ওদলাবাড়ি থেকে কুমারগ্রাম পর্যন্ত ডুয়ার্স ডে পালনের তোড়জোড় শুরু

ওদলাবাড়ি থেকে কুমারগ্রাম পর্যন্ত ডুয়ার্স ডে পালনের তোড়জোড় শুরু

ওদলাবাড়ি থেকে কুমারগ্রাম পর্যন্ত ডুয়ার্স ডে পালনের তোড়জোড় শুরু; অতীশ সেন; ৭ জানুয়ারি ২০১৪ মঙ্গলবার; উত্তরের সারাদিন পত্রিকায় প্রকাশিত
৬ জানুয়ারি: জানুয়ারির ১৪ তারিখ দিনটিকে ‘ডুয়ার্স ডে’ হিসেবে পালনের লক্ষ্যে এবারও তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। বিগত ২০১১ সাল থেকে বেসরকারি উদ্যোগে ওদলাবাড়ি থেকে কুমারগ্রাম সমস্ত ডুয়ার্স জুড়েই ‘ডুয়ার্স ডে’ পালিত হচ্ছে। ডুয়ার্সের বিভিন্ন ভাষাভাষি ও জনজাতির মানুষের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় করার লক্ষ্যেই এই আয়োজন। ডুয়ার্স ডে হিসেবে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু কর্মসূচিও।

উত্তরের মাথা তোলা মৌন হিমালয়, তার কোল বেয়ে আদিগন্ত। বিস্তৃত চা বাগিচার সবুজ গালিচা, অলস পায়ে হেঁটে চলা বুনো জন্তুর দল সহ আরও পরিচিত বহু নৈসর্গিক দৃশ্য নিয়ে এই ডুয়ার্স। ওদলাবাড়ি থেকে কুমারগ্রাম এই বাংলা দুয়ারের ছোট্ট ভূখন্ডে প্রায় ১৪৮ টি ভাষাভাষির মানুষ বাস করে। এতে রয়েছে টোটো, মেচ, রাভা, সাঁওতাল, মুন্ডা, অসুর, ডুকপা সহ আরও বহু আদিম জনজাতির বসতি। ইংরেজ আমলে এই অঞ্চলে চা বাগিচার গোড়াপত্তনের সাথে সাথেই ছোটনাগপুর, বিহার, ওড়িশা, নেপাল ও ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মসংস্থানের জন্য বহু মানুষ এই অঞ্চলে এসে পাকাপাকিভাবে ঘর বাঁধে। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন জাতি-জনজাতির মানুষ একে অপরের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে পরস্পরের আপদে-বিপদে শামিল হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন ঘটনার আবর্তে কিছুটা হলেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে এই অঞ্চলের সম্প্রীতি ও বিশ্বাসের বাতাবরণ। তাই ডুয়ার্সের সকল জাতি ও ধর্মের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে প্রথমবার ডুয়ার্স ডে পালনের কর্মসূচি নেওয়া হয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে সর্বজনীন উৎসব হয়ে উঠবে ডুয়ার্স ডে, এই আশা উদ্যোক্তাদের। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ১৮৬৪ সালের ১৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ সার্জেন্ট রেইনী প্রাথমিক সমীক্ষার পর ডুয়ার্স অঞ্চলের ভৌগোলিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারকে বিস্তারিত চিঠি লেখেন। এরপর থেকেই এই এলাকার প্রতি ব্রিটিশ শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়। ১৮৭৪ সালে গজলডোবায় প্রথম চা বাগিচা গড়ে ওঠে। তারপর থেকেই ডুয়ার্সের অর্থনৈতিক ভূগোল বদলাতে থাকে। সেই কারণেই ১৪ জানুয়ারি দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়। এই বছরও ডুয়ার্স ডে পালনের লক্ষ্যে গড়া হয়েছে ডুয়ার্স ডে উদযাপন কমিটি।

এই কমিটির সভাপতি রাজেশ প্রধান জানান, 'যে কোনো একটি জায়গায় অনেক টাকা খরচা করে বড়সড় অনুষ্ঠান করা আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরা চাই যেভাবে ডুয়ার্সের মানুষ দুর্গাপুজো, হোলি, ঈদ, করম, ফুলপাতি উৎসব পালন করে ঠিক সেইভাবে পারিবারিক উদ্যোগে সর্বত্রই ডুয়ার্স ডে পালিত হোক। এই উপলক্ষ্যে ডুয়ার্সের বিভিন্ন জায়গায় পদযাত্রা, রক্তদান শিবির, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।' রাজেশবাবু বলেন, 'আমরা ডুয়ার্সের সকল মানুষের কাছে অনুরোধ রাখছি যাতে তারা ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধে ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত নিজেদের বাড়ি, অফিস, মন্দির-মসজিদ-গির্জা-গুরুদ্বারাতে প্রদীপ, মোমবাতি, বিজলিবাতি জ্বালান।' উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সরকার জানান, নতুন করে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ডুয়ার্সে কিছুটা হলেও দেখা দিয়েছে। বর্তমান রাজ্য সরকারের এই প্রয়াসকে সফল করে তুলতে গেলে এই এলাকায় শান্তির বাতাবরণ বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। সেই কারণেই সকল জাতি ধর্মের মিলিত এক উৎসব হওয়া দরকার। ডুয়ার্স আঞ্জুমান কমিটির সভাপতি তথা সমাজসেবী রেজা করিম বলেন, 'পবিত্র ঈদ যেমন দীর্ঘ অনুশীলনের পর খুশীর তোফা নিয়ে আসে ঠিক সেভাবেই ডুয়ার্স দিবস আমাদের সবার কাছে নতুন আশার পয়গাম নিয়ে আসবে।'    

Join our mailing list Never miss an update