ও নেতাবাবু, ও মন্ত্রীমশাই; ডাঃ পার্থপ্রতিম। উত্তরবঙ্গ সংবাদ; ৮ এপ্রিল ২০০৬; শনিবাসর এ প্রকাশিত
এমনিতে বৈশাখ। রৌদ্ররোষ। তার ওপর ভোটের গরমা-গরম। এই সময় ফুল নেতা-হাফ নেতা, কোয়ার্টার নেতাদের সুস্থতা কামনা করে কিছু পরামর্শ দিলেন ডাঃ পার্থপ্রতিম।
পাঁচ বছর যারা আরাম আয়েস করে কাটিয়েছেন, এখন তাঁরাই ঘুরছেন জনতার দ্বারে দ্বারে। এই বাড়তি পরিশ্রম শরীর ও মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ সময় নেতা-মন্ত্রীদের সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় ফেলতে পারে সর্দি-কাশি। যখন আপনি ঘেমে-নেয়ে একসা হয়েছেন, সে সময়ই ঠান্ডা জল বা শরবত খাবেন না। কিছুক্ষণ থিতু হয়ে বসুন। ঘাম শুকোতে দিন। তারপর জল-শরবত খান। তবে খাদ্য পানীয় বেশি ঠান্ডা না হওয়াই ভালো। রোদে বের হলে সবসময় ছাতা ব্যবহার করবেন। এ সময় সানস্ট্রোকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সকালবেলায় বেরনোর আগে স্নান করে নিন। জল যেন বেশি ঠান্ডা না হয়। সাধারণভাবে ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রার জল এ সময় স্নানের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। স্নানের জল ঠান্ডা হলে প্রথমেই তা মাথায় ঢালবেন না। পায়ে ঢালুন, তারপর পেটে, শেষে মাথায়। ভোটের সময় নয়, সবসময় এই পদ্ধতিতে ঠান্ডা জলে স্নান করুন। সর্দি-কাশির সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ কমে যাবে। খালি পেটে চা-ভাজাভুজি না খাওয়াই ভালো। বিশেষত যাঁরা গ্যাস অ্যাসিডের উৎপাতে ভোগেন। খেলেও দুধ চা নয়, অল্প লবণ-চিনি দিয়ে লিকার তথা লাল চা খেতে পারেন। কফি না খাওয়াই ভালো, ঘুম কমে যায়। এ সময় স্বাস্থ্যের অবস্থাটা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত। আপনার যদি ব্লাড সুগার বা প্রেসারের অসুবিধা থেকে থাকে, তবে একদিন অন্তর একদিন প্রেসার চেক করান। সম্ভব হলে সপ্তাহে একবার ব্লাড সুগার পরীক্ষা করাবেন। খেয়ে দু-ঘন্টা পরে রক্ত দেওয়ার কাজ এই ব্যস্ততার মধ্যে সম্ভব নাও হতে পারে। তাই পোস্টপ্যানডিয়া (পিপি) না করে র্যানডম সুগার টেস্ট করান। বিশেষত যেসব নেতা-কর্মীর তনুর ওপর দিয়ে চল্লিশটি বেশি বসন্ত বয়ে গিয়েছে।
কোনোরকম শারীরিক অসুবিধা হলে গোপন করবেন না। মাথাঘোরা, বুকের বা-পাশে ব্যথা, বমি বমি ভাব দেখা দিলে আশেপাশে থাকা সহকর্মীকে সঙ্গে সঙ্গে জানান। গ্রীষ্মের তাপদাহে স্বভাবতই ঘাম বেশি হয়। সেই সঙ্গে শরীর থেকে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম লবণ বেরিয়ে আসে। এই অভাব পূরণ করার জন্য মাঝে মাঝে চিনি লবণের শরবত খেতে পারেন। কাজের চাপ বেশি থাকলে দুপুরে পেট ভরে খাবেন না। এসময় কার্বোহাইড্রেট বেশি রয়েছে, এমন খাবার দাবার খান। কার্বোহাইড্রেট সহজপাচ্য, হজম হতে কম জল লাগে। মূল খিদেটাকে চারটি ভাগে ভাগ করে নিন। এর চার ভাগের দু-ভাগ ভরান ভাত-সবজি এ ধরনের কঠিন খাদ্য দিয়ে। চার ভাগের এক ভাগ খাবেন তরল জাতীয় পদার্থ। বাকি এক ভাগ আপাতত খালিই থাক। ভোটের পর খুব পেটপুরে খাওয়া যাবে।
কোনো অবস্থাতেই দীর্ঘসময় মল-মূত্রের বেগ চেপে রাখবেন না। তাতে দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যাকে আমরা বলি ইন্টারন্যাল টক্সিমিয়া। হতে পার ইউরিনারি ট্রাক ইনফেকশন বা ইউ টি আই। প্রস্রাবে জ্বালা হতেও দেখা যায়। সুযোগ পেলেই জল খান। জল খেতে হবে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর বেশি জল না খাওয়াই ভালো। একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। সুযোগ পেলেই হাত, পা ছড়িয়ে বসে পড়ুন। শরীর সুস্থ রাখতে গেলে ঘুমটা খুবই জরুরি। রাতে যদি ঠিকমতো ঘুম না’হয়, তবে দিনের বেলায় যাত্রাপথে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। গাড়ি বা ট্রেনে চোখ মুখ বন্ধ করে দেহটাকে হেলিয়ে বিশ্রাম নিন।
হাতে নয়, প্রতিপক্ষের পিন্ডি চটকাতে হয় গলার জোরে। সে কারণে এই সময় সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে নেতাদের গলার স্বরতন্ত্রী বা ভোকাল কর্ডের উপর। অহেতুক চিৎকার করে বক্তৃতা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। জোরে চিৎকার না করাই ভালো। আপনার আস্তে কথা শ্রোতাদের কানে জোরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম বা মাইক তো রয়েইছে। স্পষ্টভাবে কাটাকাটা শব্দে বক্তব্য রাখুন। খামেখা উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। কারণ, আপনার লক্ষ্য তো শ্রোতাদের উত্তেজিত করা। বক্তব্য আতি নাটকীয়তা আনতে যাবেন না। এতে মনের ওপর চাপ বাড়ে। তাছাড়া জনগণও আপনার নাটক বুঝে যেতে পারে। প্রতি রাতে শোওয়ার আগে উষ্ণ নুন জলে গার্গল করুন। গলা ব্যথা থাকলে গরমজলে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট ফেলে গার্গেল করতে পারেন। গার্গেলের সময় গলায় মাফলার বা হালকা কাপড় জড়িয়ে নেবেন। গার্গল করার পর একঘন্টা পর্যন্ত কথা বন্ধ রাখুন। গলাভাঙা অর্থাৎ স্বর বসে যাওয়ার অসুবিধা দেখা দিলে হোমিও ওষুধের সাহায্য নিতে পারেন। কস্টিকাম-৩০, অ্যাকোনাইট ন্যাপ্-৩০ বেশ ভালো কাজ দেয়।
পুঁইডাঁটা, সজনেডাঁটাসহ আঁশওয়ালা শাকসবজি এবং ফল নিয়ম করে খেয়ে যান। আপনাকে যদি প্রকৃতির ডাকে বারবার ছোটোঘরে ছুটতে হয় তবে রণাঙ্গণে বিরোধীরা ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে দিতে পারে। পাতলা পায়খানা শুরু হলে প্রথমেই অ্যান্টিডাইরিয়াল ট্যাবলেট-ক্যাপসুল খাবেন না। এতে পায়খানা বন্ধ হলেও শারীরিক অস্বস্তি বাড়তে পারে। পরিবর্তে এনজাইম জাতীয় ওষুধ খান। খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নেবেন। আন্তরিকতা দেখাতে গিয়ে বা ভোটারের মন জয় করতে এ বাড়ি সে বাড়িতে যখন তখন গুরুপাক কোন জিনিস খাবেন না। জোরা-জুরি করলে বলুন, লেবু-চিনি-নুন জলের শরবত দিন অথবা পুদিনার জল।