হৃদয়ের কথা; পর্ব-১৪; জন্মগত হৃদরোগ

হৃদয়ের কথা; পর্ব-১৪; জন্মগত হৃদরোগ

জন্মগত হৃদরোগ; ডাঃ পার্থপ্রতিম। ২৬ শে জানুয়ারী ২০০৮; পৃষ্ঠা নয়; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
শুধু আমি কেন? আপনি-তিনি-আমরা সবাই এক প্রাকৃতিক কারণেই এসেছি এই বসুন্ধরার মাঝে। কিন্তু সবার আগমন সুখের হয় না। কেউবা জন্মের সাথে সাথেই নিয়ে আসে মৃত্যুর পরোয়ানা। আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ুর পরিবর্তে, জন্মের পূর্বেই দাঁতাল যমদূত বাসা বাঁধে হৃদয়ের কোটরে।
    এক সমীক্ষায় জানা গেছে, বিগত তিন বছরে সারা পৃথিবীতে যত শিশু জন্মেছে তার এক হাজার জনের মধ্যে ১২ জন শিশু জন্মগত হৃদরোগের শিকার। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে আমরা বলি কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ্ (Congenital Heart Disease)। মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বৃদ্ধির সময়েই এ রোগের বীজ বপন হয়।
    জন্মগত হৃদরোগ বিভিন্ন রকমের। কিছু রোগের তীব্রতা এমন হয় যে- জন্মের পরেই শিশু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে; অনেক ক্ষেত্রে মারাই যায়। আবার অনেক সময় রোগী বেশ স্বাভাবিকভাবেই বড়ো হয়ে ওঠে। অসুখের কোনো লক্ষণ সচরাচর চোখে পড়ে না।
    সামান্য পরিশ্রম বা খেলাধূলা করলে শিশুর নিঃশ্বাসে কষ্ট, কাশি-সর্দি ছাড়াই বুকে ব্যথা, মাঝে মাঝে পা ফুলে যায়, ফুসফুসে ঘন ঘন জীবাণুর আক্রমণ, অল্প হাঁটাচলার পর পায়ে ব্যথা, হাত ও দেহের তুলনায় পা অনেক ঠান্ডা, নাক দিয়ে প্রায়ই খুব রক্ত পড়ে। শিশুর ঠোঁট-জিভ-নখ এসব নীলাভ দেখায়, ছোট্ট বাচ্চা কাঁদলে নীল হয়ে যায়। হ্যাঁ, এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন। কারণ এর কোনো একটি জন্মগত হৃদব্যাধির উপসর্গ হতে পারে।
    কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজকে আমরা সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করতে পারি- (১) যে সব রোগে শিশু নীল হয় না বা কনজেনিটাল নন-সায়ানোটিক ডিজিজ্ (Congenital Non-Cyanotic disease) (২) যে সব রোগে শিশু নীল হয়ে যায় (‘ব্লু বেবী’) বা কনজেনিটাল সায়ানোটিক ডিজিজ্ (Congenital Cyanotic disease)।
 

    যে সব রোগে শিশু নীল হয় না তা হলো- (ক) আন্তঃ অলিন্দ পর্দার ছিদ্র বা অরিকিউলারসেপ্টাল ডিফেক্ট সংক্ষেপে এ.এস.ডি (Auricular Septal Defect- A.S.D), (খ) আন্তঃনিলয় পর্দার ছিদ্র বা ভেন্ট্রিকিউলার সেপ্টাল ডিফেক্ট সংক্ষেপে ভি.এস.ডি.(Ventricular Septal Defect-V.S.D.),  (গ) ফুসফুসীয় ও মহাধমনী যুক্ত বা পারসিসটেন্ট ডাক্টাস আর্টোরিওসাস সংক্ষেপে পি.ডি.এ. (Persistant Ductus Arteriosus-P.D.A.), (ঘ) মহাধমনী সরু হওয়া বা কোয়ার্কটেশন অফ্ অ্যাওর্টা (Coarctation of Arota) প্রভৃতি।
    অরিকিউলার সেপ্টাল ডিফেক্ট:- এই অসুখ মেয়েদের মধ্যেই বেশী। ডান ও বাম অলিন্দ দুটির মাঝে যে প্রাচীর থাকে, এক্ষেত্রে তাতে ছিদ্র হয়ে যায়। আমরা জানি মহাশিরার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড পূর্ণ রক্ত ডান অলিন্দে আসে। আর ফুসফুসীয় ধমনীর মধ্য দিয়ে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত আসে বাম অলিন্দে। এই দু’ধরনের রক্ত যাতে না মেশে তার জন্যই রয়েছে আন্তঃ অলিন্দ প্রাচীর। এ দেওয়ালে ছিদ্র হলে অশুদ্ধ ও বিশুদ্ধ  রক্ত  মিশে যায়। এই ব্যাধি জন্মগত হলেও এর লক্ষণগুলি দেখা দেয় যৌবন কালে। জন্মগত হৃদরোগীর ৭ থেকে ৮ শতাংশ এ রোগের শিকার।
    ডাক্তার বাবুরা স্টেথোস্কোপ দিয়ে বুক পরীক্ষার সময় হার্টের অস্বাভাবিক শব্দ বা মার্মার (Murmur)  শুনতে পান। এছাড়া এসব রোগীদের হার্টবিট অনেক সময় অনিয়মিত হয়, হৃৎস্পন্দনের ছন্দ পতন ঘটে। ফুসফুসে মাঝে মাঝেই জীবাণুর সংক্রমণ (Infection) দেখা দেয়। বুকের এক্স-রে করলে হৃদপিন্ড ও ফুসফুসীয় ধমনীর বড় হয়ে যাওয়া বোঝা যায়। এছাড়া ই.সি.জি. ও ক্রস সেকশনাল কার্ডিওগ্রাফি থেকে আরো বিস্তারিত খোঁজ খবর পাওয়া সম্ভব।
    হার্টের অপারেশন (Open Heart Surgery) করে ছিদ্র বন্ধ করে দেওয়া যায়। হোমিওপ্যাথিক মতে লক্ষণ অনুসারে সাইলিসিয়া (Silicea), ক্যালকেরিয়া কার্ব (Calcaria Carb), থুজা (Thuja Oc.) দিয়েও চিকিৎসা করা যেতে পারে।
    ভেন্ট্রিকিউলার সেপ্টাল ডিফেক্ট:- অলিন্দের মতো ডান নিলয়ে থাকে কার্বন-ডাই অক্সাইড পূর্ণ রক্ত ও বাম নিলয়ে থাকে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত। দুই নিলয়ের মাঝের পর্দায় ছিদ্র হয়ে গেলে অশুদ্ধ ও বিশুদ্ধ রক্ত মিশে যায়। যেহেতু বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনীর সাহায্যে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে; তাই এখানে রক্তচাপ স্বভাবতই বেশি থাকে। নিলয়ের সংকোচনের সময় রক্ত বাম থেকে ডান নিলয়ে চলে আসে। আন্তঃনিলয় পর্দার ছিদ্র ছোট হলে তা শিশুর জন্মের কয়েক বছরের মধ্যে আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। যদি ছিদ্র বড় হয় তা নিয়ে দেখা যায় অনেক জটিলতা।
    এক্ষেত্রে সামান্য পরিশ্রমে নিঃশ্বাসে কষ্ট, বুকে ব্যথা, হৃদয়ের অবসন্নতা ও হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (Synsope), কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠা (Haemophysis), গলার শিরা ফুলে যাওয়া, লিভার বড় হওয়া, আরো কিছু  উপসর্গ দেখা দেয়। জন্মগত হার্ট ডিজিজের ৬ থেকে ৮ শতাংশ এ রোগের রুগী। এ রোগের চিকিৎসা মোটামুটি ভাবে এ.এস.ডি-র মতোই।
    কোয়ার্কটেশন অব্ অ্যাওটা:- এই রোগের প্রবণতা মেয়েদের চেয়ে পুরুষের মধ্যে দ্বিগুন। মহাধমনীর যেখান থেকে ডাক্টাস আর্টেরিওসাস বের হয়, অর্থাৎ বাম সাবক্লেভিয়ান ধমনী (Subclavian Artery)-র উৎপত্তিস্থানের ঠিক নিচে হঠাৎই মহাধমনী সরু হয়ে পড়ে। এরফলে  অনেক সময় সদ্যজাত শিশুর হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। শৈশব যদি ভালোয়-ভালোয় কাটে, তবুও ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের পর আবার রোগের উপসর্গগুলি প্রকাশ পায়।
    কোনরকম লক্ষণ ছাড়াই উচ্চরক্তচাপ, মাথাব্যথা, চলাফেরার পর পায়ে ব্যথা, হাতের তুলনায় পায়ে ব্লাডপ্রেশার অনেক কমে যাওয়া, পায়ের ধমনীস্পন্দন বা পালসবিট কমে আসা প্রভৃতি এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। অনেক সময় বুকের দিকে তাকিয়ে হৃৎস্পন্দন লক্ষ্য করা যায়। এসব রোগীদের ই.সি.জি. করলে জানা যায় যে, তাদের বাম অলিন্দ বড় হয়ে গেছে। জন্মগত হৃদরোগের ৭ শতাংশ এই রোগ। একে বংশগত রোগ বলে অনেক হৃদবিশেষজ্ঞ মনে করেন। অপারেশনের সাহায্যে শরীরের অন্য অংশ থেকে রক্তনালী কেটে এখানে জুড়ে দিয়ে বাইপাস গ্রাফটিং (Bypass Grafting) করা হয়। অনেক সময় অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে সংকুচিত ধমনীকে প্রসারিত করা হয়ে থাকে। এছাড়া হোমিওপ্যাথিমতে লক্ষণ অনুসারে গ্লোনয়িন (Glonoin), অর্জুন মাদার দিয়েও  চিকিৎসা করা যেতে পারে।
    পারসিস্টেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসাস:-ভ্রূণ অবস্থাতেই হৃদযন্ত্রের কাজ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু শিশু মাতৃগহ্বরে থাকা পর্যন্ত ফুসফুসের কোন কার্যকারী ভূমিকা থাকে না। সে সময়ে একটি রক্তনালী দিয়ে ফুসফুসীয় ধমনীর সঙ্গে মহাধমনীর যোগাযোগ থাকে। জন্মের পর ফুসফুসের কাজ কারবার চালু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে এপথ আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। কোন কারণে এটি বন্ধ না হলে তাকে পি.ডি.এ. বলে। যেহেতু মহাধমনীর রক্তচাপ ফুসফুসীয় ধমনী থেকে বেশি সে কারণে মহাধমনী দিয়ে প্রবাহিত রক্তের ৫০ শতাংশ রক্ত আবার ফুসফুসীয় ধমনীতে ফিরে যায়।
    এ রোগে কোন অসুবিধা হতেও পারে, আবার নাও পারে। নিঃশ্বাসের কষ্ট, পা ও গলার শিরা ফোলা, লিভার বড়ো হওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা যায়। কখনো এ অসুবিধা থেকে কনজেনটিভ হার্ট ফেলিওর ও ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস হতে পারে। অপারেশন করে পি.ডি.এ. বেঁধে কেটে দেওয়া হয়।
    যে সব হৃদরোগে শিশু নীল হয় তারমধ্যে প্রধান হল ফ্যালটস টেট্রালজি (Fallot’s Tetralogy)। এছাড়াও মহাধমনীর অস্বাভাবিক অবস্থান (Transposion of Aorta), পালমোনারী অ্যাট্রেসিয়া (Pulmonary Atresia), ট্রাইকাসপিড অ্যাট্রেসিয়া (Tricuspid Atresia) আরো কিছু রোগ আছে।

ফ্যালটস্ টেট্রালজি:- আসলে এটি কোন একটি বিশেষ রোগ নয়। হৃদযন্ত্রের চার প্রকার ত্রুটিকে একসাথে এ নামে ডাকা হয়। ত্রুটিগুলি হল-
১) আন্তঃনিলয় পর্দার ছিদ্র (Venricular Septal Defect V.S.D.)
২) ফুসফুসীয় ধমনী সরু হওয়া (Pulmonary Stenosis)
৩) ডান নিলয়ের পেশীর বিবর্ধন (Right Ventricular Hypertrophy)
৪) ডান ও বাম নিলয় থেকে মহাধমনী উৎপন্ন হওয়া (Overriding of Aorta)
    পৃথিবীতে যত শিশু জন্মায় তার দু’হাজার জনের মধ্যে একজন এ রোগের শিকার। জন্মগত হার্ট ডিজিজের ১০ শতাংশই এই রোগ। সাধারণত শৈশব থেকেই এ ব্যাধির  উপসর্গগুলি দেখা যায়। নিঃশ্বাসে কষ্ট, ঠোঁট-জিভ-নখ-মুখ-পিঠ নীলচে দেখায়। কাঁদলে বাচ্চা একেবারে নীল হয়ে যায় (Cyanosis), হাতের আঙুলের নখের গোড়ার দিকের স্বাভাবিক বক্রতা নষ্ট হয়ে যায় (Clubbing) বা আঙুলের ডগা ফুলে ওঠে, শিশু সবসময় হাঁটুমুড়ে বসে থাকতে চায়, বাচ্চা কিছু সময়ের জন্য জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে, হঠাৎ মৃত্যু এসব রোগীদের স্বাভাবিক ঘটনা। ই.সি.জি. ও বুকের এক্স-রে থেকে জানা যায় হৃদাবিবর্ধনের (Hypertrophy) খবর। তবে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা প্রয়োজন।
    ওপেন হার্ট অপারেশন করে ত্রুটিগুলিকে সংশোধন করা হয়। তবে শল্যচিকিৎসার পরেও রোগীকে সারাজীবন বিভিন্ন বিধি নিষেধ মেনে চলতে হয়। এ রোগীকে কখনই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে দেখা যায় না।
    ভ্রূণের বয়স পাঁচ সপ্তাহ হলেই তার হৃদপিন্ডের গঠন শুরু হয়ে যায়। তাই কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ্ রুখতে গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য, খাদ্য, আচার-আচরণ খুবই গুরত্বপূর্ণ।

জন্মগত  হৃদরোগ রুখতে যে সব বিষয় নজর দেওয়া দরকার-
    গর্ভাবস্থায় মায়ের ভাইরাস ঘটিত রোগ, যেমন-রুবেলা বা জার্মান মিজিলস্ (German Measls) নামের একপ্রকার হামরোগ, জলবসন্ত (Chicken pox), মাম্পস (Mumps), জন্ডিস (Jaundice) প্রভৃতি না হয়। এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য আগে থেকেই টিকা নেওয়া দরকার।
    মায়ের শরীরে কোন বিপাকীয় ত্রুটি (Matabolic disorder), যেমন- ডায়াবিটিস (Diabetes), থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষরণ কমে যাওয়া বা হাইপোথাইরয়ডিজম (Hypothyrosism) থাকলে তা গর্ভলাভের আগে থেকেই  চিকিৎসা করা দরকার। গর্ভাবস্থায় ধূমপান ও মদ্যপান একদম বন্ধ করতে হবে।
    গর্ভাবস্থায় কিছু ওষুধ যেমন-লিথিয়াম, কার্টিকো স্টেরয়েড (Corticosteroid), ফিনোবারবিটোন খাওয়া চলবে না।
    গর্ভাবস্থায় প্লেনে চড়া, বেশি উঁচু জায়গায় যেমন-১০-১২ তলার ওপর, পাহাড়ী অঞ্চলে অর্থাৎ যারা সমতলে থাকেন তাদের গর্ভাবস্থায় শৈলশহরে বেশিদিন থাকা উচিত নয়।
    গর্ভবতী মায়ের সুষম পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া।
    গর্ভাবস্থায় বার বার এক্স-রে না করা। এ সময় বিশেষ প্রয়োজন না হলে এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড ও রেডিও অ্যাকটিভ আইসোটোপ দিয়ে কোন অনুসন্ধান না করাই ভালো।
    এ সময় লাফ দেওয়া, এক নাগাড়ে অনেকক্ষণ হাঁটা উচিত নয়।
    গর্ভবতী মায়ের বেশি উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের মধ্যে দিন না কাটানো। বিশেষত হঠাৎ চমকে উঠলে পেটের পেশি সংকুচিত হয় ও গর্ভস্থ ভ্রূণের ওপর চাপ পড়ে। পরবর্তী কালে এটাই শিশুর জন্মগত হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
    বেশি বয়সে ও ১৬ বছরের নীচে গর্ভবতী হওয়া উচিত নয়।
    গর্ভাবস্থার শুরু থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত যৌন মিলন বন্ধ রাখা উচিত। কারণ তখন ভ্রূণটা জরায়ুর গায়ে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত হয় না, তাই ঐ সময় অতিরিক্ত চাপে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। ১২ থেকে ২৪ সপ্তাহ  পর্যন্ত শারীরিক মিলন হতে পারে, তবে পেটে যেন বেশি চাপ না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে এবং দেখতে হবে মিলনের সময় গর্ভবতী যেন বেশি নড়াচড়া না করে । ২৪ সপ্তাহ থেকে শিশুর জন্ম পর্যন্ত যৌন মিলন একদম বন্ধ থাকবে।
    বিশেষত মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত মহিলাদের মধ্যে দেখা যায় যে, অবাঞ্ছিত গর্ভলাভ হলে সেই ভ্রূণ নষ্ট করার জন্য অনেকে হাতুড়ে ডাক্তার ও কবিরাজের শরণাপন্ন হন এবং ওষুধ খান। এরপর যদি ভ্রূণ নষ্ট না হয় তবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে অবশ্যই গর্ভপাত করানো দরকার; না হলে ভূমিষ্ঠ  শিশুর জন্মগত হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। এসব ছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে জিন ঘটিত গোলমাল থাকে। যার চিকিৎসা এদেশে সহজলভ্য নয়।
    জন্মগত হৃদরোগ প্রতিরোধ করার জন্য গর্ভবতী মা ও তার পরিবারের সকলকে প্রথম থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। ঠিক ঠিক ভাবে মেনে চলতে হবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশ। ‘কপাল খারাপ হলে এটাই হয় বা পূর্বজন্মের পাপের ফল ছাড়া আর কি-ই বা বলবো; না হলে অবোধ শিশুর এমনটি বা হবে কেন?’  -এসব বলে বাস্তবকে এড়িয়ে গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। দ্বিতীয়ার দূর্বা-চন্দনে নয়, স্বাস্থ্য সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা ও তার প্রয়োগের মধ্য দিয়েই যম দুয়ারে পড়বে কাঁটা।

Join our mailing list Never miss an update