পরীক্ষাতে স্বাস্থ্যরক্ষা

পরীক্ষাতে স্বাস্থ্যরক্ষা

শুরু হয়ে গেল বোর্ড পরীক্ষা। অনেকের জীবনে এটাই প্রথম বড় পরীক্ষা। তাছাড়া যারা দিল্লী বোর্ডের অধীনে পড়ছো তাদের আবার সামনেই ফাইন্যাল পরীক্ষা। লিখিত হোক বা মৌখিক যে কোন পরীক্ষার সময় শরীর -স্বাস্থ্য ঠিক রাখা বিশেষ দরকার তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
    এধরনের বড় পরীক্ষার আগে স্বাভাবিকভাবেই ছেলে- মেয়েরা একটু মানসিক চাপের মধ্যেই থাকে। এই মানসিক চাপ তৈরী হয় আমাদের গুরু মস্তিস্ক বা সেরিব্রাল হিমোস্ফেয়ারের মধ্যে থাকা লিম্বিক জোনে। এই লিম্বিক অংশ হল আমাদের উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা, আশঙ্কা, আবেগ, দুঃচিন্তার উৎপত্তিস্থল। লিম্বিক জোন থেকে উৎকণ্ঠা তৈরি হলে আমাদের দেহের ভেতরে থাকা বেশ কিছু অন্তস্রাবী গ্রন্থি বা হরমোন্যাল গ্ল্যান্ড সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমাদের প্রতিটি বৃক্ক বা  কিডনির ওপরে থাকা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে অ্যাড্রিন্যালিন  ও নন- এপ্রিনেফ্রিনহরমোন নিঃসৃত হয়। এর প্রভাবে খিদে কমে আসা, হাত- পা ঘামে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা আরো কিছু অসুবিধা দেখা দিতে পারে। অ্যাড্রিন্যাল গ্রন্থির কর্টেক্স অংশ থেকে বেরিয়ে আসা গ্লুকোকর্টিকয়েড হরমোন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট বিপাকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের মনের বিভিন্ন অনুভূতির সাথে খিদে, তৃষ্ণা ও হজমের যে যোগসাজস আছে তা শরীরবিজ্ঞানীরা অনেক দিন আগেই ধরে ফেলেছেন। তাই মনের অবস্থা ও অনুভূতির ওপর নির্ভর করে যে খাদ্যবস্তু নির্ধারণ করা উচিত। ভারতের প্রাচীন জ্ঞান সম্পদ আয়ুর্বেদের গ্রন্থ ‘মাধবকর নিদান’ এ স্বাত্বিক, রাজসিক ও তামসিক খাদ্যবস্তুর বিস্তারিত শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে। পরীক্ষার সময় আয়ুর্বেদিক মতে স্বাত্বিক খাদ্য, যেমন- দুধ, মাখন, ফল ও সবজি, এসব টাটকা বা সদ্য রান্না করা খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত।  

    অনেক অভিভাবকেরা ভাবেন বাচ্চাটার পড়াশুনার চাপ- তাই শক্তি বল দরকার। এ ভেবে অনেকেই পরীক্ষার সময় ছেলেমেয়েদের ডিম, ছানা, মাছ, মাংস আর সব দামি দামি খাবার পেটপুরে খাওয়াতে শুরু করেন। ফল হয় উল্টো। এমনিতেই উৎকণ্ঠার সময় হাই ক্যালোরিটিক প্রোটিন সিন্থেসিস অর্থাৎ প্রোটিন থেকে অ্যামিইনো অ্যাসিড তৈরির প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। প্রোটিন প্রথমে পাকস্থলী, তারপর অগ্ন্যাশয় শেষে ক্ষুদ্রান্ত থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন উৎসেচকের প্রভাবে সরল হয়ে থাকে। প্রোটিন থেকে শুধু অ্যামিনো অ্যামাইনো অ্যাসিড নয়; পেপটাইড, নিউক্লিওটাইড পিউরিন, পেনটোজ ফসফেটে রূপান্তরিত হয়। এইসব জৈবযৌগগুলি দেহের বিভিন্ন কাজকারবার পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  পরীক্ষার উৎকণ্ঠাতে জটিল প্রোটিন হজমের ক্ষেত্রে দেখা দেয় গোলমাল। নিত্যদিন যেসব প্রোটিন কিশোর- কিশোরীরা খায় না  বা খেতে অভ্যস্ত নয়; তা খেলে মরার ওপর খাঁড়ায় ঘা-এর মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
অনেক মা- বাবা, অভিভাবককে দেখি দু’ই পরীক্ষার মাঝে টিফিন টাইমে  বাক্স ভরে সন্দেশ, কালাকান্দ, ডিম সিদ্ধ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। সুযোগ পেলেই ছেলেমেয়েদের ঠেসে ঠুসে খাওয়ান। অর্ধশিক্ষিত, উচ্চ মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মহিলাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশী দেখা যায়। তারা হয়তো ভাবেন ডিম, সন্দেশের শক্তিতে তাদের সোনামণি গড়গড় করে পাতার পর পাতা লিখতে থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই এক্ষেত্রে হিতের চেয়ে বিপরীত হয়।
    পরীক্ষার আগে বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রীরা ঘুমের সময় কমিয়ে পড়ার সময় বাড়িয়ে দেয়। পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়াশুনা করাটা তেমন কাজের হয় না। রাত জাগলে পারিপাক ও বিপাক ক্রিয়ার গোলমাল দেখা দেয়। আমাদের শরীরের ভেতর বেশ কিছু পেশী ও যন্ত্র রয়েছে যারা আমাদের ইচ্ছাধীন নয়; অর্থাৎ এরা স্বয়ংক্রিয়। এরা অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়। আমাদের প্রাকৃতিক ভূগোল ও পরিবেশের সাথে তারা তাল রেখে এই অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম কাজকারবার চালায়। আমরা ডাক্তারবাবুরা যাকে বলি বায়োলজিক্যাল ক্লক। অনিয়মিতভাবে রাত জাগলে সেই বায়োলজিক্যাল ক্লক -এর গন্ডগোল হয়। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। উৎকণ্ঠা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, ক্লান্তিভাব আরো বহু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। রাত জাগার চেয়ে রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে, খুব ভোরে উঠে পড়াশুনা করা উচিত।
 
   অনেকে ভাবেন- রাত জেগে পড়াশুনা করবো; আর দিনের বেলায় ঘুমিয়ে তা পুসিয়ে নেব। বিষয়টি তা নয়। স্নায়ু বিজ্ঞান বা নিউরোলজির দৃষ্টিভঙ্গিতে রাতের ঘুম ও দিনের ঘুমের মধ্যে বেশ তফাৎ রয়েছে। দিনেরবেলার ঘুমে রিম (REM)  বা র্যানপিড আইবল মুভমেন্ট বেশি হয় না বলে এই ঘুমে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র ঠিকমত বিশ্রাম পায় না। প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ ‘পবন স্বরদয়’ এ এবিষয়ে বহু তথ্য রয়েছে।
    কম ঘুমোনোর বিরূপ প্রভাব বুঝতে সবার আগে ঘুমের পিছনে যে বিজ্ঞানটি রয়েছে তা একটু দেখে নেওয়া যাক। যদিও প্রায় কিংবদন্তী বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন বলেছেন- ‘‘মানুষের জীবন কালে এক তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়েই কাটায়। তাই ঘুম হল সময়ের অপচয়।” তবে আধুনিক স্নায়ু বিজ্ঞানী বা নিউরোলজিস্টরা বলেছেন- ‘বিজ্ঞানী এডিসনের এই মন্তব্যের কোনরূপ যথার্থতা নেই।’ আগে অনেকে বলতেন যেমন আমরা খিদে পেলে খাই তেমনই ক্লান্ত হলেই ঘুমাই। পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে শরীরে যে কর্মশক্তি ক্ষয় হয় ঘুমের মাধ্যমে তাকেই আমরা পুনরুদ্ধার করি। কিন্তু বর্তমানে শরীর বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ আটঘন্টা ঘুমের মধ্য দিয়ে যে পরিমাণ শক্তি সংরক্ষিত করে তার পরিমাণ মাত্র ৫০ কিলো ক্যালোরি। অর্থাৎ দু-পিস পাউরুটিতে যে পরিমাণ শক্তি থাকে তা প্রায় ৫০ কিলো ক্যালোরির সমান। অর্থাৎ শক্তিক্ষয় রোধ করার জন্যই ঘুম হয়; তা নয়।
    মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ঘুমের প্রয়োজন। যেমন- বাক্শক্তি, আকর্ষণীয় বাক্শক্তি, উন্নত স্মৃতিশক্তি, বিভিন্ন উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশের জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরী। গবেষণা থেকে আরও কিছু মজার বিষয়ও জানা গেছে। ঘুমের সময় থাইরয়েড ও হাইপোথ্যালামস গ্রন্থির সঠিক নিঃসরণ হয়। এই দুটি গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে আসা হরমোন খিদে ও ওজন বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ আমরা যেটা প্রচলিত ভাষায় বলে থাকি- ‘শ্যামলী ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মোটা হয়েছে।’ ব্যাপারটা একেবারে উল্টো। সঠিকভাবে না ঘুমালে ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
 
   আমাদের এই ঘুম ৯০ থেকে ১২০ মিনিট পর পর চক্রাকারে চলতে থাকে। এই ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হল রিম বা র্যা পিড আইবল মুভমেন্ট। এই সময় চোখের অক্ষিগোলক নড়তে থাকে। দ্রুত নড়াচড়া করে। আরেকটি ঘুম হল নন-রিম। অর্থাৎ যে ঘুমের সময় চক্ষু গোলক তেমন নড়াচড়া করে না। নন-রিম ঘুমটি মোটামুটি ভাবে চারটি ধাপে হয়ে থাকে। প্রথম ধাপটি একেবারে ঘুমের শুরুতেই আসে। এই ধাপে আমরা থাকি আধো ঘুমে আধো জাগরণে। এই ঘুম থাকে খুবই হাল্কা। অল্প শব্দ বা ডাকাডাকিতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। শুয়ে পড়ার ১০ মিনিট পর্যন্ত এই ধাপটি চলে। তার পরের ১০ মিনিটে আমাদের শারীরবৃত্তীয় কিছু পরিবর্তন হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ও হৃদস্পন্দনের হার ধীরে ধীরে কমে আসে। এই অবস্থাটা আমাদের ঘুমের মধ্যে সবচেয়ে বেশিক্ষণ থাকে। এর পরে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ চলে। তৃতীয় ধাপে মস্তিষ্ক থেকে ডেল্টা তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। যা ইলেকট্রো ইনসিফেলোগ্রাম বা ই.ই.জি যন্ত্রে ধরা পড়ে। এই সময় শ্বাস-প্রশ্বাস অনেকটা হার্মোনিক মোশনে বা দোল গতিতে হাল্কা ছন্দে চলতে থাকে। হাত- পা বা বাইরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া একদম কমে যায়। অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে আমরা গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকি। এ সময় যদি কেউ জাগিয়ে দেয় তখন হঠাৎ করে আমরা খেই খুঁজে পাই না। পরিবেশের সঙ্গে মানাতে বেশ কয়েক মিনিট সময় লেগে যায়।  
    রিম ঘুম:- আমাদের প্রতি রাতে রিম ঘুম ৩-৫ টি পর্যায়ে হয়ে থাকে। আমরা ঘুমিয়ে পড়ার ৭০ থেকে ৯০ মিনিটের মধ্যে প্রথম ঘুমটা হয়। রিম ঘুমের সময় আমাদের শরীরে তেমন ভাবে চেতনা না থাকলেও আমাদের মস্তিষ্কে সেরিব্রাল হোমোস্ফিয়ার বেশ সক্রিয় থাকে। কোনো কোনো সময় এই সক্রিয়তা জাগ্রত অবস্থা থেকেও বেশি হতে পারে। এই সময় আমরা স্বপ্ন দেখি। ঘুম পরীর দেশ থেকে চলে যাই। স্বপ্নপুরীতে আমাদের চোখ নড়াচড়া করে বেড়ে যায় রক্তচাপ। কখনো কখনো শ্বাস-প্রশ্বাস জেগে থাকার মতো দ্রুত তালে চলতে থাকে। এই সময় শরীর একেবারে অসাড় হয়ে যায়। প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত গ্রস্ত রোগীদের যেমন তাদের হাতপায়ে সাড় বা অনুভূতি থাকে না; রিম ঘুমের সময়ও আমাদের অবস্থা একইরকম হয়। মশা কামড়ালে বা শরীরে হালকা স্পর্শ এলেও আমরা তা বুঝতে পারি না। স্নায়ু বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন আমাদের স্বপ্ন দেখার সময় যাতে অযথা বাধা সৃষ্টি না হয়, সেই কারণেই প্রাকৃতিকভাবে শরীর জুড়ে এই অসারতা নেমে আসে।
    পরীক্ষার সময় সাধারণত ছাত্র-ছাত্রীরা যে কাজটা করে থাকে তা হল ঘুমের সময় অতিরিক্ত কমিয়ে পড়ার সময় বাড়িয়ে দেওয়া। এর ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে তাদের স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার ওপর। ঘুম পেলে কেউ যদি বারবার চোখে জল ছিটিয়ে বা চা কফি খেয়ে ঘুম তাড়ানোর চেষ্টা করে তবে সব মিলিয়ে ফলাফল কখনোই ভালো হয় না। বুদ্ধিমত্তা, স্মৃতিশক্তি কমার সাথে সাথে পেটের গোলমাল ক্লান্তিভাব এইসব দেখা দেয়।

    আমাদের শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখার অন্যতম হাতিয়ার হল প্রতিদিনের খাদ্য খাবার সময়মতো সঠিক পরিমাণে খাওয়া। যারা জীবনের এই বড় পরীক্ষায় বসতে চলেছো তোমাদের জন্য একটু সহজ রুটিন করে দিলাম। ভোর পাঁচটা- সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠে পেটপুরে ১ লিটার জল খেতে হবে। যারা একবারে ১ লিটার জল খেতে পারবে না তারা ১ গ্লাস - ২ গ্লাস যতটা পার খালি পেটে জল খাবে। জল খাবার আধা ঘন্টা পর ১ কাপ লাল চার সাথে কিছুটা মুড়ি বা বিস্কুট খেতে পারো। মুড়ি হল সহজ প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড। তবে চায়ে কখনই দুধ দেওয়া চলবে না। আমাদের চায়ের মধ্যে বেশ কিছু অ্যান্টি-অক্সিজেন ও শরীরের প্রয়োজনীয় পদার্থ থাকে। এগুলি গা, হাত-পা ব্যাথা, অকারণ ক্লান্তি, ঘন ঘন সর্দিকাশি লাগার প্রবণতা আরও কিছু রোগ অসুবিধাকে প্রতিহত করে। চায়ের মধ্যে দুধ মিশিয়ে দিলে এই গুণাগুণগুলি নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া দেহের অ্যাসিডিটি ও অ্যালক্যালিটি (অম্ল ও ক্ষার) এর ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর থেকে গ্যাস অম্বল দেখা দিতে পারে।
    এরপর চা খাওয়ার দু থেকে আড়াই ঘন্টা পর ব্রেকফাস্ট করতে হবে। ব্রেকফাস্টের চার ঘন্টা পর অর্থাৎ বেলা ১ টার দিকে ভাত রুটি যে যেটা অভ্যস্ত সেটা খেতে হবে। অর্থাৎ বেশি বেলা করে লাঞ্চ করা চলবে না। দুপুরের খাবারে তেল মশলা কম দিয়ে রান্না করাই ভাল। এমনিতে গরম পড়েছে। তার মধ্যে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান খুব বেশি। তাই গ্যাস- অম্বল- পেটের গোলমাল এ সময় খুবই দেখা যায়। আগে থেকে সাবধান হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।
    দুপুরের খাওয়ার ৬ ঘন্টা পর অর্থাৎ সন্ধ্যায় ৬.৩০ টার সময় লাল চায়ের সাথে হালকা টিফিন করা যেতে পারে। সন্ধ্যার টিফিনও তেলে ভাজা না হয়ে; বিনা তেলে সেঁকা জিনিস হলেই ভালো। যেমন- পাউরুটি, টোস্ট (মাখন ছাড়া), মুড়ি, চিঁড়েভাজা হতে পারে। রাত্রি ১০ টার মধ্যেই রাতের খাবার বা ডিনার করে নিতে হবে। ঘুম এলে ঘুমিয়ে যাওয়াই ভাল। পরদিন উঠতে হবে সাত সকালে। শোবার আগে ১ গ্লাস হালকা গরম দুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে দুধটি হবে চিনি ছাড়া। এ সময় জল খেতে হবে বেশি পরিমাণে। জলটা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বেশি বেশি জলপান করতে হবে। সন্ধ্যার পর জলপানের পরিমাণ একটু কম থাকা দরকার।
    আগেই জেনেছি-পরীক্ষার সময় মানসিক চাপ ও উৎকণ্ঠা বেশি থাকে। তাই প্রাকৃতিক ভাবেই ঘুমের মাত্রা বেড়ে যায়। মস্তিষ্ক বিশ্রাম চায়। এই প্রয়োজনীয় বিশ্রাম মস্তিষ্ককে দিতে হবে। সামনে পরীক্ষা ঠিকই তবে লেখাপড়ার বিষয়টি এক নাগাড়ে না করাই ভাল। আধ ঘন্টা পড়ার পর ৫ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নেবে। এসময় দূরের কোন সবুজ গাছপালার দিকে তাকিয়ে থাকাটা চোখের জন্য ভালো। তা না হলে চোখের আইরিস পেশীর ওপর একনাগারে চাপ পড়লে তা থেকে মাথা ব্যাথা, মাথা ভার আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
    আরেকটি ব্যাপার প্রতিদিন নিয়ম মেনে স্নান করাটা খুব জরুরী। স্নান করার সময় অতিরিক্ত গরমজল ব্যবহার না করাই ভাল। সাধারণ তাপমাত্রার জল দিয়ে স্নান শুরু করার আগে জল ঢালতে হবে সবার আগে শরীরের দূরবর্তী অঙ্গে। যেমন- পায়ে হাতে জল প্রথম ঢালতে হবে। তারপর পেটে ও পিঠে জল ঢালার পরেই মাথায় জল ঢালা উচিত। ঠান্ডা জল প্রথমেই মাথায় ঢালা যাবে না। যারা শাওয়ারে বা বালতি মগে স্নান করে তারা এই নিয়মগুলি মেনে চললে হঠাৎ করে সর্দি-কাশির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।
    তোমরা কতটা সময় পড়াশুনা করলে, কত সময় ধরে ইলাসট্রেশন করলে -সেটা কিন্তু একমাত্র কথা নয়। আসল কথা হলো পরীক্ষার খাতায় উত্তরগুলি ঠিকঠাকভাবে লিখতে পারলে কী না ? সারা ম্যাচে বলটা তোমাদের পায়েই বেশিক্ষণ থাকলো, বেশ কয়েকটা সটও মারলে, তাতে কিন্তু হবে না বন্ধু ! বলটা কার নেটে কয়বার জড়ালো হিসাবটা হবে তার। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান এর সাথে সাথে সুস্থু শরীর ও সতেজ মন নিয়ে নামতে হবে পরীক্ষার ময়দানে। তাহলেই এবারের বিজয়মাল্য তোমার গলাতেই দুলবে. . কথা দিলাম. . .  

 

Join our mailing list Never miss an update