ডুয়ার্স ডে পালন করতে ঘরে ফিরছেন বহু মানুষ

ডুয়ার্স ডে পালন করতে ঘরে ফিরছেন বহু মানুষ

ডুয়ার্স ডে পালন করতে ঘরে ফিরছেন বহু মানুষ; মোস্তাক মোরশেদ হোসেন; ১৩ জানুয়ারি ২০১২ নয়; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
বানারহাট সংলগ্ন পলাশবাড়ি চা বাগানের বাসিন্দা ডাঃ শ্রীপর্ণা দত্তের কোচবিহারে বিয়ে হয় ২৩ বছর আগে। ১৪ জানুয়ারি বানারহাটে আসছেন তিনি একটা বিশেষ দিন উদ্যাপনের উদ্দেশ্যে। ময়নাগুড়ির  সোমনাথ নার্জিনারি বেলুড়ে কর্মরত। ১৪ জানুয়ারি তিনিও ফিরবেন ময়নাগুড়িতে। আটপুকুরির বাসিন্দা ফালাকাটা সংলগ্ন সিন্টু বাড়ুই চাকরি করেন মহারাষ্ট্রের একটি সংস্থায়। তিনিও বাড়ি ফিরছেন ১৪ জানুয়ারি।
    ডাঃ শ্রীপর্ণা দত্ত, সোমনাথবাবু, সিন্টুবাবুর মতো অনেক ডুয়ার্সবাসীই বাড়ি ফিরছেন ১৪ জানুয়ারি। সকলের উদ্দেশ্য একই। ডুয়ার্সের ঐতিহ্য, সম্প্রীতি, সংহতি সংস্কৃতি রক্ষায় একটা দিন উদযাপন করা। ‘ডুয়ার্স ডে’ পালন করা।
    ডুয়ার্স ডে উদ্যাপনের  এবার দ্বিতীয় বছর। উদযাপন কমিটির কার্যকরী সভাপতি সুকল্যাণ ভট্টাচার্য বলেন, কয়েক বছর থেকে ডুয়ার্সের বিভিন্ন ভাষাভাষী ও সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের হৃদয়ে যে বিভেদ ও বিদ্বেষের বীজ রোপিত হয়েছে তা উৎপাটিত করে সম্প্রীতি, শান্তি, সৌহার্দ্যরে বার্তা ছড়িয়ে দিতেই পালন করা হচ্ছে ‘ডুয়ার্স ডে’।
    উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম পালক ডুয়ার্স। পাহাড়, বন জঙ্গল, নদীতে সমৃদ্ধ ডুয়ার্স সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বৈচিত্র্যেও অনুপম। এখানে রবীন্দ্রসংগীতের সুর, নজরুলগীতির ঝংকার, দোতারার ডোলডোং ধ্বনি, মাদলের ধিতাং ধিতাং বোল, সবই সমাদৃত। কমিটির সদস্যা ল্যারি বোস বলেন, ডুয়ার্স বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য রক্ষায় যেন ‘মিনি ইন্ডিয়া’। কিন্তু কয়েকবছর ধরে বিভেদ আর বিচ্ছিন্নতাবাদের ক্যানসার যেন কুরে কুরে খাচ্ছে ডুয়ার্সকে। কার্যকরী সভাপতি সুকল্যাণবাবু বলেন, বিভেদ নয় ঐক্য চাই। এই বাণীকে ছড়িয়ে দিতেই ডুয়ার্স দিবস পালন করা হচ্ছে।

    কিন্তু, এত দিন থাকতে ১৪ জানুয়ারি কেন? সুকল্যাণবাবু বলেন, ১৪ জানুয়ারি দিনটি ডুয়ার্সের ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। কারণ ১৮৬৪ সালের ১৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ সার্জেন্ট রেনি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারকে এক চিঠিতে জানিয়েছিলেন, ডুয়ার্সের ভৌগোলিক গুরুত্ব ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনার কথা। তাই ওই দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে শান্তির হাওয়া বয়ে যাওয়া ডুয়ার্সে ধূমায়িত হচ্ছে অশান্তি। নানা সম্প্রদায় ডুয়ার্সকে টুকরো টুকরো করতে চাইছে। প্রত্যেকেই নিজেদের দাবি করছে ডুয়ার্সের ভূমিপুত্র বলে। কিন্তু ঘটনা হল বাঙালি, আদিবাসী, নেপালি কেউই ডুয়ার্সের ভূমিপুত্র নয়। ভাগ্যান্বেষণে জঙ্গলাকীর্ণ ডুয়ার্সে যুগ যুগ ধরে নানা সম্প্রদায় বসতি গড়েছে। গড়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময় এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরম্পরা। সংকীর্ণ স্বার্থে কিছু মানুষ সহজসরল জনগণকে একে অপরের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছে।
    কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ডুয়ার্সের বহু নাগরিক কর্মসূত্রে বা বিবাহসূত্রে ডুয়ার্সের বাইরে থাকেন। ডুয়ার্স ডে পালন কমিটি এমন বহু নরনারীকে ১৪ জানুয়ারি ডুয়ার্সে এসে কাটানোর আহ্বান জানিয়েছে। সাড়াও মিলেছে প্রচুর। ডুয়ার্সের সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে সেদিন বাড়ি বাড়ি সহ নানা ধর্মীয় স্থানেও জ্বালানো হবে প্রদীপ। ব্যবস্থা করা হয়েছে রক্তদান ও নিঃশুল্ক চোখ পরীক্ষা শিবিরের। আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা ল্যারি বোস বলেন, যারা ডুয়ার্সকে টুকরো করার খেলায় মেতেছে তাদের নীরব প্রতিবাদের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিতে চাই ডুয়ার্স সবার। বানারহাটের বাসিন্দা সুকল্যাণবাবু বলেন, কালনেমির লংকাভাগের অঙ্কের মধ্যে আমরা নেই। শান্তি, সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ডুয়ার্সের আমজনতার কল্যাণই আমাদের লক্ষ্য।
    এ যেন এক অভুতপূর্ব নীরব উন্মাদনা। সম্প্রীতি সৌহার্দ্যরে এক আবেগমথিত বার্তা ছড়িয়েছে গোটা ডুয়ার্সে। ২৩ বছর আগে ডুয়ার্স ছাড়লেও নাড়ির টানে আজও নিজেকে ‘ডুয়ার্সের মেয়ে’ ভাবেন কোচবিহারের ডাঃ শ্রীপর্ণা দত্ত। তিনি বলেন, মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো সংকল্প করলে তা কোনোদিনও ব্যর্থ হয় না। তাই আমার বিশ্বাস, হয়তো দেরি হবে, কিন্তু আমরা করব জয় নিশ্চয়।

 

Join our mailing list Never miss an update