হৃদয়ের কথা পর্ব-২৩; হৃদরোগীর ব্যায়াম

হৃদয়ের কথা পর্ব-২৩; হৃদরোগীর ব্যায়াম

হৃদরোগীর ব্যায়াম; ডাঃ পার্থপ্রতিম।১৪ই জুন ১৯৯৯; দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত
    জীবনের সব সাফল্যই কষ্টার্জিত, শরীরকে সুস্থ ও কর্মঠ রাখতে গেলে তার জন্য সঠিকভাবে পরিশ্রম করতে হবে। সজীব ও সবল রাখতে হবে, সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ (Exercise) হলো সঠিক নির্দেশ মেনে, শরীর চালনার মধ্যে দিয়ে, দেহ ও মনকে নীরোগ রাখার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
    হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় করতে নিয়মিত ব্যায়ামের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। হৃদয়ের পেশিগুলিকে সুস্থ সবল রাখতে চাই পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি। করোনারি ধমনী নিয়মিতভাবে হৃদযন্ত্রে তা সরবরাহ করে। রক্তের মধ্যে কোলেস্টেরল বা চর্বির পরিমাণ বেশি হলে সেই চর্বি করোনারি ধমনীর মধ্যে এক বা একাধিক স্থানে জমতে থাকে, ফলে হৃৎপেশিগুলিতে রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে -
* করোনারি ধমনীর ভেতর রক্তচাপ বেড়ে যায়। সে কারণে করোনারি ধমনীর অন্তবর্তী আয়তন ক্রমশ বাড়তে থাকে, ধীরে ধীরে এই ধমনী অনেক বেশি রক্তচাপ নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। হার্টের পেশি বেশি পুষ্টি ও অক্সিজেন পেয়ে সুস্থ-সবল হয়ে ওঠে।
* করোনারি ধমনীর শাখা-প্রশাখার মধ্যেও অনেক বেশি রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে ধমনীর কোনো নির্দিষ্ট শাখা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তবে আশপাশের শাখা ধমনীগুলি প্রসারিত হয়ে হৃৎপেশির রক্ত যোগান সঠিক রাখে।
* রক্তে চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। কমে যায় করোনারি থ্রম্বোসিসের (Thrombosis)  সম্ভাবনা ।
* শুধু হৃৎপেশিতে নয়, দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-যন্ত্র ও তন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনের হার বেড়ে যায়। ফলে শরীরের সকল মাংস পেশী, অঙ্গ-যন্ত্র সবল ও সজীব হয়ে ওঠে। দেহ হয় রোগমুক্ত।
* শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দূর হয়। মনে আত্মবিশ্বাস জন্মায় ও ঘুম ভালো হয়। ঘুম ভালো হওয়াটা হৃদরোগীর পক্ষে অত্যন্ত জরুরি।
* উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ব্লাডসুগার কমে আসে। এর ফলে হার্ট ডিজিজ থেকে মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়।
    ব্যায়াম বিভিন্ন রকমের হয়। সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, হাঁটা, অ্যারোবিক ব্যায়াম, মাল্টিজিমে ব্যায়াম, যোগ ব্যায়াম আরো কিছু পদ্ধতি প্রচলিত আছে।

হাঁটা : হাঁটা হৃদরোগীর পক্ষে এক সুন্দর ব্যায়াম। কার্ডিওলজিস্টরা বলেন- ‘ওয়াকিং ইজ বেস্ট এক্সারসাইজ’। আজকাল গাড়ির সংখ্যা বেশি হওয়ার জন্য স্বাভাবিক হাঁটাচলার সুযোগ কমে এসেছে। হাঁটা বা ভ্রমণের জন্য ভোরবেলাটাই ভালো। তবে যাদের সকালে অসুবিধা আছে তারা গোধুলি বা সন্ধ্যায় হাঁটবেন। যে রাস্তায় বেশি গাড়ি চলাচল করে সেখানে না হাঁটাই ভালো। পার্ক, খেলার মাঠ ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। হাঁটার সময় পোষাক হবে ঢিলেঢালা। চামড়ার জুতো বা রবারের চটি না পরে আরামদায়ক কাপড়ের কেডস ও মোজা পরবেন। হাঁটার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে মেরুদন্ড যেন সোজা থাকে। শুরুতে আস্তে হাঁটুন, মাঝে দ্রুত ও শেষে আবার হাঁটার গতি কমিয়ে আনতে হবে। হার্ট ডিজিজে যারা একবার আক্রান্ত হয়েছেন তারা প্রথম দিকে ১০-১৫ মিনিট আস্তে আস্তে হাঁটুন। পরে ধীরে ধীরে সময়সীমা ও হাঁটার গতিবেগ বাড়াবেন। কোনো সময় যদি কষ্ট হয় তৎক্ষণাৎ বসে বা শুয়ে বিশ্রাম নিন।

সাইকেল চালানো : সাইকেল চালানো এক ধরনের এয়ারোবিক এক্সারসাইজ  অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম। এতে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস দুই-ই ভালো থাকে। সপ্তাহে অন্তত তিন-চারদিন আধাঘন্টা করে সাবারই সাইকেল চালানো উচিত। তবে যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ঘন্টায় ৫ মাইলের বেশি বেগে  সাইকেল না চালানোই ভালো। তাছাড়া আপনি যদি আগে নিয়মিত সাইকেল না চালিয়ে থাকেন, তবে হার্ট অ্যাটাকের পর সাইকেল চালাবেন না।

সাঁতার কাটা : সাঁতার কাটা একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যায়াম অর্থাৎ শরীরের মোটামুটি সব অঙ্গ সাঁতারের সময় নাড়াচাড়া করে। সাঁতারে দেহের প্রধান প্রধান মাংস পেশিগুলি যেমন-কোমর, হাত, কাঁধ, পা, বুক ও পিঠে সুদৃঢ় ও মেদমুক্ত হয়। সাঁতারে হৃৎপিন্ড ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে। যাদের হৃদরোগ ধরা পড়েছে  তাদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সাঁতার কাটা উচিত নয়।

অ্যারোবিক ব্যায়াম : ঘরের মধ্যে আবহ সংগীতের (Music)  তালে তালে এই ব্যায়াম করা হয়। এটি অনেকটা নাচের মতো উপভোগ্য। মহিলাদের মধ্যে কিছুটা উচ্ছাস ও আনন্দ আসে। দেহের ক্ষিপ্রতা বাড়ায় সঙ্গে সঙ্গে চর্বি কমে যায়। যে সব মহিলাদের দেহ মেদবহুল তারা এ থেকে ভালো ফল পাবেন।

মাল্টিজিমের ব্যায়াম : মাল্টিজিম একটি আধুনিক ব্যায়ামাগার। শহরের বিভিন্ন সম্ভ্রান্ত অঞ্চলে এখন হেলথ ক্লাব গড়ে ওঠেছে। মাল্টিজিম হেলথ ক্লাবগুলির অন্যতম উপকরণ। মাল্টিজিমের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন অংশের এক্সারসাইজের জন্য আলাদা আলাদা যন্ত্র লাগানো থাকে। যেমন-সাইড টুইস্টিং, সিট-আপ আরো বহু কিছু। শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে এসব খুবই কার্যকরী। হৃদরোগ সনাক্ত হওয়ার পর মাল্টিজিমে গিয়ে ভারি ব্যায়াম করা উচিত নয়।

    ব্যায়াম করার সময় শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় হৃৎস্পন্দনের হার। কিন্তু হার্টবিট মাত্রাধিক হয়ে গেলে হৃদরোগীর ক্ষেত্রে তা থেকে বিপদ ঘটতে পারে। তাই যে রকম এক্সারসাইজ করুন না কেন তার ফাঁকে মাঝে মাঝে পালস বিট্ গুণে নেবেন। যখন দেখবেন এই মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে সঙ্গে সঙ্গে ব্যায়াম বন্ধ করে বিশ্রাম নিন।
    হৃদ্স্পন্দনের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ভর করে দুটি বিষয়ের ওপর-ব্যক্তির শারীরিক সুস্থতা ও তার বয়স। এবার জেনে নেওয়া যাক্ কোন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কত পালস রেট পর্যন্ত এক্সারসাইজ করতে পারেন-

বয়স (বছরে) সুস্থ ব্যক্তি (বার/ মিনিট) অসুস্থ ব্যক্তি
(বার/  মিনিট
১৮ ২০০ ১৭৬
১৯-২৫ ১৯৫ ১৬৮
২৬-৩০ ১৮৮ ১৬০
৩১-৪০ ১৮০ ১৫২
৪১-৫০ ১৬০ ১৪০
৫১-৬০ ১৫০ ১৩০
৬১ বা তার বেশি ১৪০ ১১


যোগ ব্যায়াম :- সাধারণত শরীরকে সুস্থ রাখা, রোগাক্রান্ত শরীরকে রোগমুক্ত করা ও পরমাত্মার সঙ্গে অন্তরাত্মার মিলনের মাধ্যম হিসাবেই প্রাচীন ভারতীয় ঋষি-মনীষীরা যোগ ব্যায়াম অভ্যাসের প্রচলন করেন। হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে ও রোগমুক্তি পেতে যোগাসন খুবই কার্যকরী।
    মহর্ষি পতঞ্জলী বলেছেন ‘স্থিরে সুখমাসনম্’ অর্থাৎ স্থিরভাবে সুখকর অবস্থানই আসন। যোগাসন ছাড়াও আছে বহুবিধ মুদ্রা প্রাণায়াম।
    হৃদব্যাধির তীব্রতা যখন বেশি থাকে তখন ভালোভাবে হাঁটাচলার পর রোগী প্রথম দিকে সকাল ও বিকালে খোলামেলা জায়গায় ভ্রমণ প্রাণায়াম করতে পারেন। প্রাণায়াম হলো- প্রাণ ও অপান বায়ুর পরস্পর সংযোগ। যোগী যাজ্ঞবল্ক্যর ভাষায় “প্রাণাপান সমাযোগঃ প্রাণায়াম ইতিরিতঃ।” সহজ কথায় ভ্রমণ প্রাণায়াম হলো-হাঁটার সময় পদ্ধতিগতভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ।
    হাঁটার সময় প্রতি পদক্ষেপের সঙ্গে মনে মনে ১-২-৩-৪ উচ্চারণ করে উভয় নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস নিন। তারপর আবার আগের মতো ১-২-৩-৪ উচ্চারণের সঙ্গে শ্বাস ত্যাগ করুন। এভাবে একমাস অভ্যাস করার পর শ্বাস নেওয়ার ও ছাড়ার সময় বাড়িয়ে দিন। যেমন- পঞ্চম ও ষষ্ঠ পদক্ষেপ পর্যন্ত শ্বাস ছাড়–ন। মনে রাখবেন শ্বাসগ্রহণ এবং শ্বাসত্যাগ এই দুই এর ওপর মনঃসংযোগ করতে হবে। কোনো মতেই শ্বাসধারণ করবেন না। তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে এবং সংযত পদচালনায় ভ্রমণ প্রাণায়াম করুন। শ্বাস গ্রহনের সময় লক্ষ্য রাখুন কত বেশি বায়ু আপনি ফুসফুসে ভরে নিতে পারছেন এবং শ্বাস ছাড়ার সময় দেখুন ধীরে ধীরে কত বেশি বায়ু ছাড়তে পারছেন।
    এমন প্রাণায়ামের পর বাড়ি ফিরে শবাসন করুন। শব অর্থাৎ মড়ার মতো নিস্পন্দভাবে শুয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। চিৎ হয়ে শুয়ে পড়–ন, পা দু’টি লম্বা করে দিন। দু’পায়ের মাঝে এক থেকে দেড় ফুট ফাঁক থাকবে। পায়ের গোড়ালি ভেতর দিকে থাকবে এবং আঙুলগুলি বাইরের দিকে থাকবে। হাত দু’টিও লম্বালম্বিভাবে নিজের সুবিধা মতো শরীরের দু’পাশে রেখে শরীরটাকে যতটা সম্ভব আলগা করে দিন।
    প্রথমে শরীরের নিচের অংশ; পায়ের বুড়ো আঙুল থেকে শুরু করে পায়ের অন্যান্য আঙুল, পাতের পাতা, হাঁটু, থাই, কোমর থেকে সমস্ত পা অর্থাৎ প্রতিটি অঙ্গকে আলাদা করে দিতে হবে। একই ভাবে পিঠ, বুক, কাঁধ, ঘাড় ও সব শেষে মাথার মাংস পেশিগুলিকে শিথিল করে দিতে হবে। শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মন হবে শান্ত-ধীর-চিন্তাশূন্য। আসন অবস্থায় যদি ঘুম আসতে থাকে তবে বুঝতে হবে আসনটি ঠিকমতো অভ্যাস হচ্ছে। শবাসন উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগীদের পক্ষে অবশ্য করণীয়। এই আসনে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-তন্ত্র ও হৃদয় সম্পূর্ণ বিশ্রাম পায়।
    রোগের উপসর্গগুলি যখন কমে আসবে তখন প্রাতঃকৃত্য শেষ করে ও বিকালে ভ্রমণ প্রাণায়ামের পর যোগমুদ্রা, অর্ধচন্দ্রাসন, পদহস্তাসন অভ্যাস করা যায়।
যোগমুদ্রা:-  পদ্মাসনে বসে হাতের তালু ওপর দিকে করে কোলের ওপর রাখুন। এবার দম ছাড়তে ছাড়তে কোমর থেকে দেহের ওপরের অংশ সামনে বাঁকিয়ে মাটিতে লাগান। এবার স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন। এভাবে ১০-১৫ সেকেন্ড থাকার পর শ্বাস নিতে নিতে সোজা হয়ে বসুন। এভাবে তিন-চারবার অভ্যাস করুন। এই মুদ্রায় কোষ্ঠ পরিস্কার হয়, পেটে চর্বি জমতে পারে না, হৃদযন্ত্র সবল হয়।
অর্ধচন্দ্রাসন:- এই আসনটি অভ্যাসের সময় সমস্ত দেহটিকে আধখানা চাঁদের মতো দেখায়, তাই এই নাম। পা’দুটি জোড়া হয়ে দাঁড়ান। হাত দু’টি নমস্কারের ভঙ্গিতে জোড়া করে মাথার ওপরে তুলুন। হাত-কানের সঙ্গে লেগে থাকবে, এবার কোমর থেকে শরীরের ওপরের অংশ যতদূর সম্ভব পেছনদিকে বাঁকিয়ে দিন। আবার ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এই আসন ৩-৪ বার অভ্যাস করুন।
পদ-হস্তাসন:- পা দুটি জোড়া করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এরপর দম ছাড়তে ছাড়তে কোমর থেকে দেহের ওপরের অংশ বাঁকিয়ে সামনে ঝুঁকে হাত দুটি মাটিতে লাগান। এ অবস্থায় দম স্বাভাবিক থাকবে। এরপর দম নিতে নিতে প্রথম অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। এই আসনে প্যাংক্রিয়াসে চাপ পড়ার জন্য মূত্রে শর্করা কমে যায়, ক্ষুধা বাড়ে ও হৃৎপেশি সবল হয়।

ব্যায়াম না করার অজুহাত :- ব্যায়ামের উপকারিতা মনে মনে উপলদ্ধি করলেও বিভিন্ন অজুহাতে অনেকেই ব্যায়াম করাকে এড়িয়ে যান। তারা বলেন-
১) ‘এখনকার দিনে যা খাওয়া; শরীর কতটুকুই বা পুষ্টি পায়? এর ওপর ব্যায়াম করলে-আর বাঁচতে হবে না।’
২) ‘ব্যায়াম করার মতো সময় হাতে নেই, প্রচন্ড কাজের চাপ।’
৩) ‘ব্যায়াম-ট্যায়াম বড়ো লোকের জিনিস, গরিবের জন্য এসব নয়।’
৪) ‘পেটের জন্য সারাদিন প্রচন্ড ছোটাছুটি, তাতেই যথেষ্ট ব্যায়াম হয়। এর ওপর আরো কিছু করতে গেলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বে।’
৫) ‘ব্যায়াম করতে হলে উপযুক্ত পোষাক পরিচ্ছদ দরকার, ওসব কেনার পয়সা নেই।’
৬) ‘আজ থাক্; কাল থেকে...’

জবাব:-
১) দৈনন্দিন জীবনে মধ্যবিত্ত মানুষেরা যা খাবার খান; তাকে সঠিক ভাবে হজম করতে পারলে দেহ প্রচুর শক্তির যোগান পেতে পারে। খাবার খাওয়াটাই মূল কথা নয়। খাদ্যকে পরিপাক করে দেহের আত্মস্থ (Assimilate)  করাই পুষ্টির মূল চাবিকাঠি। নিয়মিত ব্যায়াম করলে পরিপাক শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে খাদ্য সঠিক ভাবে ব্যবহৃত হয়ে দেহকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে।

২) প্রতিদিন ২০-২৫ মিনিট ব্যায়াম করলেই শরীর সুস্থ রাখা যায়। আমরা যদি সঠিকভাবে হিসাব করি, তবে দেখবো এর চেয়ে বহুগুন বেশি সময় আমরা বাজেভাবে নষ্ট করি। তাছাড়া, শারীরিক অসুস্থতার জন্য আমাদের যে শ্রমঘন্টা (Working hours) নষ্ট হয়, তার মোট বার্ষিক হিসাবও কম নয়।

৩) যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়, তাদের ব্যায়াম করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ  এতে চিকিৎসাখাতে ব্যয় অনেক কমে যায়। বর্তমান যুগে বিভিন্ন চিকিৎসা প্রযুক্তির প্রভাবে (যেমন-আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, প্যাথোলজি ইত্যাদি) রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যয় ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তাই গরিব মানুষদের আগে থেকেই সর্তক হতে হবে। আগেই বলেছি শরীর অসুস্থ হলে শ্রমদিবস (Working day) নষ্ট হয়। তাই যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল তাদের ভালো করে ব্যায়াম করা উচিত।

৪) সারাদিনের ছোটাছুটি ও ব্যায়ামের মধ্যে এক সুনির্দিষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যেটা অনেকেরই চোখে পড়েনা। ব্যায়াম হলো সুনির্দিষ্ট তালে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন। ব্যায়ামের সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রয়োজন অনুসারে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ হয়, যা অন্য সব প্রাত্যহিক কাজকর্মে হয় না। এছাড়াও যোগব্যায়াম, মুদ্রা এসব অভ্যাসের ফলে দেহের বিভিন্ন হরমোনাল গ্রন্থিগুলি সক্রিয় হয়; যা শরীর রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫) যে কোন ঢিলে ও হালকা পোষাক পরেই ব্যায়াম করা যায়। আমরা প্রচলিতভাবে যে পোষাক পরি যেমন-ছেলে বা ছোটো মেয়েরা হাফ শার্ট ও গেঞ্জি, বড়ো মেয়েদের ক্ষেত্রে সালোয়ারকামিজ-এসবই ব্যায়াম করার উপযুক্ত পোষাক।

৬) ‘আজ নয়; কাল-পরশু থেকে ব্যায়াম শুরু করা যাবে।’ এভাবনা যাদের মাথায় আছে তাদের কাল মহাকালে পর্যবসিত হয়। এ প্রসঙ্গে বেশি কথা না বলে মহাবীর রাবণের এক উপদেশ স্মরণ করতে পারি-
“ শুভস্য শীঘ্রম্
            অশুভস্য কালহরণম্।’’
    আধুনিক যান্ত্রিকতার প্রভাবে অনেক অংশে লাঘব হয়েছে আমাদের শরীরিক শ্রম। ভ্যাকিউম্ ক্লিনার, ওয়াসিং মেশিন, মিক্সিগ্রাইন্ডার, গাড়ি, লিফ্ট চুরি করছে শ্রমের সুযোগগুলি। অলস-মেদবহুল দেহে তাই ফন্দি-ফিকির আঁটে হার্ট ডিজিজ্, ডায়াবিটিস আরো বহু রোগ-ব্যাধি। এসবের সঙ্গে লড়বার ধারালো হাতিয়ার হলো নিয়মিত ব্যায়াম।

Join our mailing list Never miss an update