বসন্তে ঢাক বদল; -ডাঃ পার্থপ্রতিম;মঙ্গলবার ৪ ফাল্গুন ১৪১০; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
মরা ডাল আবার কিশলয়ে ভরেছে। তীব্র হিমেল শীতের শেষে এভাবেই তুষার গলানো বসন্ত আসে। ফাগুন লাগে বনে বনে। শুধু বনে নয়, মনেও। কবিগুরু বহু যুগ আগেই শান্তিনিকেতনে শুরু করেছিলেন বসন্ত উৎসব, হলকর্ষণ...। প্রকৃতির সঙ্গে মানব মননের মেলবন্ধনের চেষ্টায়।
হ্যাঁ, সে ভূগোল আজ বদলে গেছে। স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট সংস্কৃতি মাটি থেকে উপরে এনেছে মানব শিশুকে। হোমটাস্কের চাপে শিউলিতলায় ভোরবেলায় পল্লীবালার কুসুম কুড়ানোর ফুরসত নেই। ঋতু পরিবর্তন শুধু পঞ্জিকাতেই সীমাবদ্ধ।
কবি-সাহিত্যিকরা চিরকালই বেয়াড়া। তাঁরা যান্ত্রিকতার এতো বাড়বাড়ন্ত মানতে নারাজ। ১৯২২ সালে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে তৈরি হয়েছিল নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাঙালিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতু সূদৃঢ় করার লক্ষ্যে। সেই নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের জলপাইগুড়ি শাখা আয়োজন করেছে ঋতু বন্দনার। ডুয়ার্স এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট রিভেলী (ডিয়ার)-এর ব্যবস্থাপনায় আগামী ১৮ ফাল্গুন, ১৪১০ (২মার্চ) বানারহাট মধুবন বিতানে বসছে বসন্তবাসর।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছেন কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, প্রাবন্ধিক, পত্রিকা সম্পাদক ও সাহিত্যপ্রেমী মানুষ। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলবে দেদার আড্ডা, হাসি, মজা স্মৃতিচারণ, নাচ-গান।
অভিযোগ আছে এসব সাহিত্যবাসরে বেশিরভাগ কবি আসেন স্বরচিত কবিতাটি পড়ে, লাঞ্চ খেয়ে বাড়ি পালানোর তালে। এ অপবাদ কাটাতে উদ্যোক্তারা চালু করেছেন ‘ঢাক বদল’ নামের মজার খেলা। সকলকে যে কাব্য-সাহিত্য পাঠ করতে হবে এমন কোনো মাথার দিব্যি নেই। আর যদি করতেই হয় তবে তা স্বরচিত হবে না। অবশ্যই হবে উত্তরের সৃষ্টি। অমিত কুমারের ছড়া শোনাবেন স্বর্ণকমল, রমাপ্রসাদের সাহিত্য পড়বেন বিজয়ভূষণ। উদ্যোক্তাদের আশা এই ফাল্গুনী হাওয়ায় সাহিত্যের রসে সম্পৃক্ত হবে মধুবনের আকাশ-বাতাস।