সংকটে ডুয়ার্সের রেলপথ, চাই সঠিক পদক্ষেপ

সংকটে ডুয়ার্সের রেলপথ, চাই সঠিক পদক্ষেপ

সংকটে ডুয়ার্সের রেলপথ, চাই সঠিক পদক্ষেপ; ২৬শে অক্টোবর ২০১৯; পৃষ্ঠা-৬; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত;
ডুয়ার্সের রেলপথ বলতে পশ্চিম ডুয়ার্সের শিলিগুড়ি জংশন থেকে আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত রেলপথকেই বোঝায়। এই রেলপথটি চা বাগিচা অধ্যুষিত ডুয়ার্স এলাকার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। শিলিগুড়ি জংশন থেকে আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত ১৬১ কিমি দীর্ঘ এই রেলপথে বর্তমানে ২১ টি স্টেশন রয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি জংশন থেকে শিলিগুড়ি টাউন, শিলিগুড়ি জংশন হয়ে বেশ কয়েকটি ট্রেন আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত যায়। কিছু ট্রেন আবার আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে নিউ আলিপুরদুয়ার হয়ে অসমগামী। আবার কয়েকটি ট্রেন আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে আলিপুরদুয়ার কোর্ট, বানেশ্বর, নিউকোচবিহার- কোচবিহার হয়ে বাংলাদেশ লাগোয়া বামনহাটে পৌঁছে যায়।
ডুয়ার্সের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা শতাব্দী প্রাচীন হলেও সেভাবে উন্নত হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে। শিলিগুড়ি জংশন থেকে আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত ১৬১ কিমি দীর্ঘ এই রেলপথের বহু স্টেশন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ স্টেশনগুলির মধ্যে রয়েছে শিলিগুড়ি জংশন ও গুলমার মাঝে পশ্বাশ্রয়, চালসা ও নাগরাকাটার মাঝে চাপরামারি, ক্যারন ও বানারহাটের মাঝে চ্যাংমারি, রাজাভাতখাওয়া ও আলিপুরদুয়ার জংশনের মাঝে দমনপুর।এর পাশাপাশি চালসা জংশন থেকে মেটেলি, রাজাভাতখাওয়া জংশন থেকে জয়ন্তী যাবার রেলপথ বন্ধ হয়েছে।রেলস্টেশন বন্ধ করে দেওয়া, রেলপথ উঠিয়ে দেবার যে ঘটনা ডুয়ার্স এলাকায় ঘটেছে; তা স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতের আর কোথাও এমন নজির পাওয়া যায় নি।

চা ও কাঠ যা ডুয়ার্সের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ছিল; তা এখন চরম সংকটে। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে পর্যটন শিল্প এই এলাকার মানুষজনকে অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটু অক্সিজেনের জোগান দিতে পারে। পর্যটন শিল্পের মূল চাবিকাঠি  যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সে দিক থেকে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ। আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে শিলিগুড়ি জংশনগামী এই পথে অনেক ট্রেন চলাচল করে। তবে বেশিরভাগ ট্রেনই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে দাঁড়ায় না। অনেক ট্রেনের সময়সূচী সঠিক নয়। ফলে পর্যটকদের ব্যাপক ভোগান্তি হয়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় ভ্রমণ সংক্রান্ত ব্যয়ভার। আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে ছাড়ে মহানন্দা এক্সপ্রেস (১৫৪৮৩/ ১৫৪৮৪) ও কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস (১৩১৪৯/১৩১৫০) এই  দুটি দূরগামী ট্রেন। এই ট্রেন দু’টি যদি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস(১৫৭৬৭/ ১৫৭৬৮) এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে দাঁড়াত, তাহলে ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে কলকাতা ও দিল্লীর যোগাযোগ আরও নিবিড় হত। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্যাসেঞ্জার কাম এক্সপ্রেস ট্রেনের মত এই দুটিকেও রূপান্তরিত করা দরকার।
রেলপথে হাতির মৃত্যু নিয়ে মাঝে মাঝেই পরিবেশপ্রেমীরা বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন তোলেন । অনেকেই প্রস্তাব দেন, এই পথে রেল চলাচল বন্ধ করার। হাস্যকর এই প্রস্তাবে কোন সারবর্তা না থাকলেও; ট্রেন দুর্ঘটনায় হাতির মৃত্যু নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য এই ১৬১ কিমি দীর্ঘ রেলপথের ৩৫ কিমি অরণ্য এলাকায় সুউচ্চ ওভারব্রীজ বা এলিফেন্ট করিডর বানিয়ে দিলে ডুয়ার্সের রেলপথ অনেক আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। ডুয়ার্স এলাকার আর্থসামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আরও সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে। সেই আশায় বুক বেঁধে রয়েছে আদিবাসী অধ্যুষিত ডুয়ার্স এলাকার মানুষজন।
ডাঃ পার্থপ্রতিম
বানারহাট, জলপাইগুড়ি

Join our mailing list Never miss an update