তন্বী? না স্থূলকায়া?

তন্বী? না স্থূলকায়া?

তন্বী? না স্থূলকায়া? -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ২০ ডিসেম্বর ২০০৩; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
না, আমার আগ বাড়িয়ে বলার কোন দরকার নেই। হাসিমারার সবাই জানে সেঁজুতি রায় তন্বী আর গায়ত্রী দিদিমণি স্থূলকায়া। চোখের দেখাতেই লোকে বুঝতে পারে কে প্যাঁকাটি আর কে হোঁদল কুতকুত। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে এসবের সঠিক মাপজোকের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। দেহের মেদ নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি চালু পদ্ধতিটি হল বডি মাস ইনডেক্স বা সংক্ষেপে বি এম আই। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের ডাক্তারবাবুরা এটাকেই ব্যবহার করেন। দেহের উচ্চতার সঙ্গে আপনার ওজনের হিসেবনিকেশ করে বি এম আই জানা যায়। ফর্মূলাটি হলঃ- কিলোগ্রামে আপনার ওজন/ (মিটারে আপনার উচ্চতা)

    ধরা যাক আপনার ওজন ৬০ কেজি আর উচ্চতা ১.৬০ মিটার। তবে বি এম আই হবে- ৬০/১.৬০x ১.৬০= ২৩.৪৩
অঙ্কটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে উচ্চতার তুলনায় যার ওজন যত বেশি হবে তার বি এম আই ততই বাড়বে। ছেলেদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বি এম আই ২০-২৫ ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৯-২৪ এর বেশি হলেই তাকে মোটা বলে ধরে নিতে হবে।
    দেহের মেদবৃদ্ধি থেকে যে হাজারো রোগ বাসা বাঁধে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মায়োকার্ডিয়াল ইস্কিমিয়া, সেরিব্রাল স্ট্রোক, ফ্রলিক সিনড্রোম, উচ্চরক্তচাপ, মেয়েদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম আর কত কী।
    প্রচলিত পদ্ধতি অনুসারে মেদ থেকে বিপত্তির সম্ভাবনার ভিত্তিতে বি এম আই কে পাঁচভাগে ভাগ করা হয়। বি এম আই ২০-২৫ হলে বিপত্তির সম্ভাবনা একদম নেই। বি এম আই ২৬-৩০ হলে বিপত্তির সম্ভাবনা কম। বি এম আই ৩১-৩৫ হলে বিপত্তির সম্ভাবনা কম। বি এম আই ৩১-৩৫ হলে বিপত্তির সম্ভাবনা মাঝামাঝি। বি এম আই ৪০ এর বেশি হলে মারাত্মক।
কিছু কিছু  ক্ষেত্রে ব্রোকা ইনডেক্স দিয়ে শরীরের মেদবৃদ্ধি মাপা হয়। এটা অনেকটা বি এম আই এর মতোই। তবে অঙ্কের ঝামেলা কম। ব্রোকা ইনডেক্স অনুযায়ী- সেন্টিমিটারে ব্যক্তির উচ্চতা থেকে কিলোগ্রামে ব্যক্তির ওজন বাদ দিলে ব্রোকা ইনডেক্স পাওয়া যায়। শুক্লাদির উচ্চতা যেহেতু ১৬০ সেন্টিমিটার আর ওজন ৬৬ কেজি, তাই ব্রোকা ইনডেক্স ৯৪। এই সূচক একশোর কম হলে বুঝতে হবে আপনার তনুর পাহাড়-উপত্যকায় মেদ বা স্নেহপদার্থ অতিমাত্রায় সঞ্চিত হয়েছে। আর স্নেহ অতি বিষমবস্তু এতো আগেই বলেছি।
লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন শরীরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বেশি পরিমাণে চর্বি জমে। বুক-পেটে চর্বি জমার ধাত পুরুষের মধ্যে বেশি। যেমন আমাদের শ্যামলদার হাত পাগুলি সরু সরু, পেটটা কেবল মোটা। শুধুই করে পেটের সেবা তাই বেড়েছে ওটা। ডাক্তারি ভাষায় একে আমরা বলি অ্যাবডোমিন্যাল ফ্যাট।

বৌদিদের আবার অন্য ব্যাপার। তাঁদের ক্ষেত্রে কোমর ও ঊরুতে চর্বি জমার প্রবণতা দেখা যায়। এর নাম গ্লুটিয়াল ফ্যাট। এই অতিরিক্ত মেদ থেকে বিপদের সম্ভাবনার বিচারে গ্লুটিয়াল ফ্যাট অ্যাবডোমিন্যাল ফ্যাটের চেয়ে কম মারাত্মক।
অনেকে আবার ওয়েস্ট হিপ রেসিও দিয়ে দেহের সঞ্চিত মেদের পরিমাপ করেন। বিউটি  কনটেস্টে এই পদ্ধতি বেশ প্রচলিত। বুক ও নিতম্বের তুলনায় যার কোমর যত সরু হবে তিনি ততই আকর্ষণীয়। যেমন কলেজ জীবনে সহপাঠী সুদেষ্ণা, ছেলেমহলে পরিচিত ছিল ৩৬-২৫-৩৬ নামে। প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন ছেলের কাছ থেকে প্রেমপত্র পেত। ওয়েস্ট হিপ রেসিও জানা যায়- সেন্টিমিটারে কোমরের বেড়/সেন্টিমিটারে হিপের বেড়
পুরুষের ক্ষেত্রে এর মান ০.৯ ও মহিলাদের ১.০ এর বেশি হলেই বুঝতে হবে অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে।
হাড়, মাংসপেশি এসবের তুলনায় চর্বির ঘনত্ব কম। জলের মধ্যে থাকা ভাসমান অবস্থায় ওজন করে দেহের ঘনত্ব বের করা যায়। এ থেকে জানা যায় শরীরে সঞ্চিত চর্বির পরিমাণ। বিজ্ঞানশাস্ত্রে এই পদ্ধতিকে ডেনসিটোমেট্রি বলে। মনে পড়েছে? হ্যাঁ, ইউরেকা- ইউরেকা বলে রাস্তা দিয়ে বিবস্ত্র হয়ে দৌড়ে যাওয়া সেই বিজ্ঞানীর কথা। বিখ্যাত বিজ্ঞানী

আর্কিমিডিসকে নিয়ে এমন একটি গল্প অনেকেরই জানা আছে। এর কতটা সত্য, কতটা মিথ্যা হলফ করে বলতে পারব না। ছোটোবেলায় অজিত স্যারের মুখে শুনেছি। আর্কিমিডিস-ই ডেনসিটোমেট্রির আবিষ্কারক।
অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক বা আইসোপোট প্রয়োগ করে দেহে মেদের পরিমাণ মাপা হয়। তবে এই প্রক্রিয়া খুবই ব্যয়বহুল। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কাজে সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মেদ সবার শরীরেই থাকে। বেঁচে থাকার জন্য এই উপাদান অপরিহার্য। যারা স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী তাঁদের দেহে বড়জোর ১২-২০ কেজি চর্বি থাকে। আর যারা মেদবহুল তারা ৪০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত মেদ বয়ে বেড়ান।
 মেদ কমানোর চেষ্টা শুরু করার আগে ভালোভাবে বিভিন্ন অঙ্গের মাপজোক করে জেনে নিন কোথায় কতটা স্নেহ পদার্থ বাসা বেঁধেছে। তারপর পরিকল্পনামাফিক ব্যায়াম ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করে এগিয়ে চলুন। কর্তব্যে অবিচল ও প্রতিজ্ঞায় দৃঢ় থাকলে বিজয়মাল্য আপনার গলাতেই দুলবে। এক্কেবারে হক কথা।       

Join our mailing list Never miss an update