প্লেগ প্রতিষেধকে হোমিওপ্যাথি; -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ৩য় বর্ষ ৬৫ সংখ্যা, ৩ অক্টোম্বর, সোমবার ১৯৯৪; দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত
এক সময় আমাদের ধারণা ছিল প্লেগ রোগটি বুঝি চিরকালের মত বিদায় নিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সুরাটে ব্যাপক প্লেগের সংক্রমণ ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। হ্যাঁ, এই স্বীকারোক্তিটি ভারতের খোদ রাষ্ট্রপতি ডঃ শঙ্কর দয়াল শর্মার।
না, শুধু পশ্চিম ভারতেই নয়, আমাদের পশ্চিমবঙ্গ এখন প্লেগের স্বীকার হতে চলেছে। সুরাট থেকে ফিরে আসা একদল দিন-মজুর, এই ঘাতকটিকে আমদানি করেছে এই রাজ্যে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে প্লেগের পরিচিত প্রতিষেধক টেট্রাসাইক্লিনের ব্যাপক চাহিদা ও চোরাকারবার। এই ওষুধটির ঘাটতি দেখা দেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় অবস্থিত কমিউনিকেবল ডিজিজ সেন্টারের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
না, শুধু অ্যালোপ্যাথিক পদ্ধতিতেই নয়; হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে প্লেগের প্রতিষেধক ও চিকিৎসার ওষুধ রয়েছে। অতীতেও এগুলি সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। কিউবা দেশে এক জাতীয় জীবন্ত মাকড়সার শরীরের নির্যাস থেকে তৈরি ওষুধ ট্যারেনটুলা কিউবেনসিস (Tarentula Cubensis) প্লেগের একটি ভাল প্রতিষেধক। ট্যারেনটুলা কিউবেনসিস-৩০ প্রতিদিন অথবা দু-তিনদিন অন্তর একবার খেলে এ রোগের সাংঘাতিক আক্রমণ থেকে অনেকটা অব্যাহতি পাওয়া যায়। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকা ও থেরাপিউটিক্সের প্রথম অধ্যাপক ডাঃ উইলিয়াম বোরিক প্লেগের ব্যাপক আক্রমণের সময় প্রতিষেধক ও আরোগ্য লাভে এই ওষুধটির উচ্চ প্রশংসা করেন।
লিমফ্যাটিক গ্ল্যান্ড ফোলা, শক্ত হওয়া, জ্বর, ভুল বকা, বিকার ভাব প্লেগের এই সমস্ত লক্ষণে ওপারকিউলিনা টারপিথাম (Operculina Turpethum) একটি উপযোগী ওষুধ। এছাড়াও আয়োডাম ১x (Iodum 1x) ও দ্বিতীয় শক্তি প্লেগের উৎকৃষ্ট ওষুধ। এছাড়া লক্ষণভেদে আর্সেনিকাম এলবাম (Arsenicum Album), আমেরিকার একধরনের সাপের বিষ থেকে তৈরি ক্রোটেলাস হরিডাস (Crotalus Horridus) ও ল্যাকেসিস (Lachesis), গোখরো সাপের বিষ থেকে তৈরি ন্যাজা ট্রিপুডিয়ান্স (Naja Tripudians), পাইরোজিনিয়াম (Pyrogenium) প্রভৃতি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে সৃষ্ট প্লেগ রোগের প্রতিষেধক ওষুধ এই সঙ্কট মোকাবিলায় নিঃসন্দেহে আশার আলো।