প্রচারে অক্লান্ত চিকিৎসক

প্রচারে অক্লান্ত চিকিৎসক

প্রচারে অক্লান্ত চিকিৎসক;শুভজিৎ দত্ত; ১৮ আগস্ট ২০১৬; পৃষ্ঠা- সাত; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
পার্থপ্রতিমবাবুর অভিযান চলছেই। আগে সামলানো গিয়েছে এক শত্রুকে। এখন পরবর্তী দুশমনের পালা। শত্রু তো একের পর এক আসবে যাবে, তা বলে পার্থপ্রতিমবাবুর তো আর থেমে থাকলে চলবে না। কী ব্যাপার?
    এনকেফেলাইটিসের পর এবার ডেঙ্গু নিয়ে ডুয়ার্সের চা বাগানে সচেতনতা গড়ে তুলতে আসরে নেমেছেন ডুয়ার্সের বিশিষ্ট হোমিয়োপ্যাথ চিকিৎসক পার্থপ্রতিম। তাঁর অভিযান চলছে ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানগুলোতে। ল্যাপটপ ও প্রোজেক্টর দিয়ে বড়ো পর্দায় তিনি ওই রোগের হাত থেকে বাঁচার নানা উপায় ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে বোঝাচ্ছেন চা শ্রমিকদের।
    বলে রাখা ভালো যে ২০১৪ সালে গোটা উত্তরবঙ্গে এনকেফেলাইটিস যখন কার্যত মহামারির আকার ধারণ করেছিল, তখন বানারহাটের ওই সমাজসেবী চিকিৎসক সেখানকার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকল্যাণ ভট্টাচার্যকে সঙ্গী করে ওই মারণরোগ নিয়ে ডুয়ার্সের নানা স্থানে একই কায়দায় সচেতনতার বার্তা দিয়েছিলেন। তাঁর সেই উদ্যোগের ফলে এলাকায় যে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল, তা এককথায় মেনে নিচ্ছেন প্রশাসনের শীর্ষকর্তারাও।

এইসব সচেতনতা শিবিরগুলোতে চা শ্রমিকদের মাতৃভাষাতেই স্লাইড ও ভিডিয়ো ফুটেজের মাধ্যমে সচেতনতার ওইসব বার্তা দেওয়া হচ্ছে। সেকারণে সকলে খুব সহজেই সমস্ত বিষয় বুঝে যাচ্ছেন।

 

   ডাঃ পার্থপ্রতিম বলেন, ‘ডুয়ার্স তথা উত্তরবঙ্গের জনজীবনে আবার আঘাত হানছে ডেঙ্গু। সেই আক্রমণের হাত থেকে সকলকে রক্ষা করবার সবথেকে সোজা ও কার্যকরী উপায় হল সেই অসুখ নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা। যেকোনো রোগের হাত থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় তো তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। কিন্তু কীভাবে তা করা যেতে পারে? সে কথাই আগে বলা হয়েছিল এনকেফেলাইটিস নিয়ে আয়োজিত সচেতনতা শিবিরগুলোতে। আর এখন বলা হচ্ছে, ডেঙ্গু নিয়ে আয়োজিত সচেতনতা শিবিরগুলোতে। এধরনের সচেতনতা শিবির যে ডুয়ার্স এলাকায় এক্কেবারে নতুন, সেকথা কিন্তু বলা যাবে না। তাহলে বাকি পাঁচটা উদ্যোগের থেকে এই উদ্যোগটা আলাদা হল কীভাবে? পার্থপ্রতিমবাবুর উদ্যোগের নতুনত্ব হল এই যে এইসব সচেতনতা শিবিরগুলোতে চা শ্রমিকদের মাতৃভাষাতেই স্লাইড ও ভিডিয়ো ফুটেজের মাধ্যমে সচেতনতার ওইসব বার্তা দেওয়া হচ্ছে। সেকারণে সকলে খুব সহজেই সমস্ত বিষয় বুঝে যাচ্ছেন।’

    ওই চিকিৎসক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে হোমিয়োপ্যাথিতে যে বেশকিছু কার্যকারী ওষুধ রয়েছে সেকথাও জানিয়েছেন পার্থপ্রতিমবাবু। তিনি বলেন, ‘হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসা মূলত লক্ষণভিত্তিক। এখানে রোগের নাম মুখ্য বিষয় নয়। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলির সঙ্গে খাপ খায় এরকম নানা ওষুধের কথা হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসাশাস্ত্রে রয়েছে। যেমন আর্সেনিক এলবাম, বেলেডোনা, রাসটক্স, ইউপেটোরিয়াম পারফোলিয়েটাম, রডোডেন্ড্রন এইসব ওষুধ লক্ষণ অনুসারে প্রয়োগ করলে ডেঙ্গু চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।’
    প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডেঙ্গুর কোনো টিকা বা প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে হোমিওপ্যাথিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ওষুধ পাওয়া যেতে পারে বলেও পার্থপ্রতিমবাবুর বক্তব্য। সেক্ষেত্রে হোমিয়োপ্যাথির জনক ডাঃ হানিম্যানের লেখা ‘আর্গানন অফ মেডিসিন’- এর বইয়ের ৩৩, ৪৬ ও ১৪১ নম্বর পৃষ্ঠা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে বেলেডোনা-২০০ ভালো কাজ করতে পারে। কেউ যদি ডেঙ্গু ভাইরাসে প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবুও এই ওষুধ দুটি পর্যায়ক্রমে খেলে রোগের তীব্রতা থেকে স্বস্তি মেলা সম্ভব। তবে রোগ প্রতিরোধের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সারাদিনে প্রচুর জলপান, ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ সবজি ও ফলের রস খাওয়া জরুরি।
    মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি বলেন ,‘২০১৪ সালে এনকেফেলাইটিস নিয়ে ডুর্য়াস জুড়ে ডাঃ পার্থপ্রতিম-রা যে কাজ করেছিলেন তার জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। এবার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও সচেতনতার বার্তা সব স্থানে পৌঁছে দিতে তাঁদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’ চা মালিকদের সংগঠন টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার (টাই) ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক তথা উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট চা বাগান বিশেষজ্ঞ রামঅবতার শর্মা বলেন, ‘চা বাগানে এরকম সচেতনতা শিবির ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সে কারণে আমরা তাঁদের কাজে লাগাচ্ছি।’

Join our mailing list Never miss an update