সাত রঙের মেলা

সাত রঙের মেলা

সাত রঙের মেলা; ডাঃ পার্থপ্রতিম; ২৬ ডিসেম্বর, সোমবার ১৯৯৪, পৃষ্ঠা- তিন; দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত

বিজ্ঞান মানেই জটিল সব সূত্রের ঝামেলা। এ ধারণাটা আদৌ ঠিক নয়। বিজ্ঞান মানেই যুক্তি আর প্রমাণ। এই যুক্তি আর প্রমাণ খুঁজতে গিয়ে অনেক মজার মজার সব পরীক্ষা চলে আসে, যা কি না সবাই হাতে-নাতে করতে পারে। আর এই হাতে-নাতে করতে পারলেই বিজ্ঞানের মজা খুঁজে পাওয়া যায়। এই সমস্ত মজার হদিশ দিয়েছেন -পার্থপ্রতিম।

সাত রঙের মেলা
স্যার আইজ্যাক নিউটনের সেই বিখ্যাত পরীক্ষাটি মনে আছে? সাদা আলোকে প্রিজমের মধ্য দিয়ে পাঠিয়ে তিনি সাত রঙের আলোর খেলা দেখিয়েছিলেন। হ্যাঁ, এভাবেই স্যার নিউটন প্রমাণ করেছিলেন---সাদা আলো সাতটি রঙের সমষ্টি।
    হাতের কাছে প্রিজম না পেলেও এরকমই একটি পরীক্ষা তোমরা সহজেই করতে পারো। এর জন্য লাগবে একটি টর্চ লাইট, একটি আয়না ও একবাটি জল।
    প্রথমে আয়নাটিকে ছবির মত জলতলের সঙ্গে ৩০ ডিগ্রি কোণে রেখে দাও। তারপর ঘরের জানালা দরজা বন্ধ করে ঘরটিকে অন্ধকার করে ফেল। এবার আয়নাতে টর্চের আলো ফেললেই দেখবে ঘরের ছাদে বা সিলিং-এ বিভিন্ন রঙের আলোর মেলা। এখানে জলে ঢাকা আয়নাটি প্রিজমের মতই কাজ করছে। দূর আকাশে রামধনু এভাবেই রঙ ছড়ায়।


সহজেই উপবৃত্ত
তোমরা তো জান যে, বিভিন্ন গ্রহগুলি সূর্যের চারধারে বৃত্তাকার পথে ঘোরে না। এরা উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। শুধু এ ক্ষেত্রে কেন? পরমাণুর ইলেকট্রন কণাগুলিও তার নিউক্লিয়াসের চারপাশে উপবৃত্তাকার কক্ষে ঘোরাফেরা করে। তোমরা পেনসিল কম্পাসের সাহায্যে সহজেই বৃত্ত আঁকাতে পারো। কিন্তু উপবৃত্ত আঁকাটা একটু কঠিন।
হ্যাঁ, উপবৃত্ত বা ইলিপস আঁকার একটি সহজ পদ্ধতি তোমাদের শিখিয়ে দিচ্ছি। প্রথমে কাগজের ওপর দু’টি পিন গেঁথে নাও। তারপর একটি সুতার দু’প্রান্ত বেঁধে পিনদুটির ওপর দিয়ে ঢুকিয়ে দাও। এবার ছবির মত একটি পেনসিলের সাহায্যে সুতাটিকে টান টান করে ধর। এখন পেনসিলটি ঘোরালেই তোমরা একটি উপবৃত্ত পেয়ে যাবে।
এটি হওয়ার কারণ হল উপবৃত্তের দু’টি নাভি বা ফোকাস থেকে তার পরিধির যে কোন বিন্দুতে দু’টি রেখা টানলে তার যোগফল সবসময় সমান থাকে। এখানে AC  ও BC  রেখা দুইটির দৈর্ঘ্যের যোগফল সর্বদা একই থাকবে। পিন দু’টিকে পরস্পরের কাছে বা দূরে আনলে উপবৃত্তের আকার পাল্টে যাবে। পিন দু’টি খুব কাছাকাছি রাখলে উপবৃত্তটি হয়ে যাবে একটি বৃত্ত।

ঘড়ি হল একটি কম্পাস    
হ্যাঁ, আলো ঝলমল দিনে তুমি তোমার হাতঘড়িটিকে কম্পাস হিসাবেও ব্যবহার করতে পারো। প্রথমে ঘড়ির ঘন্টার কাঁটাটি সোজাসুজি সূর্যের দিকে রাখ। এবার ঘন্টার কাঁটা ও ১২টার দাগের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে একটি রেখা কল্পনা কর। এই রেখার ওপরের অংশটি দক্ষিণ ও নিচের অংশটি উওর দিক নির্দেশ করবে।
    মনে কর, তোমার ঘড়িতে এখন সকাল ১০টা বেজে ১০ মিনিট হয়েছে। তুমি ঘন্টার কাঁটাটিকে ছবির মত সূর্যের মুখোমুখি রেখে ১১টার  দাগ ও ঘড়ির কেন্দ্র দিয়ে মনে মনে রেখ টানলেই সাঠক উওর ও দক্ষিণ দিকের হদিস পেয়ে যাবে। এটি হওার পেছনে আসল কারণ হল পৃথিবীর উওর গোলার্ধের কোরস্থানে ঠিক দুপুর বেলায় সূর্য দক্ষিণ দিকে থাকে। সে সময়ে সূর্য স্থানের মধ্যরেখার ওপর লস্বভাবে কিরণ দেয়।
তুমি যদি দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো দেশে যেমন অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে যাও, তখনও এভাবেই দিক বুঝতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে ১২টার দাগটিকে সূর্যের সোজাসুজি রেখে, ঘন্টার কাঁটা ও ১২টার দাগের মধ্য দিয়ে একটি রেখা কল্পনা করতে হবে। রেখার ওপর অংশটি উওর ও নিচের অংশটি দক্ষিণ দিক নির্দেশ করবে।    
 

Join our mailing list Never miss an update