তুমি যদি পোকা হতে ; ডাঃ পার্থপ্রতিম; বর্তমান; ১৮ই জানুয়ারী ১৯৯২;
না না রাগ করো না, আরে বাবা দু’চোখ বন্ধ করে একবার ভেবেই দেখনা; যদি তুমি মানুষ না হয়ে পোকা হতে তবে কেমন হতো?
দাঁতালোপোকা স্ট্যাগহর্ন বিটলের কথাই ধরা যাক। সে তার নিজের ওজনের নব্বইগুন ভারি জিনিস, তার দেহের দৈর্ঘের ত্রিশগুণ পথ অনায়াসে নিয়ে যেতে পারে। এই হিসাবে তোমাদের ওজন যদি ৪০ কেজি ও উচ্চতা ৫ ফুট হয় তবে, ৩৬০০ কেজি ওজনের বস্তু ৫০ গজ দূরে নিয়ে যেতে মোটেই পরিশ্রান্ত হতে না। ফ্লি-মাছি যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন- পুলেক্স ইরিট্যান্স। এদের পা খুব বেশী হলে কয়েক মিলিমিটার হবে। কিন্তু এরা এক লাফে ৩২ সেমি পথ যেতে পারে। লাফিয়ে উঠতে পারে ২০ সেমি উঁচুতে। তোমরা যারা উচ্চতায় পাঁচ ফুট, তারা ফ্লি-মাছি হলে লং জাম্প দিতে প্রায় পাঁচশো মিটার, দু’লাফে হাওড়ার ব্রিজ পার। আর হাইজাম্পে সাড়ে চারশো ফুট, এক লাফেই ৪৪ তলা বাড়ির ছাদে। কেমন ব্যাপার বলো তো!
দেখার বিষয়ে- আমাদের দুচোখের মতো জলফড়িং বা ড্রাগনফ্রাই-এর আছে প্রায় ১০ হাজারটি চোখ। তাই সে সামনে-পেছনে উপর ও নিচের সব জিনিসকে একই সাথে দেখতে পায়। মানুষের মতো মাথা ঘোরাবার দরকার নেই। ডিয়ারবটফ্লাই যার বৈজ্ঞানিক নাম সিমেনমিয়া পিয়াট্টি। এ ৬০ কিমি প্রতিঘন্টা বেগে উড়তে উড়তে হঠাৎই শূন্যে স্থির হতে পারে। পারে ঝপ করে নিচে নামতে, উপরে উঠতে, যে কোন পাশে সরে যেতে। আধুনিক যুদ্ধবিমানে চড়েও মানুষের পক্ষে এতটা কলাকৌশল দেখানো সম্ভব নয়।
আমরা পতঙ্গ হলে কত না মজা হত। প্রচন্ড শীত ও গরমে কুচ পরোয়া নেই। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ইথিওপিয়ার ডাল্যল-এ একেবারেই বৃষ্টি হয়নি। তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৩৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। সে কারণে পৃথিবীর উষ্ণতম স্থান হিসাবে ডাল্যল গ্রিনেস বুক অব রেকর্ডসে জায়গা পেয়েছে। এই উষ্ণতা মানুষের বসবাসের অযোগ্য হলেও, ডেসার্ট এক্রিডিয়ান, ইচনিউমনফ্লাই, বুপ্রিসটিড বিটল প্রভৃতি পোকারা কিন্তু সে সময়েও বেশ তরতাজা ছিল। আবার ক্যাডডিসফ্লাই, স্টোন ফ্লাই সাইবেরিয়ার-৯ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড ঠান্ডাতেও সতেজ থাকে। পোকা হলে অসুখ-বিসুখে ঝামেলা ঝঞ্ঝাট নেই বললেই চলে। এছাড়াও বিভিন্ন বিষ সহজেই সহ্য করা যায়। যেমন ধরো- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডি.ডি.টি দিয়ে কত মশা মারা হয়েছিল। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়। এখন মশারা ডি.ডি.টি বিষ ক্রিয়া সহজেই সহ্য করতে পারে।
সামুদ্রিক ঝড় মানুষের তৈরি জাহাজকে বিধস্ত করতে পারে। কিন্তু ঝড় আসার বহু আগেই সামুদ্রিক পোকা প্রিডোসিয়াস ডাইভিং বিটল পূর্বাভাস পায়। সে চলে যায় জলের অনেক নীচে, টাইফুন টর্নেডো, হারিকেন এদের কোন ক্ষতি করতে পারে না।অন্য যে কোন প্রাণীর চেয়ে পতঙ্গের ঘ্রানশক্তি অনেক বেশি। ইউডিয়া প্যাভেনিয়া বৈজ্ঞানিক নামের মথটি প্রায় ১১ কিলোমিটার দূর থেকে গন্ধ শুঁকে তার বান্ধবীর অস্তিত্ব টের পায়।
তোমরা যারা খুব হৈ হট্টগোল করো, পোকারা কিন্তু তাদেরকেও হারিয়ে দেবে। আমেরিকার সিকেড্যাডাক্ পরিবারের ঝিঁ ঝিঁ পোকারা দলবেঁধে এমন জোরে শব্দ করে যা প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে শোনা যায়। কি? এখন কী মনে হচ্ছে না, যে মানুষ না হয়ে পোকা হলেই ভাল হতো।