বাজি পটকার আচমকা আওয়াজে অনেক শিশু মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মায়; -ডাঃ পার্থপ্রতিম। আজকাল;বর্ষ ১০ সংখ্যা ১৯৭ সোমবার ২৩ আশ্বিন ১৯১২ শকাব্দ ২৮ আশ্বিন ১৩৯৭ বঙ্গাব্দ;১৫ অক্টোবর ১৯৯০ প্রকাশিত
আর একদিন বাদেই কালীপূজো। আর কালীপূজো মানেই যেন বাজি পটকা। আতসবাজি ও পটকাতে থাকে একটি সহজদাহ্য মিশ্রণ। এর মধ্যে এমন সব জিনিসও থাকে যা বাতাসের অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই যেন জ্বলতে পারে। আসলে অক্সিজেন যোগান দেওয়ার জন্য আগে সোরা বা পটাসিয়াম নাইট্রেট ব্যবহৃত হত। এখন পটাসিয়াম ক্লোরেট ব্যবহার করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আগুন জ্বালানোর জন্য গন্ধক ও কার্বন থাকে। স্ফুলিঙ্গ বা ফুলকি তৈরির জন্য মিশ্রণে সিসার যৌগ, অ্যালুমিনিয়াম, লোহার গুঁড়ো ইত্যাদি মিশিয়ে দেওয়া হয়। পটাসিয়াম, অ্যান্টিমনি, আর্সেনিক ও সালফারের যৌগ ব্যবহার করার জন্যই তুবড়িতে উজ্জ্বল সাদা আলো হয়। নানা রঙের আলোর জন্য ব্যবহৃত হয়, বিভিন্ন ধাতব লবণ। বেরিয়াম সল্ট সবুজ, সোডিয়ামের লবণ হলুদ, পটাসিয়াম সল্ট উজ্জ্বল সাদা এবং তামার লবণ নীল আলো সৃষ্টি করে।
বাজি পটকাতে যে জ্বালানি গন্ধক (সালফার) ও কার্বন থাকে, তা পুড়ে সালফারডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়। সালফার ডাই অক্সাইড শ্বাসনালী ও ফুসফুসের ক্ষতি করে। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে সালফিউরাল ও সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি করে; এই অ্যাসিড শুধুমাত্র চামড়ার ক্ষতি করে না, মার্বেল পাথরে তৈরি মূর্তি ও স্থাপত্য নষ্ট করে দেয়। কার্বনমনোক্সাইডের প্রভাবে প্রাণীর রক্তে কার্বোক্সিহিমোগ্লোবিন তৈরি হয়; ফলে জীবকোষে অক্সিজেন ঠিকমত সরবরাহ হতে পারে না, মাথাধরা ক্লান্তিভাব ও আরও বহু উপসর্গ দেখা দেয়। বাজি-পটকার মিশ্রনের সীসা ও সীসার অক্সাইডের (লেড অক্সাইডের ) বিষক্রিয়ায় রক্তাল্পতা, দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অসাড়তা, এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শিশুরাই সীসার বিষক্রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। অ্যান্টিমনি দূষণের ফলও সীসার মতই। আর্সেনিক চামড়া, ফুসফুস ও যকৃতের ক্যান্সার সৃষ্টি করে। ম্যাগনেসিয়াম, স্ট্রনসিয়াম, বেরিয়াম প্রভৃতি ধাতু আমাদের শরীরের জৈবিক ক্রিয়া চালানোর জন্য অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হলেও; এদের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে শরীর বিভিন্ন রকমের অসুবিধা দেখা যায়। বাজির ধোঁয়ার সঙ্গে এসব জিনিস আমাদের দেহে প্রবেশ করে।
পটকার সবচেয়ে মারাত্মক দিক হল শব্দদূষণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী দিনে ৪৫ ডেসিবেল ও রাতে ৩৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ আমাদের শরীর ও মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পটকা ফাটালে আওয়াজ হয় ১০৫ থেকে ১২৫ ডেসিবেল। এর ফলে কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করে, গা বমি বমি ভাব, অল্পেতে রেগে যাওয়া, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের নানা অসুখ দেখা যায়। আমেরিকার ‘ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ- ওয়েলফেয়ার’ এর গবেষকদের মতে পটকার আচমকা শব্দ গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষতি করে। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুও এতে জন্মায়। এসব ছাড়াও অগ্নিকান্ডের ভয় তো রয়েছেই।