গনেশের দুধ খাওয়া; ডাঃ পার্থপ্রতিম; ৩০ অক্টোবর ১৯৯৫; দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত
দেব-দেবীর মূর্তি সাধারণত তৈরি হয় মার্বেল পাথর দিয়ে আর বেসাল্ট(Basalt) শিলা দিয়ে শিবলিঙ্গ বানান হয়। মার্বেল পাথর চুনাপাথরের মত পাললিক শিলার পরিবর্তিত রূপ। এর রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (CaCO3)। আর্কিয়ান ও টার্শিয়ারি যুগে অর্থাৎ ৬ থেকে ৯ কোটি বছর আগে চুনাপাথরগুলি ভূত্বকের চাপের ফলে মার্বেল পাথরে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। মধ্যপ্রদেশের ভেরাঘাট, বেতুল, নরসিংহপুর, ছিন্দোয়ার অঞ্চলে ও রাজস্থানে যে ভাল মানের মার্বেলপাথর পাওয়া যায় সাধারণত সেগুলি দিয়েই দেবদেবীর মূর্তি তৈরি।
বেসাল্ট অতি ক্ষারকীয় আগ্নেয়শিলা। এর মধ্যে সিলিকার অংশ থাকে ৪৫ শতাংশের কম ও অ্যালুমিনিয়াম, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি মৌলের ক্ষারকীয় অক্সাইড (Basic oxide) থাকে ৫৫ শতাংশের বেশি। তা ছাড়া বেসাল্ট জাতীয় শিলাগুলি সমআকৃতির কণা (Unigranular) দিয়ে তৈরি। তাই কণাগুলির মধ্যবর্তী ফাঁক (Intra-granular space) সাধারণত বেশি থাকে। শুধু দুধ নয় যে কোন কম ঘনত্বের তরলপদার্থ এরা শোষণ করতে পারে, যতক্ষণ না শিলাটি সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ কণাগুলির ফাঁক ভরে যাচ্ছে।
দুধ কিছুটা আম্লিক প্রকৃতির (Acidie) তাই পাথরের ক্ষারকীয় অক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়ক হিসেবে বিক্রিয়া করে। মার্বেল পাথরের সঙেগ দুধ বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস (CO2) উৎপন্ন করে। এ ছাড়া ভেজা মূর্তির ক্ষেত্রে তরলের পৃষ্ঠটান (Surface tension) দুধকে সবদিক দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়তে সাহায্যে করে। তবে এ সব ক্ষেত্রে দুধ ঢালতে হবে খুবই ধীর গতিতে অতি অল্প পরিমাণে।
দেবদেবী ও শিবলিঙ্গের দুগ্ধপান একনাগাড়ে বেশিদিন চালানো যাবে না। কারণ, দু-একদিনের মধ্যেই পাথরটি সম্পৃত্ত অবস্থায় পৌঁছে যাবে ও বিক্রিয়া সাম্যবস্থায় আসবে।