুক। আজকালকার পাঠ্য পুস্তকেও সে সব গল্প খুবই কম। পশু-পাখির কিছু ছবি পাঁচিল ও ঘরের দরজায় এঁকে হারিয়ে যাওয়া নীতিশিক্ষার গল্পকথা এখনকার শিশুদের মনে করিয়ে দিতে চাই।”
স্কুলের ছোট্ট ছোট্ট পড়ুয়া দৃষ্টি, তিমির, প্রান্তিকা, যুক্তারা বলে, ‘‘আমরা এই ছবিগুলি আগে কখনও দেখিনি। গল্পগুলিও জানতাম না। এখন অবশ্য শুনেছি।