অম্বল বা অ্যাসিডিটি

অম্বল বা অ্যাসিডিটি

অম্বল বা অ্যাসিডিটি; ডাঃ পার্থপ্রতিম; ১লা জুলাই ২০১০ ৭ম বর্ষ সংখ্যা ৭; জার্নাল অফ ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ হোমিওপ্যাথি
অম্ল রোগের কলকাঠি আমাদের শরীরের মধ্যেই থাকে। আমরা যে খাবার খাই তা পরিপাক হয় পৌষ্টিকতন্ত্রের মাধ্যমে। আমাদের এই পৌষ্টিক নালীটি মুখবিবর থেকে শুরু করে মলদ্বার তথা পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি লম্বায় প্রায় আট মিটার। খাবার চিবিয়ে খাওয়ার পর তা গ্রাসনালী দিয়ে পাকস্থলি বা স্টমাকে পৌঁছায়। পাকস্থলি দু-মুখওয়ালা মাংসল থলির মতো। লম্বায় ১ ফুট, চওড়ায় চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি। অ্যালকোহল, প্যারাসিটামল ও আরও কিছু বস্তু খুব তাড়াতাড়ি পাকস্থলির থেকে রক্তে মিশে যায়। এসব ছাড়া সাধারণ খাদ্যদ্রব্য পাকস্থলীর ভিতরে চার ঘন্টার মতো থাকে। পাকস্থলীর ভিতরের দেয়ালে তিন কোটি পাকগ্রন্থি থাকে যেখান থেকে পৌষ্টিক রস বা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয়। এই অ্যাসিড খাদ্য পরিপাকের কাজে সহায়তা করলেও এটাই গ্যাস-অম্বলের অন্যতম উৎস। পেটবুক জ্বালা করা, গলা বেয়ে টক জল ওঠা, বারবার ঢেঁকুর ওঠা, পেটভার, আরও বিভিন্ন রকমের উপসর্গ দেখা যায়। সবার বেলায় যে একইরকম অসুবিধা দেখা দেবে তেমন নয়। অম্লরোগের উপসর্গ এক একজনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। হোমিওপ্যাথিক মতে, অম্ল রোগের বহু কার্যকর ওষুধ রয়েছে। হোমিও ওষুধ মূলত রোগ লক্ষণের উপর ভিত্তি করে প্রয়োগ করা হয়। কী কারণে রোগটি হয়েছে সেটা সবসময় বিচার্য বিষয় নয়।

এবার কয়েকটি হোমিও ওষুধ নিয়ে আলোচনা করা যাক। অম্লরোগের একটি মহা ওষুধ হল ক্যালকোরিয়া কার্ব। মুখে টক টক স্বাদ, খাওয়ার পর অস্বস্তি বাড়ে, বমি বমিভাব, মাঝে মাঝে বমি হয়, জিভে সাদা তথা হলদে ময়লা জমে, তেষ্টা তেমন থাকে না। এইসব উপসর্গে ক্যালকেরিয়া কার্ব ২০০ শক্তি কয়েক ডোজ খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
    টক বা পচা গন্ধযুক্ত ঢেঁকুর ওঠে, পায়খানা পাতলা হয়-তা থেকে শরীর দূর্বল, ঘুম ঘুম ভাব, পেটে বায়ু জমে, পেট গড়গড় করে, বমিভাব এইসব লক্ষণে কার্ব ভেজ ২০০ শক্তি রাতে ও দুপুরে খাওয়ার আধঘন্টা পরে খেলে ভালো ফল পাবেন।
    পেট- বুক জ্বালা, টক বমি, মুখ থেকে শুরু করে গুহ্যদ্বার পর্যন্ত জ্বালা, বিশেষত অম্লরোগে জ্বালা, বিশেষ অম্লরোগে অতিরিক্ত জ্বালা থাকলে আইরিস ভার্স ৩ এক্স বা ৩০ শক্তি খুব সুন্দর কাজ করে। পেটে বায়ু জমে ও বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গ্যাস অম্বল বাড়ে, অল্প কিছু খেলেই পেট ফুলে ওঠে, যকৃৎ বা লিভারের গোলযোগ, রাতে বারবার প্রস্রাব এই উপসর্গে লাইকোপোডিয়াম ২০০ খুব কার্যকরী।
    বুক জ্বালা, অম্লবমি, টক ঢেঁকুর, শরীরে বা ঘামে টকটক গন্ধ, পাতলা পায়খানা, মলে দুর্গন্ধ এই লক্ষণে সালফিউরিক অ্যাসিড ৩০ ম্যাজিকের মতো কাজ করে।

    পেটে ব্যথা, অম্ল ঢেঁকুর, টকটক বমি, ঢেঁকুর উঠলে রোগী বেশ আরাম পায় এসব উপসর্গে নেট্রাম ফস ১২ এক্স ওষুধটি খুব ভালো কাজ করে। নেট্রাম ফস মূলত বায়োকেমিক ওষুধ। ট্যাবলেট আকারে বাজারে পাওয়া যায়। বড়োরা চারটি ও ছোটরা দুটি করে ট্যাবলেট এককাপ হালকা গরম জলের সঙ্গে ছয় বা চার ঘন্টা পরপর খেলে ভালো ফল পারেন।
    যে খাবার আপনি খেয়েছেন মনে হচ্ছে ঢেঁকুরে সেটাই বেরিয়ে আসছে। খিদে বেশি, রোগীর রাতে ঘাম হয়, উদরে বায়ু জমে, পেট ভুটভাট করে এই উপসর্গে ফসফরাস ২০০ দু-তিন ডোজ খেতে পারেন।
    রোগ পুরানো হলে ফসফরাসে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে ফসফরাস ওষুধটি ঘন ঘন খাওয়া উচিত নয়। দু-তিন ডোজ খাওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করা ভালো।
    যাঁরা প্রায়ই মদ্যপান করেন, খাওয়া দাওয়ার কোনো নিয়ম কানুনের ধার ধারেন না, মাঝেমধ্যেই হোটেল-রেস্তেরাঁয় খানাপিনা করেন, নৈতিক চরিত্র ঢিলেঢালা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি নীতিহীন প্রবল আকর্ষণ-এই সব ব্যক্তিদের অম্লরোগের নাক্স ভমিকা ২০০ খুব ভালো কাজ করে।
    বমি, তেতোঢেঁকুর ওঠে, পেটজ্বালা, পায়খানা পরিস্কার না হওয়া এইসব লক্ষণে রোবিনিয়া মাদার টিনচার খেলে বেশ উপকার পাবেন। ১৫ থেকে ২০ ফোঁটা ওষুধ আধ কাপ হাল্কা গরম জলে রাতে শোয়ার আগে খেলে সকালে পেট পরিষ্কার হবে। সারাদিন গ্যাস-অম্বলের উৎপাত কম থাকবে।        

Join our mailing list Never miss an update