ভাগ্য ফেরাতে পরশ পাথর(ক্যাট্স আই)

ভাগ্য ফেরাতে পরশ পাথর(ক্যাট্স আই)

ভাগ্য ফেরাতে পরশ পাথর(ক্যাট্স আই)-ডাঃ পার্থপ্রতিম; ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ (সোমবার); দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত
দিন-প্রতিদিনের জীবনধারায় আমরা জড়িয়ে আছি নানা সমস্যায়। কিছু সমস্যার সমাধানের পথ আমাদের জানা; আবার কিছুক্ষেত্রে তা অজানা। আমাদের সাধ্য ও সাধ্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। এর পাশাপাশি চলছে ভন্ড ব্যবসায়ীদের সরব প্রচার মাধ্যম। এই সব কিছু মিলিয়ে আমাদের যুক্তিহীন মন ছুটে যায় সেই রত্নের খোঁজে, যার পরশে হবে ধনলাভ, শত্রুনাশ, চাকরি বা ব্যবসায় উন্নতি, গুণবতী ভার্যা-লাভ, যৌন ক্ষমতার পুনরুদ্ধার আরও কত কী! কী আছে এই সব রত্নের মধ্যে? এর প্রভাব শারীরিক বা মানসিকভাবে কি হতে পারে? তার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
    জ্যোতিষীদের মতে, কেতু পুরুষ ও চন্ডাল গ্রহ; সুস্থ মস্তিষ্ক ও মানব-মনে আধ্যাত্মিক চেতনা দান করে। অশুভ কেতুর প্রভাবে যাবতীয় জন্তুর দংশন, বিস্ফোটক, ডিপথেরিয়া, প্লেগ ও বিভিন্ন সংক্রামক রোগ দেখা দেয়। কেতুর প্রভাবকে সুপথে পরিচালিত করার রত্ন হলো বৈদুর্যমণি বা ক্যাটস আই।
    বৈদুর্যমণি আসলে বেরিলিয়াম অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড। এই যৌগের আণবিক অবস্থানের মধ্যে কোন কোন সাধারণত অর্ধস্বচ্ছ(ট্রান্সলুসেন্ট) ও কোবাল্টের অণু থাকে। ফলে এর রঙ কখনো হয় ধূসর বাদামী, কখনো গাঢ় নীল, আবার কখনো বা গাঢ় মেরুন। জিওলজিতে একে ক্রিসোবোরল গোষ্ঠীভুক্ত করা হযেছে। ক্যাটস্ আই সাধারণত অর্ধস্বচ্ছ (ট্রান্সলুসেন্ট) ও উজ্জ্বল, তাই অনেক সময় এর থেকে ময়ূর কন্ঠের মতো নানা রঙ প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। এই রত্নের মাঝখানে বিড়ালের চোখের মতো একটি চকচকে দাগ থাকে। জ্যোতিষীরা একে বলেন ‘‘সুদ’’। আসলে মাটির নিচে থাকা অবস্থায় চাপের ফলে মাঝের এই অংশটিতে কেলাস বা কৃষ্টাল তৈরি হয়। সম আয়তন জলের তুলনায় বৈদুর্যমণি চার থেকে চার দশমিক পাঁচ গুণ ভারী। মো-স্কেলে এর কঠিনাঙ্ক আট দশমিক পাঁচ।
  

শ্রীলঙ্কা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাঙ্গোলা, জাম্বিয়া ও বাতসোয়ানা-তে বৈদুর্যমণি পাওয়া যায়। এই রত্নকে মোটামুটি গোলাকার বা ডিম্বাকারভাবে কাটা হয়। রত্নের বাজারে এর দাম নির্ভর করে ভালো পালিশের ওপর। আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের কারণ আজ প্রায় সকলেরই জানা। যেমন, কর্নি ব্যাকটেরিয়াম ডিফথেরি নামক জীবাণু বিড়ালের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে ডিপথেরিয়া রোগ সৃষ্টি করে। অণুজীববিদ বা মাইক্রো বায়োলজিস্টরা গবেষণা করে দেখেছেন, মার্জার চক্ষুমণি বা বেরি-লিয়াম অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের এইসব জীবাণু বা ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করার কোন ক্ষমতাই নেই। তা হলে বোঝা যাচ্ছে, বৈদুর্যমণি ধারণ করে স্বাস্থ্যরক্ষা বা ভাগ্য পরিবর্তন নিতান্তই ভাঁওতা।

Join our mailing list Never miss an update