কিরাত ভূমি জলপাইগুড়ি জেলা সংকলন (দ্বিতীয়খন্ড), ডিয়ার প্রতিবেদনটি লিখেছেন ডিয়ার এর সম্পাদক: দীপঙ্কর ঘোষ
ডুয়ার্সের সাধারণ মানুষের মন থেকে কুসংস্কার দূর করা পারিপার্শ্বিক সমাজকে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতন করার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে তোলা হয় বিজ্ঞান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী ‘ডুয়ার্স এক্সপ্লোরেশান অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট রিভেলি’’ (ডিয়ার)। ১৯৯১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট অনুসারে সরকারী নথিভুক্ত সংস্থার স্বীকৃতি পায়।
‘ডিয়ার’- এর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই, ১৯৯৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘বিজ্ঞান প্রযুক্তি দপ্তর’’ ও ‘‘এন. ই. এস.” এর সাথে যৌথ উদ্যোগে ‘ডিয়ার’ করেছে পতঙ্গ ও পরিবেশ বিষয়ক কর্মশালা। ১৯৯৮ সালে কলকাতার ঐতিহ্যমন্ডিত ভারতীয় যাদুঘর ‘ডিয়ার’-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কলকাতা থেকে ছুটে এসেছে, তাদের পুরাতাত্ত্বিক সম্ভার নিয়ে। ১৯৯৮ সালে ‘ডিয়ার’- এর ব্যবস্থাপনায় ডুয়ার্সের কুড়িটি (২০) চা বাগিচার স্বাস্থ্য কর্মীরা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য কলকাতায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
জ্যোর্তিবিজ্ঞান ও মহাকাশ বিজ্ঞান হল পৃথিবীর প্রাচীনতম শাস্ত্র। মানব সভ্যতার বিবর্তনের সাথে এর নাড়ীর যোগ। আজও বহু মানুষ বিশ্বাস করে রত্ন ধারণে ভাগ্য পরিবর্তন হয়। ‘ডিয়ার’ এর সদস্যরা সে কারণেই মহাকাশকে এক অন্যতম বিষয় হিসাবে বেছে নিয়েছে। ডি.বি.আই.টি.এ- এর আর্থিক আনুকূল্যে ‘ডিয়ার’ এনেছে উত্তরবঙ্গের অন্যতম দূরবীন। দূরবীন, মডেল, চার্ট, ফটোগ্রাফ এসবের সাহায্য ‘ডিয়ার’-এর সৈনিকেরা বোঝান-বিজ্ঞানের কোন সূত্র মেনে গ্রহ উপগ্রহ আবর্তন করে সূর্যের চারপাশে। এইভাবে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হচ্ছে-ভাগ্য নির্ধারিত হয় তার আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও কর্মের দ্বারা”।
গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে তাদের উপযোগী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘ডিয়ার ’ গ্রামীণ প্রযুক্তি (রুবাল অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজি) নিয়ে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে। ভারত সরকারের ‘কাপার্ট(কাউন্সিল ফর অ্যাডভান্স রুবাল টেকনোকলজি) ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের কাছ থেকে গ্রামীণ প্রযুক্তির উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছে ‘ডিয়ার’ -এর সদস্যরা।
মেটেলি, মোগলকাটা, নাথুয়া, বানারহাট... প্রভৃতি ডুয়ার্সের এই সীমাবদ্ধ ভূগোল ছাপিয়েও ‘ডিয়ার’ এর অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হয়েছে কোচবিহার ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়। সৃজনশীল কাজের সূত্র ধরেই নিবিড় যোগযোগ গড়ে উঠেছে বিভিন্ন নামী সংগঠনের সঙ্গে। ভারত সরকারের বিজ্ঞানপ্রযুক্তি মন্ত্রক, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন ও পরিবেশ দপ্তর, ইউনাইটেড ন্যাশনস চিল্ড্রেনস ফান্ড (UNICEF), জার্মান অ্যামবেসি, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি, ফসেট (FOCET) ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার ইন্ডিয়া (WWF), ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলেন্টারি হেলথ অ্যাসোসিয়েশন (WBVHA), দি কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান অ্যামেচার অ্যাস্ট্রোনমারস, পুনে আরও বহু সংস্থার সঙ্গে রয়েছে ‘ডিয়ার’- এর নিয়মিত যোগাযোগ।
‘ডিয়ার’- এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ডাঃ পার্থপ্রতিম চিকিৎসক জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে ছুটে যান গ্রাম-গঞ্জে, স্কুল, ক্লাবে। উন্নত মানের কালার ট্রান্সপেরেন্সি প্রোজেক্টারের সাহায্যে চারদেওয়ালের মাঝে তৈরি করেন আকাশভরা সূর্য তারা। সঙ্গে থাকে আকাশ বিষয়ক গান ও আবহসঙ্গীত আর সুললিত ভাষ্য। ডাঃ পার্থপ্রতিমের ভাষায় আকাশের বিশালতা ধ্বংস করতে পারে আমাদের মনের কোনের সব দীনতা লোভ লালসাকে। তাই আকাশকে হাতিয়ার করে ‘ডিয়ার’ এর সদস্যরা খুন করতে চায় সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ, আত্মপ্রেমকেন্দ্রিক মানসিকতাকে। সকলকে শোনাতে চায় বিশ্বপ্রাণের স্পন্দন।