গড়গড়া ছিন্নমূল স্মৃতি; মঙ্গলবার ২৬ অক্টোবর ২০২১; আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত
দেশভাগ। ছিন্নমূল হয়ে যাওয়া। বারবার ফিরে আসে স্মৃতিতে। উৎসবে সেই স্মৃতি আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। বানারহাটের চিকিৎসক পার্থপ্রতিম তাঁর বাবার মুখে শুনেছিলেন, প্রাক-স্বাধীনতা কালে তাঁদের ভিটেমাটি ছিল খুলনা শহরে। দুর্গাপুজোর সময় তাঁদের বাড়িতে সাজো-সাজো রব পড়ে যেত। বৈঠকখানায় ফরাস পাতা হত। জমে উঠত আড্ডার আসর। বিভিন্ন গড়গড়ায় সাজা হত তামাক। তারপর একদিন দেশভাগের ক্ষত নিয়ে স্বাধীনতা এল। দেশ ছাড়লেন পার্থপ্রতিমের পূর্বপ্রজন্ম। সে সময় তাঁর ঠাকুমা প্রভাবতী দেবী সঙ্গে নিয়ে আসেন তামাক রাখার ছোট্ট ডাবরটি। সঙ্গে পরিবারের ধূমপানের উপকরণ রাখার জার্মান সিলভারের বাক্সটিও। সেই ডাবর আর বাক্স আজও রয়েছে পার্থপ্রতিমের কাছে। সঙ্গে সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গড়গড়া বা হুঁকো। কাঠ, পিতল, কাচ, কাঁসার তৈরি বা রুপোর আস্তরে মোড়া এই সামগ্রীগুলির কোনওটি বড়, কোনওটি ছোট। সবচেয়ে বড় গড়াগড়াটির উচ্চতা ৫৫ সেন্টিমিটার। এই গড়গড়া তৈরি কাঠ ও পিতল দিয়ে। কাচ ও এবোনাইটের তৈরি সবচেয়ে ছোট গড়াগড়াটির উচ্চতা ১৩ সেন্টিমিটার । এই সব গড়াগড়া সংগৃহীত হয়েছে বেনারস, মির্জাপুর, দিল্লি প্রভৃতি জায়গা থেকে। রয়েছে বিভিন্ন রকম সুগন্ধি তামাকের সংগ্রহও। যার মধ্যে আছে ঢাকার বসুন্ধরা ‘শিশার’র ‘পানরসিলা’, মুম্বইয়ের এ কে ফজলানির ‘ডাবল অ্যাপেল’, হুক্কাহোলিকের ‘কমিশনার’ পাবনার ‘আফ্রিন’। রয়েছে নাগপুরের তামাকবিহীন ধূমপানের মশলাও। পার্থপ্রতিম বলছেন, ‘‘পুজোর মরশুম এলেই এই গড়গড়ার সঙ্গে ছিন্নমূল বাঙালির ফেলে আসা দিনগুলিতে ফিরে যাই। এক ধরনের বিষণ্নতা আনমনা করে দেয়।’’