করোনায় মৃতদের ধর্মমত নির্বিশেষে দাহ করা হোক

করোনায় মৃতদের  ধর্মমত নির্বিশেষে দাহ করা হোক

করোনায় মৃতদের  ধর্মমত নির্বিশেষে দাহ করা হোক; -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ১৭ জুলাই ২০২০; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
ফ্লু ভাইরাস কবর বা বেরিয়াল গ্রাউন্ডের ভিতর বহু বছর সক্রিয় থাকতে পারে। তাই রোগ মোকাবিলায় জাতিধর্মনির্বিশেষে দাহ করা হোক করোনার মৃতদের।
ঘটনাটি প্রায় ১২ বছর আগে। ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির গবেষণামূলক কাজের জন্য মৃত্যুর ৮৯ বছর পর মার্বেল পাথরে মোড়া সমাধি ভেঙে মার্ক সাইকেসের কফিন তুলে আনা হয়। মার্ক সাইকেস বহুমুখী প্রতিভার মানুষ, তিনি ব্রিটিশ ফৌজের জেনারেল সাংসদ, কূটনীতিবিদ্, যুক্তিতর্কে পারঙ্গম। ১৯১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্যারিসের  একটি হোটেলে স্প্যানিস ফ্লু-তে সংক্রামিত হয়ে মার্ক সাইকেসের মৃত্যু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্প্যানিস ফ্লু মহামারির আকার নিয়েছিল। সেই সময় যুদ্ধে ৯০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর স্প্যানিস ফ্লু-তে সংক্রামিত হয়ে ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।  এই ফ্লু ছিল করোনার  চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক। ব্রেকফাস্টের সময় যে মানুষটি হাসিখুশি সুস্থ-সবল, ডিনারের সময় তাঁর কফিন সাজানো হচ্ছে। এমনই মারাত্মক ছিল এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দাপট।

এ ধরনের বিভিন্ন ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ যে আবারও হবে, তা বহুদিন আগে থেকেই ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের মাথায় ছিল। ব্রিটেনে এই বিস্তর গবেষণাও চলছিল। স্যর মার্ক সাইকাসের কফিন তুলে পরীক্ষার বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন বিশ্ববরেণ্য ভাইরাস বিশেষজ্ঞ প্রফেসার জন সিডনি অক্সফোর্ড ও তাঁর সহযোগীরা।
অধ্যাপক জন সিডনি অক্সফোর্ড লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক ছিলেন। রেট্রোস্কিন ভাইরোলজি একটি ব্রিটিশ স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা। স্যর জন সিডনি অক্সফোর্ডের অনুপ্রেরণায় বিশ্বমানের এই গবেষণাকেন্দ্রটি গড়ে ওঠে।
যাইহোক, তাঁরা মার্কের দেহাবশেষ থেকে বেশ কিছু কোষ-কলার নমুনা নেন। তারপর ইস্ট ইয়র্কশায়ারের তাঁর কফিন আবার ভালোভাবে সমাধিস্থ করা হয়। যাঁরা ফ্লু ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে মারা যান তাঁদের দেহ কবরস্থ করলেও, দেহাবশেষে ভাইরাস কিছুটা হলেও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় জীবিত থাকে। আমরা অনেকেই জানি, ভাইরাস হল জীব ও জড়ের মাঝামাঝি অবস্থা। ভাইরাস যখন জড়বস্তু সংস্পর্শে থাকে তখন তা মৃত বা জড়ের মতো আচরণ করে। আবার সেই ভাইরাসটি যখন সজীব কোষে ঢুকে পড়ে তখন সে জীবের মতো আচরণ করে। অর্থাৎ জীবিত কোষের মধ্যে থাকা ভাইরাস শ্বাসপ্রশ্বাস, বংশবিস্তার সবই করে থাকে। উচ্চ তাপমাত্রায় ভাইরাসকে পুড়িয়ে ফেলাই ভাইরাস ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার।

সে কারণেই কবর বা সমাধিস্থ না করে করোনায় সংক্রামিত মৃতদের পুড়িয়ে ফেলাই এই মুহূর্তে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। এব্যাপারে জনসচেনতা গড়ে তোলার জন্য চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজকর্মীর পাশাপাশি মৌলবি, পুরোহিত, যাজক সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।
- ডাঃ পার্থপ্রতিম, বানারহাট, জলপাইগুড়ি।

Join our mailing list Never miss an update