রোগ নির্ণয়ে যন্তর মন্তর-২

 রোগ নির্ণয়ে যন্তর মন্তর-২

 কবিগুরুর খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থের সেই ডাক্তারের ছড়াটা মনে আছে ? না,  পাড়াতে আজ আর নাড়ী টেপা ডাক্তারের অতি উচু নাক দেখা যায় না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভিনব অবিষ্কারের ফলে ভোল পাল্টে যাচ্ছে পরিচিত দুনিয়ার। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে আসছে নিত্য নতুন অত্যাধুনিক উপকরণ। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বহু আধুনিক যন্তর- মন্তর আজ আমাদের দোরগোড়ায়।  ডাক্তারবাবুরা এখন হামেসাই এইসব  পরীক্ষার জন্য রোগী ও তার পরিবারকে পরামর্শ দেন। এই সব পরীক্ষা- নিরীক্ষার নাড়ী- নক্ষত্র আমাদের আমজনতাকে জানাতে কলম ধরেছেন  -ডাঃ পার্থপ্রতিম।

আলট্রাসনোগ্রাফি
    এটা হয়তো আপনারাও লক্ষ্য করেছেন; কিছু কিছু মশা আছে যারা চুপটি করে কামড়ে পালায়। আবার কিছু মশা কানের কাছে পোঁ - পোঁ করে শব্দ করে। আসলে কোন বস্তু যখন কাঁপে বা আন্দোলিত হয়  তখন তার ফলে সৃষ্টি হয় শব্দ তরঙ্গ । তবে সব শব্দ তরঙ্গ আমাদের কানে ধরা পড়ে না। সাধারণভাবে ২০ থেকে ২০,০০০ হার্জ এর মধ্যে থাকা শব্দ তরঙ্গ আমরা কানে শুনতে পাই। ২০ কিলো হার্জ কম্পাঙ্কে বেশী শব্দ তরঙ্গকে বলে শব্দোত্তর তরঙ্গ বা আলট্রাসাইন্ড। আলট্রাসাইন্ডকে কাজে লাগিয়ে শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের ছবি নেয়ার পদ্ধতি হচ্ছে আলট্রাসনোগ্রাফি বা সংক্ষেপে ইউ.এস. জি। সাধারণত ২ থেকে ১৮ মেগাহার্জ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় আলট্রাসনোগ্রাফিতে। এখন পর্যন্ত— আলট্রাসনোগ্রাফিকে একটি নিরাপদ পরীক্ষা বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ এক্স-রে এর মত কোন ক্ষতিকর প্রভাব নেই।
    আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবহার-
    দেহের কোন অংশের ব্যথা, ফোলা, সংক্রামণ বা ইনফেকশন, প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া, গল ব্লাডার ও কিডনিতে পাথর রয়েছে সন্দেহ হলে, গর্ভাবস্থায় ভ্রুণ বা শিশুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনে আলট্রাসনোগ্রাফি করা হতে পারে। অনেক সময় বায়োপসির জন্য গাইড হিসেবেও আলট্রাসনোগ্রাফির সাহায্য নেওয়া হয়। আলট্রাসনোগ্রাফি দেহের  বিভিন্ন অংশের করা হয়ে থাকে। যেমন- সম্পূর্ণ পেট বা হোল অ্যাবডোমিন (Whole Abdomen), ওপরের পেট বা আপার অ্যাবডোমিন(Upper Abdomen), কিডনি- মুত্রনালী ও মুত্রথলি একসাথে (KUB- Kidney, Ureter & Bladder),  লিভার- পিত্তনালী ও পিত্তথলি একসাথে (Hepatobiliary System), গর্ভস্থ ভ্রুণ ও মায়ের জননতন্ত্র পরীক্ষায় (Pregnancy/ Foetal) আরো বহু অংশে।
    প্রস্তুতি
    যদি রোগীর ওপরের পেট পরীক্ষা করতে হয়, তাহলে রোগীকে আট থেকে দশ ঘন্টা খালি পেটে থাকতে হবে। আর যদি কিডনি- মুত্রনালী ও মুত্রথলি একসাথে পরীক্ষা করে, তবে রোগীর মুত্রথলিতে প্রস্রাবের পূর্ণ চাপ থাকা দরকার। অর্থাৎ আলট্রাসনোগ্রাফি করার অনেকক্ষণ আগে থেকেই রোগীকে প্রস্রাব জেপে রাখতে হবে; মুত্রত্যাগ করা যাবে না। রোগীর পোশাক হবে ঢিলেঢালা আরামদায়ক। হাতে- কানে- গলায় কোনো অলঙ্কার রাখা চলবে না। পকেটে মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ঘড়ি না রাখাই ভালো।  
  

Join our mailing list Never miss an update