হৃদয়ের কথা পর্ব-৩; রক্তচাপ ও তার মাপজোখ; ডাঃ পার্থপ্রতিম।
তিনি বিজ্ঞানী নন। চিকিৎসক বা শরীরতত্ত্ববিদ্? না, তাও না। মানুষের পরলোককে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভরে দেওয়াই তার কাজ। ঈশ্বরের সকল সন্তানের মৃত্যুর পর পরমপিতার কাছে পৌঁছে দেবার লক্ষ্য নিয়েই তার কর্মজীবন শুরু।
হ্যাঁ, এই রকমই এক ব্যক্তি গির্জার ইংরেজ যাজক রেভ্ স্টিফেন হল্স (Rev Stephen Hales) চিকিৎসা জগতে ঘটিয়ে দিলেন এক যুগান্তকারী ঘটনা। তখন ১৯৬৩ সাল। এর প্রায় একশো বছর আগে উইলিয়াম হার্ভি আবিষ্কার করেছিলেন রক্তসঞ্চালন পদ্ধতি। হল্স বিড়ালের করটিড ধমনীর মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন একটি ক্যানুলা (Cannula)। ক্যানুলা হ’ল ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ, রস প্রভৃতি বের করার জন্য বিশেষ নল। স্টিফেন সাহেব ক্যানুলার সঙ্গে খাড়াখাড়ি ভাবে যুক্ত করলেন তিন মিটার লম্বা কাঁচের নল। তিনি লক্ষ্য করলেন নলের ভিতর দিয়ে রক্ত প্রায় আড়াই মিটারে উঁচুতে উঠে গেছে। শুধু তাই নয়, দেখা গেল, প্রতিবার নিলয়ের সংকোচন ও প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে রক্ত নলের মধ্যে ওঠা-নামা করছে।
স্টিফেন হলস্-এর এই পর্যবেক্ষণ ব্লাডপ্রেসার পরিমাপের সূচনা ঘটালো। পরবর্তীকালে ১৮৪৭ সালে বিজ্ঞানী লুডইগ (Ludwig) পারদস্তম্ভের সাহায্যে রক্তচাপের লেখচিত্র (Graph) তৈরির যন্ত্র বানালেন। ওট্ট ফ্রাঙ্ক (Otto Frank) রক্তচাপের গ্রাফ তৈরির কাজে আলোকরশ্মি ব্যবহার করে বিষয়টিকে আরো নিখুঁত করে তোলেন।
এইসব যন্ত্রপাতি সবই ছিল জন্তুজানোয়ারদের রক্তচাপ পরিমাপের উপযোগী। মানুষের রক্তচাপ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সঙ্গতকারণেই এগুলি ব্যবহার করা যায় না। ক্যানুলা দিয়ে ধমনী ফুটো করা সত্যই বিপজ্জনক। মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ১৮৯৬-তে বিজ্ঞানী রিভা রকি (Riva Rocci) তৈরি করলেন ব্লাডপ্রেসার মাপার আধুনিক যন্ত্র স্ফিগ্মো মনোমিটার (Sphygmo Monometer)। এই শব্দটি এসেছে গ্রিকশব্দ স্ফিগমেস (Sphygmes) থেকে, যার অর্থ ধমনীঘাত। না, রক্তচাপ মাপার জয়যাত্রা এখানেই থেমে যায়নি। পরবর্তীকালে আরো বহু ব্যক্তি এ বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ভন্ রেকলিং হাউসেন (Von Reckling Housen)।
হৃৎপিন্ড নামক পেশির থলিটির প্রতিটি সংকোচনের সময় রক্ত মহাধমনী ও ফুসফুসীয় ধমনীর মধ্যে উৎক্ষিপ্ত হয়। মহাধমনীর মধ্যে যে রক্ত প্রবেশ করে তা বিভিন্ন ধমনী ও জালকের পথ ধরে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। রক্ত রক্তনালীর প্রাচীরের গায়ে যে পার্শ্বচাপ দেয় তাকে রক্তচাপ বা ব্লাডপ্রেসার (Blood Pressure) সংক্ষেপে BP বলে। প্রচলিত পদ্ধতিতে রক্তচাপ বলতে আমরা কনুই-এর কাছে ব্রেকিয়াল ধমনীর গায়ে প্রবহমান রক্তচাপই বুঝি।
আমাদের হৃদযন্ত্রের নিলয়পেশি সংকোচনের সময় ধমনীর গায়ে যে সবচেয়ে উচ্চচাপ দেয় তাকে বলে সিস্টোলিক প্রেসার (Systolic Pressure)। গ্রিক শব্দ ‘সিস্ট্যালি’ যার অর্থ ‘সংকোচন’ থেকে এই শব্দের উৎপত্তি। হৃৎপেশির প্রসারণের সময় সর্বাপেক্ষা যে নিম্নচাপ সৃষ্টি করে তাকে ডায়াস্টোলিক প্রেসার (Diastolic Pressure)। সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক চাপের পার্থক্য নাড়ীর চাপ বা পাল্স্ প্রেসার (Pulse Pressure) নামে পরিচিত। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তির সিস্টোলিক প্রেসার ১২০ ও ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৮০। তবে সে ব্যক্তির নাড়ীর চাপ (১২০-৮০) = ৪০ মিলিমিটার পারদ স্তম্ভের চাপের সমান। আবার সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক উভয় চাপমাত্রার গড়কে গড় রক্তচাপ বা মিন ব্লাডপ্রেসার (Mean Blood Pressure) বলে। অর্থাৎ মিন ব্লাডপ্রেসার হ’ল = (সিস্টোলিক + ডায়াস্টোলিক) /২।
হৃদরোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ডাক্তারবাবুরা সিস্টোলিক, ডায়াস্টোলিক, পাল্স্ প্রেসার, মিন ব্লাডপ্রেসার, প্রভৃতির ওপর যথেষ্ঠ নজর দেন।
বিভিন্ন মানুষের ব্লাডপ্রেসার যেমন আলাদা হয়, তেমনি আবার একই ব্যক্তির রক্তচাপ সবসময় সমান থাকে না। কোনো ব্যক্তির সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় কোনোরকম উত্তেজনা ছাড়া যে রক্তচাপ থাকে তাকে বেসাল ব্লাডপ্রেসার (Basal Blood Pressure) বলে।
মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কারণে রক্তচাপের পরিবর্তন হয়। সাধারণত বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লাডপ্রেসার বাড়তে থাকে। স্ত্রী লোকের রক্তচাপ পুরুষের তুলনায় সামান্য কম হয়। মানুষের রক্তচাপ বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়। দেখা গেছে, রোগা লোকের তুলনায় যারা একটু গোলগাল, নাদুস, নুদুস তাদের সিস্টোলিক প্রেসার বেশি থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় রক্তচাপের পরিবর্তনও লক্ষ্য করার মতো। মানুষ যখন ঘুমায় তখন তার সিস্টোলিক প্রেসার ৫-২০ মি.মি. কমে যায়। রেগে গেলে বা অন্য কোনো কারণে মানসিকভাবে উত্তেজিত হলে সিস্টোলিক চাপ বাড়ে। ব্যায়ামের সময় সিস্টোলিক চাপ বেড়ে ১৮০ মি.মি.-এর বেশি হতে পারে। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ডায়াস্টোলিক চাপ বাড়ে, আবার আয়েস করে শুলে তা কমে আসে।
বিভিন্ন বয়সের স্ত্রী- পুরুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ
বিভিন্ন বয়সের স্ত্রী- পুরুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ
পুরুষ মহিলা
বয়স বছরে সিস্টোলিক ডায়াস্টোলিক সিস্টোলিক ডায়াস্টোলিক
২০-২৯ ১২৪.০ ± (১৩.২) ৭৭.০±(৯.৫) ১১৬.৫±(১১.৬) ৭৩.০±(৯.৪)
৩০- ৩৯ ১২৬.৫ ±(১৩.৯) ৭৯.৫± (১০.০) ১২২.০±(১৪.০) ৭৬.০±(১০.৪)
৪০-৪৯ ১২৯.৫ক্ট (১৬.০) ৮১.৫ক্ট (১০.২) ১২৯ক্ট(১৮.৩) ৮১.০ক্ট(১১.১)
৫০-৫৯ ১৩৬.৫ক্ট (১৯.০) ৮৩.৫ক্ট (১১.৪) ১৩৮.০ক্ট (২১.৪) ৮৪.০ক্ট (১২.০)
৬০-৬৯ ১৪২.৫ক্ট (২৩.৫) ৮৪.০ক্ট (১১.১) ১৪৯.০ক্ট (২৫.৭) ৮৫.০ক্ট (১৩.৪)
৭০-৭৯ ১৪৫.৫ক্ট (২৪.০) ৮১.৫ক্ট (১৪.১) ১৫৮.৫ক্ট (২৬.০) ৮৪.৫ক্ট (১৪.২)
৮০-৮৯ ১৪৫.০ক্ট (২৫.০) ৮০.৫ক্ট (১২.৪) ১৫৫.৫ ক্ট(২৮.০) ৮২.৫ক্ট (১৫.২)
এক্ষেত্রে বন্ধনীর মধ্যে থাকা সংখ্যাটি কম বা বেশি হলেও তাকে স্বাভাবিক বলেই ধরতে হবে। অর্থাৎ ২০ থেকে ২৯ বছরের কোনো পুরুষের সাধারণ সিস্টোলিক চাপ ১২৪। তবে তা যদি ১১০.৮ বা ১৩৭.২ হয় সেটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক কোনো লোকের সিস্টোলিক চাপ ১৪০- ১৫০ মিলি ডায়াস্টোলিক চাপ ৯০ মি.মি. পারদ স্তম্ভের চাপের বেশি হলে তাকে উচ্চরক্তচাপ (High Blood Pressure) বলা হয়। অনুরূপভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সিস্টোলিক প্রেসার ১০০ মি.মি. ও ডায়াস্টোলিক ৫০ মি.মি.-র কম হলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ (Low Blood Pressure) বলে। তবে এর পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই।
আমাদের শরীরের বিভিন্ন বিষয় এই রক্তচাপের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। আমরা আগেই জেনেছি স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের হৃৎপিন্ডের স্পন্দন হার প্রতি মিনিটে ৭২ বার। যদি কোনো কারণে এই হার্টরেট বেড়ে যায় তবে সিস্টোলিক চাপ কমে আসে, কিন্তু ডায়াস্টোলিক চাপ বেড়ে যায়। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ পুরুষের রক্তের পরিমাণে স্বাভাবিকভাবে ৫.৫ লিটার ও স্ত্রীলোকের প্রায় ৫ লিটার। কারো যদি এই পরিমাণ বাড়ে তবে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক উভয়চাপই বৃদ্ধি পাবে। কারণ যখন রক্তের পরিমাণ বেশি থাকে তখন শিরা বা ধমনীর মধ্য দিয়ে বেশি পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত হয়, তাই ধমনীর প্রাচীরের গায়ে বেশি চাপ বাড়ে।
হৃৎপিন্ডের কাজ শুধু শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত পৌঁছে দেওয়াই নয়, প্রাণীর দেহে সঠিক রক্তচাপ বজায় রাখারও চেষ্টা করা। শিরা-ধমনীর দেওয়ালের স্থিতিস্থাপকতার ওপর রক্তের চাপ অনেকটা নির্ভর করে। কচিকাঁচা বয়সে ধমনীর প্রাচীর খুবই স্থিতিস্থাপক হয়। সে কারণে বেশি পরিমাণ রক্ত হৃৎপিন্ড থেকে নির্গত হলে ধমনীগুলি সহজেই প্রসারিত হয় ও কম পরিমাণে সংকুচিত হয়। বৃদ্ধ বয়সে মন ও শরীরের মতো ধমনীগুলি শিথিল ও অসাড় হয়ে আসে। সে সময়ে শিরা ও ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে না। তাই বৃদ্ধ লোকের রক্তের চাপ স্বভাবতই বেশি থাকে।
মানুষের ক্ষেত্রে রক্তচাপ মাপা হয় তিনটি পদ্ধতিতে- (১) শ্রুতি নির্ভর পদ্ধতি বা অ্যাসকালটেটরি মেথড (Auscultatory Method), (২) স্পন্দন পদ্ধতি বা প্যালপেটরি মেথড (Palpatory Method), (৩) দোলন পদ্ধতি বা অসিলেটরি মেথড (Oscillatory Method), এসবের মধ্যে অ্যাসক্যালটেটরি পদ্ধতি সবচেয়ে প্রচলিত।
অ্যাসকালটেটরি পদ্ধতিতে দু’টি যন্ত্র একই সঙ্গে ব্যবহার হয়। একটি হ’ল স্ফিগমোমনোমিটার, অন্যটি বক্ষবীক্ষণ যন্ত্র বা স্টেথোস্কোপ (Stethoscope)। শোয়া, বসা বা দাঁড়ান অবস্থায় রক্তচাপ মাপা যায়; তবে বিভিন্ন অবস্থায় রক্তচাপের কিছুটা তারতম্য চোখে পড়ে। কোনো ব্যক্তিকে শুইয়ে দিয়ে তার হৃৎপিন্ডের সমতলে স্ফিগ্মোমনোমিটার রাখা হয়। তারপর ঊর্ধ্ববাহুতে যন্ত্রের কাফ (Cuff) বাঁধার পর স্টেথোস্কোপের চেস্টপিস ব্রেকিয়াল ধমনীর (Brachial Artary) ওপর রেখে, কাফের অভ্যন্তরে বাতাসের চাপ বাড়ানো হয়। এই চাপ ২০০ মিলিমিটার বা তার বেশি হবে। এই অবস্থায় ধমনীর সংকোচন ঘটে ও রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এবার বায়ু পাম্পের স্ত্রুটি ধীরে ধীরে খুললে পরপর কতগুলি শব্দ শোনা যাবে। প্রথমেই শোনা যায় দরজার টোকা দেওয়ার মতো শব্দ (Tapping Sound)। এই শ্রবণযোগ্য শব্দ ঠিক যেখানে শোনা গেল সেটি হ’ল সিস্টোলিক চাপ। এই ট্যাপিং শব্দ সিস্টোলিকের নিচে ১৫ মিলিমিটার পারদচাপ শোনা যায়। এরপর স্ত্রু ঘুরিয়ে কাফের বাতাসের চাপ কমালে টোকা দেওয়ার শব্দটি আর পাওয়া যায় না, পরিবর্তে কানে আসে ঘর্ঘর শব্দ (Murmur)। এটিও ১৫ মি.মি. পারদচাপে বিস্মৃত। তৃতীয় পর্যায়ে যে ধ্বনি শোনা যায় সেটা অনেকটা ঘন্টা বাজার মতো ঢং-ঢং আওয়াজ (Gong Sound)। একেবারে শেষ পর্যায়ে স্টেথোস্কোপে সব শব্দ দ্রুত চাপা পড়ে। স্ফিগ্মোমনোমিটার যন্ত্রে এ সময়ে চাপ থাকে, সেটাই ডায়াস্টোলিক চাপ অর্থাৎ ডায়াস্টোলিকের পর আর কোনো ধ্বনি শোনা সম্ভব নয়।
ধরা যাক, কোনো রোগীর রক্তচাপ মাপার সময় শ্রবণযোগ্য শব্দ শোনা গেল ১৫০ মি.মি.এ আবার হঠাৎ শব্দ চাপা পড়া শুরু করলো ৯০ মি.মি.-তে। তবে সেই ব্যক্তির রক্তচাপ হবে ১৫০/৯০। এটিকে ১৫০/৯০ mm of Hg. এই ভাবেও লেখা হয়ে থাকে। প্যালপেটরি বা স্পন্দন পদ্ধতিতে শ্রুতিনির্ভর পদ্ধতির মতো স্টেথোস্কোপের ব্যবহার হয় না। বায়ুর চাপ মুক্ত করার সময় রেডিয়াল আর্টারিতে আঙ্গুল রেখে নাড়ী দেখা হয়। যে মুহুর্তে নাড়ীর স্পন্দন বা পাল্স অনুভূত হয় সেটাই মনোমিটার সিস্টোলিক প্রেসার। এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে অসুবিধা হ’ল- এভাবে ডায়াস্টোলিক চাপ মাপা যায় না।
মানুষের সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক চাপের মধ্যবর্তী স্থানে পারদ স্তম্ভই হোক বা অ্যানিয়েড গেজের কাঁটাই হোক তা সরল দোল গতিতে ওঠা-নামা করতে থাকে। দোলন পদ্ধতি বা অসিলেটরি মেথডে এই নড়াচড়া দেখে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক প্রেসার নির্ণয় করা হয়। তবে এটাতে অ্যাসকালটেটরি পদ্ধতির মতো সুক্ষ সঠিক ফল পাওয়া যায় না।
ধমনীর মতো শিরার চাপও মাপা হয়। বিশেষত যখন হৃৎপিন্ডের দক্ষতা পরিমাপের প্রয়োজন হয়। ওপেন হার্ট সার্জারির সময় এসব করা হয়। প্রবহমান রক্ত শিরার প্রাচীরে যে পার্শ্বচাপ দেয় তাকেই শিরা চাপ বা ভেনাস প্রেসার (Venous Pressure) বলে। কোনো ব্যক্তিকে শুইয়ে তার হাতের কাছে অ্যান্টিকিউবিটাল শিরাতে (Anticubital Vein) একটি সিরিঞ্জের সূঁচ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সিরিঞ্জের সঙ্গে খাড়াভাবে লাগানো থাকে এক মিটার লম্বা কাচের সরু নল। এই নলের মধ্যে বিশুদ্ধ জল রাখা হয়। নলের ভেতর জলস্তম্ভের উচ্চতা থেকে শিরার চাপ বোঝা যায়।
হৃৎপিন্ড থেকে যত দূরে যাওয়া যায় ধমনীর চাপ ততই কমতে থাকে, আর শিরা হৃৎপিন্ডের যত কাছে আসে শিরার ভেতরে রক্তচাপ তত বাড়তে থাকে। হ্যাঁ, এই চাপের তারতম্যের ফলেই রক্ত প্রাণশক্তি নিয়ে ছুটে বেড়ায় শিরা-জালক-ধমনীর পথ ধরে।