গরমে বিপত্তি; ডাঃ পার্থপ্রতিম; ৬ মে ২০০৬, শনিবাসর; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
এই গরমে রোদে ঘুরলে যে যে রোগ হতে পারে: (১) হিট স্ট্রোক, (২) এক্সহসশন, (৩) ভেসোভেগাল অ্যাটাক।
হিট স্ট্রোক : অতিরিক্ত গরমে এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে শরীর থেকে জল ঘাম আকারে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়। জল ঠিকমতো না খাওয়ার জন্য শরীরে জলের পরিমাণও কমে যায়। ফলে শরীরে হিট বাড়তে থাকে আর তাতেই হিট স্ট্রোক হয়। হিট স্ট্রোক মানে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া।
এক্সহসশন : গরমে ঘামের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় নুনও শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। এতে ডিহাইড্রেশন হয়। এটাও গরমে কম জল খাওয়ার জন্য হয়ে থাকে।
ভেসোভেগাল অ্যাটাক : হঠাৎ করে হাত পা ঝিমঝিম করে, চোখে মুখে অন্ধকার দেখা আর বুকে সামান্য ব্যাথা হওয়া হল ভেসোভেগাল অ্যাটাকের লক্ষণ। ভেসোভেগাল অ্যাটাকে ব্লাড প্রেসার ফল করে। এছাড়াও এই সময় অনেকের শরীর থেকে ঘাম বের হতে চায় না। সাধারণত ঘাম আমাদের শরীরের বাইরে বেরিয়ে এসে বাতাসে শুকিয়ে যায়। এর ফলে শরীর ঠান্ডা হয় এবং শরীরের ভিতরে যে তাপ উৎপন্ন হয় সেই তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে সাহায্য করে। যাঁদের শরীর থেকে ঘাম বের হয় না তাঁদের এই গরমের সময় ভেতরকার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ফলে দেহ অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। এত স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়।
কাদের বেশি হয় : যাঁরা অতিরিক্ত মোটা। যাঁরা একনাগাড়ে রোদে দাঁড়িয়ে থাকেন বা রোদের মধ্যে ঘোরাঘুরি করেন, তাঁদের হয়। যাঁরা কম জল খান। অতিরিক্ত বালমশলাযুক্ত খাবার বা জাঙ্কফুড খেলে হয়। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে। যাঁরা অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল করেন, তাঁদের হতে পারে। যাঁরা হার্টের রোগী, নুন কম খান তাঁদেরও হতে পারে।
বিপত্তি হলে প্রাথমিক চিকিৎসা : গায়ের জামাকাপড় সঙ্গে সঙ্গে খুলে দিতে হবে। গায়ে জলের ঝাপটা দিন। অথবা রুমাল ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে ছপছপে করে সারা গা মোছান। রোগীকে রোদ থেকে ছায়ার মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। নুন জল খাওয়াতে হবে। যদি এতেও রোগী সুস্থ না হয় তবে তাকে তৎক্ষণাৎ কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
গরমে আরও কিছু বিপত্তি : গরমকালে সহজেই পেটের প্রবলেম দেখা যায়। অতিরিক্ত রোদে ঘোরাঘুরি করলে এবং যেখান সেখান থেকে অশুদ্ধ জল পান করলে অথবা রাস্তায় বিক্রি হওয়া রঙিন জল খেলে পেটের গোলমাল দেখা যায়। গরমকালে কম জল খেলে অতিরিক্ত পরিমাণে রোদে ঘুরে ঘুরে শরীর কষে গিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এছাড়াও এই সময় শুদ্ধ জল না খাওয়ার জন্য শরীর সহজেই ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন বা ভাইরাস ইনফেকশন দ্বারা আক্রান্ত হয়। অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খেয়ে রোদে ঘোরাঘুরি করলে ডিহাইড্রেশন হয় হজমের গোলমাল দেখা যায়। পেট খারাপ হয়।
জ্বর ও সর্দিকাশি : অতিরিক্ত রোদে ঘুরলে শরীরের তাপ যেমন বেড়ে যায় তেমনি ঘামও হয়। এই ঘাম থেকে অনেক সময় শরীরে বসে যায় এবং এই ঠান্ডা গরমের ফলে সর্দিকাশি হয়। অনেকে রোদ থেকে ঘুরে এসে বিশ্রাম না করেই গায়ে ঠান্ডা জল ঢালেন এবং ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল বের করে গলা ভেজান। আর এর ফলে শরীরের বাইরেটা গরম থাকলেও ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে যায়। আর যাঁরা এগুলো করেন তাঁরা এই ঠান্ডায় গরমের ফলে সহজেই জ্বর ও সর্দিকাশিতে আক্রান্ত হন।
অ্যাজমা : এই সময় বাতাসে প্রচুর ধূলিকণা, ফুলের রেণু উড়ে বেড়ায়। যাঁরা অ্যাজমা রোগী তাঁদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে এই সব কণা শরীরের ভেতরে ঢুকে যায়। অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়।
এই গরমে যাঁদের ব্লাড প্রেসার আছে তাঁদের ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। যাঁরা মাইগ্রেনের রোগী, তাঁদের মাইগ্রেনের ব্যাথা বেড়ে যায়।