হৃদয়ের কথা পর্ব-২৫; হৃদরোগ নির্ণয় ও নিরাময়ে যন্তর-মন্তর

হৃদয়ের কথা পর্ব-২৫; হৃদরোগ নির্ণয় ও নিরাময়ে যন্তর-মন্তর

হৃদরোগ নির্ণয় ও নিরাময়ে যন্তর-মন্তর; ডাঃ পার্থপ্রতিম; ৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৯; দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত
    না, পাড়াতে আর নাড়িটেপা ডাক্তারের অতি উঁচু নাক দেখা যায় না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে ভোল পাল্টে যাচ্ছে আমাদের পরিচিত ধরিত্রীর। চিকিৎসা পদ্ধতিতে এসে গেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। হৃদরোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক যন্তর-মন্তর। এখন এ দেশের নগরগুলির কার্ডিওকেয়ার ইউনিটে এই ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু হয়েছে। ট্যাঁকের জোর থাকলে এগুলি সহজসাধ্য। কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন, বেলুন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, এম.আর.আই, হৃদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এইসব যন্ত্রপাতির কার্যপদ্ধতি সম্বন্ধে এই অবসরে কিছু ধারণা নেওয়া যাক্ ।
কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন (Cardiac Catheterization) ও অ্যাঞ্জিওগ্রাফি (Angiography)  : হৃদযন্ত্রের অ্যানাটামি ও ফিজিওলজির ওপর পর্যবেক্ষণ করার জন্য কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন ও অ্যাঞ্জিওগ্রাফি এক সুন্দর  পদ্ধতি। ১৯২৯ সালের ওয়ারনার  ফরস্ম্যান (Werner Forssman)  প্রথম মানবদেহে কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন করেন। তবে তার উদ্দেশ্য রোগ নির্ণয় ছিল না। হৃৎপেশির ভেতর সরাসরি ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টায় ছিলেন। ফরস্ম্যানের এই আবিষ্কার অনেক বিজ্ঞানীকে উদ্বুদ্ধ করে। নিউ ইয়র্কের দুই গবেষক এন্ড্রে করনান্ড (Andre Counrnand) ও ডিকিনসন রিচার্ড (Dickinson Richard) এ পদ্ধতির ব্যাপক উন্নতি করেন। ফল স্বরূপ ফরস্ম্যান, করনান্ড ও ডিকিনসনের হাতে তুলে দেওয়া হয় ১৯৫৬ সালের নোবেল পুরস্কার। বর্তমানে কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন ও অ্যাঞ্জিওগ্রাফি হৃদরোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এক অসাধারণ হাতিয়ার।
    বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে হৃদরোগের স্বরূপ সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার পর নিবিড়ভাবে জানার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত হার্টের বাইপাস সার্জারি, হৃদযন্ত্রের ভালভ পরিবর্তন, আন্তঃ নিলয় পর্দা বা আন্তঃঅলিন্দ পর্দার ত্রুটি অপারেশনের আগে কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন করা হয়ে থাকে। জন্মগত হৃদরোগের অবস্থা জানা যায় এই পদ্ধতিতে।

    ক্যাথিটার অর্থাৎ খুব সরু একটি নল ফিমোরাল সাবক্লেভিয়ান বা ইন্টারনাল জুগুলার শিরার মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অলিন্দ পর্যন্ত। হাতে ও পায়ে থাকা ধমনীর মধ্য দিয়েও ক্যাথিটার প্রবেশ করানো হয়। গোটা ব্যাপারটা  ফ্লুরোস্কোপিক গাইডেন্সে (Fluroscopic Guidance) চালানো হয়। অর্থাৎ এই পদ্ধতি চলার সময় বিশেষ ধরনের এক্স-রে টিভি মনিটারে পুরো ব্যাপারটা দেখা যায়। ক্যাথিটারাইজেশন করতে রোগীকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না, শরীরের কিছু অংশ অবশ (Local Anaesthesia) করে সেখান থেকে ক্যাথিটার ঢোকানো হয়। তাই এই প্রক্রিয়া চলাকালীন রোগী ও তার চিকিৎসক একইসঙ্গে বিশেষ টিভি মনিটারে দেখতে পারেন। ক্যাথিটারাইজেশনের সাহায্যে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠের ভেতর রক্তচাপ মাপা যায়। প্রয়োজন মতো নলের মাথায় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ লাগিয়ে হৃৎপিন্ডের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ থেকে জানা যায় ডান নিলয় ও বাম নিলয়ের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ। থার্মিস্টার লাগানো ক্যাথিটারের (Thermistor Tipped Catheter) সঙ্গে থাকে একটি ছোট কম্পিউটার। এ পদ্ধতিতে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে রক্তের তাপমাত্রা জানা যায়। অনেক সময় ক্যাথিটার দিয়ে ঠান্ডা স্যালাইন নিক্ষেপ করা হয় হৃদযন্ত্রের প্রকোষ্ঠে। এভাবে মাপা হয় কার্ডিয়াক আউটপুট (Cardiac Output) ।
কার্ডিয়াক অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করতে কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন করে প্রথমে একটি সরু নলকে হৃদযন্ত্রের নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেই নলের সাহায্যে সেই প্রকোষ্ঠে ইনজেকশন করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বিশেষ ধরনের রঙ। এই রঙ এক্স-রে ছবি তেলার সময় ফটোগ্রাফি প্লেটে ছায়া সৃষ্টি করে অর্থাৎ এটি এক্স-রে রশ্মির কাছে অস্বচ্ছ। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে রেডিও ওপেক (Radio Opaque)। রঙ ঢুকিয়ে দেওয়ার পর এক্স-রে মনিটারে ছবি দেখে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ সম্বন্ধে জানা যায়। করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফিতে হৃৎপিন্ডের করোনারি ধমনীতে রঙ ঢুকিয়ে নিরীক্ষা চালানো হয়। এ থেকে জানা যায়-ধমনী কোথায় সরু হয়েছে? রক্ত চলাচল ঠিক কোন্ জায়গায় বাধা পাচ্ছে? রোগের প্রকোপ কতটা তীব্র? রোগীকে পরবর্তী পর্যায়ে করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং করা হবে, না কী অন্য কিছু চিকিৎসার প্রয়োজন-এমন আরো বহু তথ্য। ভেন্ট্রিকিউলোগ্রাফি (Ventriculography)-তে রেডিও ওপেক রঙ ঢোকানো হয় নিলয়ে। এতে বোঝা যায় নিলয়ের ত্রুটি বিচ্যুতি। অ্যাওর্টাগ্রাফি (Aortography) থেকে অ্যাওর্টিক ভালভের অসুখ ধরা পড়ে।

বেলুন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি (Ballon Angioplasty) : বেলুন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে প্রথমে ক্যাথিটার সরু হয়ে যাওয়া ধমনীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেই ক্যাথিটারের মধ্য দিয়ে ঢোকানো হয় আরো একটি নল। অর্থাৎ ক্যাথিটার নামক নলের মধ্যে থাকে আরো কম ব্যাসের নল। এই দ্বিতীয় নলটির মাথায় থাকে একটি ছোট্ট বেলুন। বেলুনটি প্রথমে চোপসানো অবস্থায় থাকে। তারপর ধমনীর যে অংশে চর্বি জমেছে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর বাইরে থেকে নলের সাহায্যে বাতাস পাঠিয়ে ফোলানো হয়। বেলুনের চাপে আর্টারির ভেতর জমে থাকা কোলেস্টেরল চেপ্টে ভেঙে যায় ও রক্ত চলাচলের বাধা দূর হয়। তারপর বেলুন ও ক্যাথিটারকে আস্তে আস্তে বের করে আনা হয়।
বেলুন ভালভিউলোপ্লাস্টি (Ballon Angioplasty) : সরু হয়ে যাওয়া ধমনীকে প্রসারিত করতে যেমন বেলুন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয় ঠিক একইভাবে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন কপাটিকা সংকুচিত হলে তাকে বেলুন ভালভিউলোপ্লাস্টির সাহায্যে মেরামত করা হয়। ক্যাথিটারাইজেশনর সাহায্যে চোপসানো বেলুনকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় সংকুচিত ভালভের ভেতর; তারপর বাইরের বাতাস পাঠিয়ে বেলুনটি ফোলানো হয়। ফোলানো বেলুনের চাপে সংকুচিত কপাটিকা প্রসারিত হয়ে পড়ে। ভালভের নাম অনুসারে এই পদ্ধতিরও বিভিন্ন নাম। পালমোনারি ভালভে করা হয় পালমোনিক ভালভিউলোপ্লাস্টি (Pulmonic Valvuloplasty)। একই ভাবে মাইট্রাল ভালভিউলোপ্লাস্টি (Mitral Valvuloplasty),, অ্যাওর্টিক ভালভিউলোপ্লাস্টি (Aortic Valvuloplasty) করা হয়ে থাকে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বাইপাস অপারেশনের চেয়ে সুবিধাজনক হলেও সব ক্ষেত্রে নিরাপদ নয়। একমাসের কম বয়সী শিশু বা আশি বছরের বেশি বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে বা যাদের নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয় তাদের ক্ষেত্রে খুবই ঝুঁকি থাকে। শতকরা দু’জন রোগীর এই প্রক্রিয়া চলার সময় করোনারি ধমনী হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন জরুরি ভিত্তিতে বাইপাস অপারেশন করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া চলার সময় রোগী মারা যায়।
ইনট্রাভাসকুলার স্টেন্ট (Intravascular Stent) : লেসার রশ্নি দিয়ে সূক্ষ্মভাবে কাটা ছোটো ধাতব নল বা স্টেন্ট বেলুন ক্যাথিটারের সাহায্যে অবরুদ্ধ করোনারি  ধমনীতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর বেলুন ফুলিয়ে ধাতব নলটি ধমনীর মধ্যে ঠিকমতো বসিয়ে দেওয়া হয় আট-দশ সপ্তাহের মধ্যে আর্টারির ভেতরের দেওয়ালে থাকা এন্ডোথিলিয়াম কোষ স্বাভাবিক আস্তারণে নলটিকে ঢেকে দেয়। এই স্টেন্টের মধ্য দিয়ে রক্ত সহজভাবে চলাচল করতে পারে।
মেকানিক্যাল অ্যাথেরেকটমি (Mechanical Atherectomy) : ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জর্জবেলার বেলুন নয় ক্যাথিটারের মাথায় বসিয়ে দিয়েছেন একটি ছোট্ট ড্রিল মেশিন। যার মাথায় থাকে একটি হীরা। প্রতি সেকেন্ডে যা লক্ষবার পাক খেতে পারে। সরু হয়ে যাওয়া ধমনীর মধ্যে প্রচন্ড গতিতে ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় জমাট চর্বি গুঁড়িয়ে দেয়। ধমনীর বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয় না, রক্ত চলাচল স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক জন সিস্পসন ক্যাথিটারের ডগায় লাগিয়েছেন ক্ষুর। ছোট্ট ইলেকট্রিক ব্লেড ধমনীর ভেতর চেঁছে ফেলার পর চর্বির কণাগুলি রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
লেসার অ্যাথেরেকটমি (Laser Atherectomy) : আলট্রাভায়লেট ও ইনফ্রারেড রশ্মির মাঝামাঝি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে রয়েছে লেসার রশ্মি। হৃদরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রেও লেসার রশ্মির প্রয়োগ এদেশে শুরু হয়েছে। কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন পদ্ধতিতে অপটিক্যাল ফাইবার বা বিশেষ ধরনের রশ্মিবাহী নল নিয়ে যাওয়া হয় ধমনীর সরু হয়ে যাওয়া অঞ্চলে। তারপর বাইরে থেকে লেসার রশ্মি অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়। লেসার রশ্মি ধমনীর ভেতরে জমে থাকা চর্বির ওপরে পড়ে তাকে গলিয়ে দেয়। তারপর সেই ধমনীর ভেতর দিয়ে রক্ত সহজেই সংবাহিত হতে পারে।

আল্টা ফাস্ট কমপিউটেড টমোগ্রাফি (Ultra fast computed Tomography CINE-CT) : হৃদযন্ত্রের কাজ কারবার বুঝবার এক অভিনব পদ্ধতি সাইন-সিটি (Cine CT) কমপিউটার চালিত স্ক্যানারের সঙ্গে পাওয়া যায় এক্স-রে প্রতিচ্ছবি। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে অনেক নতুন-নতুন সিটি স্ক্যানার আবিষ্কৃত হয়েছে। যেখানে এক্স-রে বিকিরণকারী উৎসটি বিভিন্ন দিকে ঘুরতে পারে ও বিভিন্ন দিক থেকে হৃদযন্ত্রকে দেখা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হৃদয়ের সিটি স্ক্যান করার জন্য আগে শিরার ভেতর আয়োডিন যুক্ত ওষুধ ইনজেকশন করে দেওয়া হয়। এতে হৃদযন্ত্রের ভেতরে রক্ত কোথায় কীভাবে প্রবাহিত  হচ্ছে তা দেখা সম্ভব। ফুসফুসীয় ধমনীর ত্রুটি, পেরিকার্ডিয়ামের রোগ, করোনারি ধমনীতে বাইপাস সার্জারি করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু-এসব জানবার জন্য সাইন সিটি করা হয়।


ম্যাগনেটিক রিসোনেন্স ইমেজিং (Magnetic Resonance Imaging) : একে সংক্ষেপে এম.আর.আই. বলে। বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে এই পদ্ধতি খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। এম.আর.আই. করার জন্য বেতার তরঙ্গ হৃদযন্ত্রে পাঠানো হয়। এই তরঙ্গ হৃৎপেশিতে থাকা হাইড্রোজেন আয়নকে উত্তেজিত করে তোলে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে থাকলে সেই আয়ন থেকে আবার বেতার তরঙ্গ বিকিরিত হয়। এই উত্তেজিত হওয়া ও বেতার রশ্মি বিকিরণ করার মধ্যে যে সময়ের ব্যবধান থাকে, তার সাহায্যে কমপিউটার চালিত যন্ত্রে আঁকা হয় বিভিন্ন প্রতিলিপি। এই ছবি দেখেই অভিজ্ঞ ডাক্তাররা হৃদরোগ নির্ণয় করেন। এম.আর.আই.-তে কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশনের মতো শরীর ফুটো করে নল ঢোকানোর প্রয়োজন হয় না। বুকে পেসমেকার বসানো না থাকলে এই পদ্ধতি প্রায় একশো শতাংশ নিরাপদ।
    এম.আর.আই. থেকে অনেক কিছু জানা যায়। জন্মগত হৃদরোগের ক্ষেত্রে টু’ডাইমেনশনাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি করার পর অনেক সময় এম.আর.আই করা হয়। এরপর ডাক্তারবাবুরা ঠিক করেন কি পদ্ধতিতে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি দূর করা হবে। ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশনের পর এম.আর.আই. করলে বোঝা যায় বাইপাস সার্জারি করতে হবে কী না। এ পদ্ধতিতে মায়োকার্ডিয়ামের সঠিক মাপজোখ সম্ভব। পেশিতে কোনো টিউমার বা রক্ত জমাট বেঁধে থাকলে তার বিস্তারিত খবর এতে ধরা পড়ে।
ম্যাগনেটিক রিসোনেন্স স্পেকট্রোস্কোপি (Magnatic Resonance Spectroscopy)  : হৃদযন্ত্রের মূল পেশি মায়োকার্ডিয়ামের বিপাকীয় খোঁজখবর নিতে এম.আর.এস. ব্যবহৃত হয়। ম্যাগনেটিক রিসোনেন্স পদ্ধতিতে কাজে লাগিয়ে হৃৎপেশির ভেতরে থাকা বিভিন্ন যৌগিক পর্দাথগুলির হদিশ করা হয়। রোগী আগে যে সব ওষুধ খেয়েছে, হৃৎপেশিতে তার প্রভাব বর্তমানে কতটা ; এসব তথ্য জানা সম্ভব ম্যাগনেটিক রিসোনেন্স স্পেকট্রোস্কোপি থেকে ।

পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (Positron Emission Tomograpy): একে সংক্ষেপে ‘পেট’ (PET) বলা হয়। পজিট্রন হলো এক ধরনের পারমাণবিক কণা। যার আকার, ওজন ইলেকট্রনের মতোই তবে ইলেকট্রনের আধার নেগেটিভ ও পজিট্রনের আধার পজিটিভ। ‘পেট’ থেকে হৃৎপেশির বিভিন্ন রকম রাসায়নিক বিক্রিয়ার কথা জানা যায়। হৃৎপেশিতে কী পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড, গ্লুকোজ, ট্রাইগ্লিসারাইড রয়েছে? বিপাক ক্রিয়ার মধ্যে কোথায় কোথায় ত্রুটি আছে। তার কারণ কী ? এইসব তথ্য জানার জন্য ‘পেট’-এর সাহায্য নেওয়া হয়।
    হৃদয়ের ওপর আসা সকল দুর্যোগকে প্রতিহত করতে বিজ্ঞানীদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। তাদের নিরলস পরিশ্রম ও বিনিদ্র রজনীয় বিনিময়ে আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন-নতুন যন্ত্র ও পদ্ধতি। তবে হ্যাঁ, এইসব প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে হবে সকল মানুষের সীমা-সাধ্যের মধ্যে। তা না হলে, সব কিছুই থাকবে মুষ্টিমেয় ধনীর আয়ত্তাধীন। সিন্দুকবন্দী রবে বিজ্ঞানীদের মৃত্যুঞ্জয়ী সাধনার ফল।

Join our mailing list Never miss an update