দ্বন্দ্ব ভুলে একসঙ্গে মিলতে চলেছে গোটা ডুয়ার্স; -অনুপ সাহা; ১ নভেম্বর ২০১০; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা। কালচিনি ইউনিয়ন অ্যাকাডেমিতে একই ক্লাসে পড়তেন এরা দুজন। দুজনে যাকে বলে হরিহর আত্মা। তারপর সুনীতি ছেত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে নেপালের বিরাটনগরে। আর গার্গী গাঙ্গুলি বিবাহসূত্রে এখন কলকাতার বাসিন্দা। দুজনের আত্মীয়-পরিজন এখনও রয়ে গেছেন কালচিনিতে। বিয়ের পর দুজনেই বহুবার নিজভূমিতে এসেছেন। তবে সুনীতি যখন আসেন, তখন গার্গী কলকাতায়। আর গার্গী যখন আসেন তখন সুনীতি নেপালের দূর শহরে। এভাবেই কখন যেন কেটে গেছে দীর্ঘ পঁচিশ বছর। ইতিমধ্যে এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই পালটে গিয়েছে। দুই পরিবারের সম্পর্ক কিছুটা বিবর্ণ হয়েছে সেই ভাষা-গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে। এবার মুখোমুখি হতে চলেছে সুনীতি ও গার্গী । প্রায় একই ঘটনা ঘটতে চলেছে গোপিমোহন চা বাগিচার ফ্রান্সিস বার্লা ও দিলীপ প্রধানের, কিলকটের লক্ষ্মী হাঁসদা ও সবিতা দাসের ক্ষেত্রেও। আগামী ১৪ জানুয়ারি ২০১১ দিনটিতে পুরো ডুয়ার্সজুড়ে এমনই এক অভিনব মিলনমেলার ডাক দিয়েছে ডুয়ার্সের বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ক্লাব ও প্রতিষ্ঠান। ওদলাবাড়ি থেকে শুরু করে কুমারগ্রাম- পশ্চিম ডুয়ার্সের এই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রতিটি জায়গায় পালন করা হবে ‘ডুয়ার্স ডে’।
বিয়ে বা কর্মসূত্রে যারা বাড়ির বাইরে আছেন তাদের সকলকে একদিনের জন্য নিজভূমে ফেরার ডাক দিয়েছে ‘ডুয়ার্স ডে’ উদযাপন সমিতি। সারাদিন ধরে চলবে স্মৃতি রোমন্থন। থাকছে নানা অনুষ্ঠান, খেলাধূলা, ডুয়ার্সের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা ও পরিকল্পনা গ্রহণ, সচেতনতামূলক পদযাত্রা, গুণীজন সংবর্ধনা, আরও কত কী...। ওইদিন সন্ধ্যায় আলোকমালায় সাজবে ডুয়ার্সের সব মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বার, বাড়িঘর, অফিস- কাছারি। অভিনব দীপাবলি। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই জোরকদমে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে।
‘ডুয়ার্স ডে’ অহ্বায়ক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ পার্থপ্রতিম বলেন, ডুয়ার্সে বিভিন্ন ভাষাভাষী ও জনগোষ্ঠীর বাস। বছরের পর বছর আমরা পাশাপাশি থেকে একে অপরের সুখ-দুঃখে শামিল হয়েছি। বর্তমানে আমরা সেই অতীত ঐতিহ্য ভুলতে বসেছি। শান্তি ও সম্প্রীতি ছাড়া প্রগতি সম্ভব নয়। তাই এই উদ্যোগ। রবিঠাকুরের রাখিবন্ধন উৎসবকে স্মরণ করেই তার জন্মের সার্ধশতবর্ষে মানুষ-মানুষের মেলবন্ধন সুদৃঢ় করতে পালন করা হবে রাখিবন্ধন উৎসব।
লোকশিল্পের এক অনন্য আকর এই ডুয়ার্স অঞ্চল। মেচ, রাভা, সাঁওতাল, মুন্ডা, টোটো, রাজবংশী সহ আরও বহু জনজাতির সংস্কৃতিতে ঋদ্ধ এই ভূখন্ড। যেন নানা ফুল দিয়ে গাঁথা এক মালা। ‘ডুয়ার্স ডে’-তে সব ফুল পাপড়ি মেলবে আপন সৌরভে।