গুড়ে গরম; ডাঃ পার্থপ্রতিম; ২ জানুয়ারি ২০১০; পৃষ্ঠা- দশ; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
অ্যানিমিক? কুলেখাড়ার রস, নিমপাতা খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কিছুটা করে গুড়ও খান। শীতে শরীর গরম রাখে যে কোনো গুড়। সকালে উঠে হলুদ-গুড় খান কিংবা রুটি গুড়। আখের গুড়ের ১০০ গ্রামে একদিকে ক্যালসিয়াম পাবেন ১১৮ মিলিগ্রাম, অন্যদিকে আয়রন পাবেন ৩ মিলিগ্রাম। খেজুরের গুড়ের ১০০ গ্রামে ক্যালসিয়াম থাকে ৩৬৩ মিলিগ্রাম। গুড় খেলে অম্বল তথা অ্যাসিডিটিও কমবে। কারণ, গুড়ের মধ্যে থাকা পটাসিয়াম অ্যাসিড এবং অ্যাসিটোনের আক্রমণকে প্রতিহত করবে। কোষে কোষে অ্যাসিড এবং ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করবে। ১০০ গ্রাম গুড়ের মধ্যে পটাসিয়াম থাকে ১০৫৬ মিলিগ্রাম। উল্লেখ্য, পটাসিয়াম ব্লাড প্রেসারের রোগীদের জন্যও জরুরি। খাবার দাবারে পটাসিয়ামের পরিমাণ বাড়াতে পারলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সেজন্য ব্লাড প্রেসার যাদের বেশি তাদের পটাসিয়ামে ভরপুর কুয়াশ, কলা, পাঁকা পেঁপে এসব নিয়ম করে খেতে বলা হয়। কুয়াশে সোডিয়াম থাকে না। গুড়েও সোডিয়াম নেই। গর্ভাবস্থায় যারা রক্তাপ্লতায় ভোগেন, স্তন্যদাত্রীরা যারা অ্যানিমিক হন, তারা গর্ভবতী হওয়ার আগে থেকে যদি নিয়মিত গুড় খেয়ে যেতে পারেন, তাহলে অনায়াসেই অ্যানিমিয়ার ভোগান্তি এড়াতে পারবেন।
চিনির চেয়ে ৬০ গুণ বেশি খনিজ উপাদান পাবেন গুড়ে। ১০০ গ্রাম গুড়ে ৩২১ ক্যালোরি মেলে। সমপরিমাণ চিনিতে থাকে ৩৮৪ ক্যালোরি। একই পরিমাণ মধুতে ৩১২ ক্যালোরি। গুড়ে প্রোটিন থাকে ০.৫ গ্রাম। মধুতে ০.৬ গ্রাম। চিনিতে প্রোটিন থাকেই না। ১০০ গ্রাম গুড়ে কার্বোহাইড্রেট ৮৬ মিলিগ্রাম। চিনিতে ৯৯.৩ মিলিগ্রাম। মধুতে ৭৯.৮ মিলিগ্রাম।
গুড় হাঁপানির শুশ্রুষা করে। হজম তন্দুরস্ত করে। মাইগ্রেনেও উপকারী। কফকষ্ট দূর করতে গুড় দিয়ে লিকার চা খেতে হয় কয়েকবার। দূষণজনিত ক্ষয়ক্ষতি আটকায় গুড়। আর্থ্রাইটিসের জন্যও ভালো। মুড ভালো করে গুড়। অবসাদ দূর করে। এক টুকরো গুড়ে মুডবদল হওয়া আটকানো যায়। রক্তকে শোধিত করে মুড সুইং হওয়া আটকায়। গুড় শরীর থেকে বিষ-বর্জ্যও সাফসুতরো করে। ১০০ গ্রাম গুড়ে বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণের পরিমাণ ২৮৫০ মিলিগ্রাম। অথচ চিনিতে এই পরিমাণটা মাত্র ৩০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম। গুড়ের ১০০ গ্রামে ম্যাগনেসিয়াম ১৩৬ মিলিগ্রাম। ফসফরাস ১১৬ মিলিগ্রাম। সমপরিমাণ চিনিতে ফসফরাস থাকে ০.২৫ মিলিগ্রাম। চিনিতে পটাসিয়াম থাকেই না। আয়রন থাকে মাত্র ০.১ মিলিগ্রাম। নিরাপদ হল ঝোলাগুড় খাওয়া। কারণ, শক্ত গুড় বা পাটালিতে মিষ্টি নোনতা স্বাদ আনতে, স্ফটিকাকৃতি দিতে, রঙদার করতে প্রক্রিয়াকরণ পর্বে বহু জায়গায় যেটা করা হয়, গুড়ের মধ্যে অতিরিক্ত বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো হয়, যা গুড়ের গুণগত মান নষ্ট করে, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না।
টম্যাটোর বীজ
দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি রয়েছে টম্যাটোর বিচিতে। টম্যাটোর বীজের ভেতরকার নির্যাসকে কাজে লাগিয়ে এক ধরনের স্বাদ এবং বর্ণহীন জেল বানানো হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে : ফ্রুটফ্লো। ফলের রস এবং অন্যান্য খাবার দাবারের সঙ্গে এই জেল মিশিয়ে খেলে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকবে না। ইকোস্প্রিন তথা অ্যাসপিরিনের অনুরূপ কাজ করবে এটি। অ্যাবারডিনের রোওয়েট ইউনির্ভাসিটির প্রফেসর অসীম দত্ত রায়ের আবিষ্কার। মানব দেহের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা গেছে, ফ্রুটফ্লো রক্ত প্রবাহের গতি বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তের অণুচক্রিকাদের জমাট বাঁধতে দেয় না। ফ্রুটফ্লো শরীরে ঢোকার ৩ ঘন্টার মধ্যে রক্ত পরিবহন তন্দুরস্ত হয়। ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত শরীরে কার্যকর থাকে ফ্রুটফ্লোর প্রভাব।