বানারহাট ব্লক না হওয়া সার্বিক ব্যর্থতা ; ২৮শে ফ্রেব্রুয়ারী ২০১১; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
৬২২৭ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত জলপাইগুড়ি জেলায় মোট ব্লক রয়েছে ১৩টি। বানারহাট রয়েছে ধূপগুড়ি ব্লকে। ধূপগুড়ি ব্লকের আকার ৫৬৫১০ বর্গ কিমি । ধূপগুড়ি ব্লকের দুটি থানা। ধূপগুড়ি ও বানারহাট। বানারহাট থানায় প্রশাসনিক এলাকা রয়েছে ৫৯টি গ্রাম ও ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত জুড়ে। বানারহাট ১নং গ্রাম পঞ্চায়েত , বানারহাট ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত, চামুর্চি গ্রাম পঞ্চায়েত,বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত,সাঁকোয়াঝোরা ১নং গ্রাম পঞ্চায়েত, শালবাড়ি ১নং গ্রাম পঞ্চায়েত, শালবাড়ি ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত, আংরাভাসা ১নং গ্রাম পঞ্চায়েত ও আংরাভাসা ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত। এরমধ্যে আংরাভাসা ১নং ও ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত দুটি রয়েছে নাগরাকাটা ব্লকের অধীনে। ডায়না নদীর অপর পাড়ে থাকার জন্য বর্ষাকালে এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব দুর্গম হয়ে ওঠে। সে কারণে নাগরাকাটা ব্লকের এই দুটি পঞ্চায়েত বানারহাট থানার আওতায় রয়েছে।
বিগত জনগণনার হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার ৫.৫০ শতাংশ ছিল তপশিলি জাতির মানুষ। জলপাইগুড়ি জেলায় ১৮.৮৭ শতাংশ। আর ধূপগুড়ি ব্লকে মোট জনসংখ্যা ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৯ শো ৪৬ জন। তার মধ্যে তপশিলি উপজাতির মানুষ রয়েছে ৭৭ হাজার ৪ শো ৩৫ জন। অর্থাৎ জনসংখ্যার ২১.৩৩ শতাংশ। ধূপগুড়ি ব্লকের আদিবাসী অধ্যুষিত যে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি রয়েছে তার বেশির ভাগই বানারহাট থানার অধীনে। বানারহাট ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪১.৩৪ শতাংশ, বানারহাট ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪১.১৩ শতাংশ ও চামুর্চি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪৫.৯৮ শতাংশ মানুষই তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। বানারহাট ব্লক না হওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষজন।
পাশ্ববর্তী নাগরাকাটা ব্লক হয়েছে মাত্র ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে,মেটেলি ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত সংখ্যাও ৫টি। সেখানে ধূপগুড়ি ব্লকে রয়েছে ১৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েত। অর্থাৎ নাগরাকাটা ও মেটেলি ব্লকের তুলনায় তিনগুণের বেশি। নাগরাকাটা ব্লকের জনসংখ্যা ১লক্ষ ১৫ হাজার ৩ শো ৪৮ জন আর মেটেলি ব্লকের জনসংখ্যা ১লক্ষ ৫ হাজার ৮ শো ৬১ জন । ধূপগুড়ি ব্লকের জনসংখ্যা এই দুই ব্লকের তুলনায় প্রায় তিনগুন। সোজাসাপটা ভাবে ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে সহজেই বানারহাটকে পৃথক ব্লক তৈরি করা যায়। যেখানে ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে লোকসংখ্যা হবে দেড় লক্ষের বেশি।
ধূপগুড়ি ব্লক অফিস থেকে ব্লকের দূরবর্তী স্থান চামুর্চির সুনতালাবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। আশেপাশে আর কোনও ব্লকেই ব্লক অফিস থেকে এত দূরে জনবসতি নেই। বানারহাট থানার সঙ্গে ব্লক শহর ধূপগুড়ির কোনো সরকারি পরিবহন নেই। বাস যোগাযোগ পুরোপুরি বেসরকারি ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। তাই যে কোনও বনধ বা ধর্মঘটে ব্লক অফিসের সঙ্গে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এই বানারহাট থানার সাধারণ মানুষজন।
অনেক নেতা-কর্তার মুখে শোনা যায়- বানারহাটে জায়গা জমির খুব অভাব সে কারণে এখানে ব্লক অফিস হচ্ছে না। ঘটনাটি একেবারে অন্যরকম। বানারহাট লাগোয়া প্রতিটি চা বাগানে বহু অব্যবহৃত জমি পড়ে আছে। যেখানে সহজেই ব্লক অফিস তৈরি করা যায়। অতীত দিনেও এখানে ফরেস্ট অফিস , স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির সময় বানারহাট চা বাগিচার অব্যবহৃত জমি সরকারি তরফে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। আজও সেখানে বহু জমি পড়ে রয়েছে।
বিশেষ সুবিধা বা বাড়তি কোনও অনুকম্পা নয়। সহজ সরকারি পরিসংখ্যানেই বানারহাট ব্লক হওয়া উচিত। এই সরল পাটিগণিতটি বিধানসভা বা উচ্চ প্রশাসনিক মহলে তুলে ধরার মতো কোনও জনপ্রতিনিধি এই এলাকার মানুষ বিধানসভায় পাঠাতে পারেনি। এই লজ্জা কোথায় লুকাই?
বানারহাটে ব্লক অফিসঃ প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে; ডাঃ পার্থপ্রতিম। ১৭ই জুন ২০১৭; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
বানারহাট থানাকে ব্লক হিসাবে ঘোষণা করতে হবে-দাবীটি বেশ কয়েক দশকের। বানারহাট রয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লকে। ধূপগুড়ি ব্লকের দুটি থানা; ধূপগুড়ি ও বানারহাট। বানারহাট থানায় প্রশাসনিক এলাকা রয়েছে ৫৯টি গ্রাম ও ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত জুড়ে। বানারহাট ১নং গ্রাম পঞ্চায়েত, বানারহাট ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত, চামুর্চি গ্রাম পঞ্চায়েত, বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত, সাঁকোয়াঝোরা ১নং গ্রাম পঞ্চায়েত, শালবাড়ি ১নং গ্রাম পঞ্চায়েত, শালবাড়ি ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত, আংরাভাসা ১নং গ্রাম পঞ্চায়েত ও আংরাভাসা ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত। এরমধ্যে আংরাভাসা ১নং ও ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত দুটি রয়েছে নাগরাকাটা ব্লকের অধীনে। ডায়না নদীর অপর পাড়ে থাকার জন্য বর্ষাকালে এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব দুর্গম হয়ে ওঠে। সে কারণে নাগরাকাটা ব্লকের এই দুটি পঞ্চায়েত বানারহাট থানার আওতায় রয়েছে।
ধূপগুড়ি ব্লকের আদিবাসী অধ্যুষিত যে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি রয়েছে তার বেশির ভাগই বানারহাট থানার অধীনে। বানারহাট ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪১.৩৪ শতাংশ, বানারহাট ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪১.১৩ শতাংশ ও চামুর্চি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪৫.৯৮ শতাংশ মানুষই তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। বানারহাট ব্লক না হওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষজন। ধূপগুড়ি ব্লকে যে ২৭টি চা বাগিচা রয়েছে তার সবগুলিই রয়েছে বানারহাট থানার অধীনে।
পাশ্ববর্তী নাগরাকাটা ব্লক হয়েছে মাত্র ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে, মেটেলি ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত সংখ্যাও ৫টি। সেখানে ধূপগুড়ি ব্লকে রয়েছে ১৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েত। অর্থাৎ নাগরাকাটা ও মেটেলি ব্লকের তুলনায় তিনগুণের বেশি। নাগরাকাটা ব্লকের জনসংখ্যা ১২ লক্ষ ৭ হাজার ৩ শো ৯৭ জন আর মেটেলি ব্লকের জনসংখ্যা ১১ লক্ষ ৭ হাজার ৫ শো ৪০ জন । ধূপগুড়ি ব্লকের জনসংখ্যা এই দুই ব্লকের তুলনায় প্রায় তিনগুন। সোজাসাপটা ভাবে ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে সহজেই বানারহাটকে পৃথক ব্লক তৈরি করা যায়। যেখানে ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে প্রতি ব্লকে লোকসংখ্যা হবে দু' লক্ষের বেশি।
ধূপগুড়ি ব্লক অফিস থেকে ব্লকের দূরবর্তী স্থান চামুর্চির সুনতালাবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। আশেপাশে আর কোনও ব্লকেই ব্লক অফিস থেকে এত দূরে জনবসতি নেই। বানারহাটে ব্লক অফিস স্থাপনের মতো সবধরনের পরিকাঠামো রয়েছে। এই থানা এলাকার লাগোয়া রয়েছে ভূটানের জেলা শহর সামসি। রয়েছে অব্যবহৃত সুবিশাল সরকারী জমি। কিছুদিন পূর্বে বানারহাটের পি.ডাব্লু.ডি-র সাব ডিভিশনাল অফিসটি অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছে। এই অব্যবহৃত অফিস কমপ্লেক্স, কর্মী আবাসনে অচিরেই অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্লক অফিস শুরু করা যেতে পারে। এ রাজ্যের বেশির ভাগ থানা এলাকাকে ব্লক হিসাবে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়া হলেও বানারহাটের ক্ষেত্রে তা হয়ে ওঠেনি। বানারহাট থানার প্রশাসনিক কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭৪ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর। তারপর ৪২ বছর পার হয়ে গেলেও এই এলাকা আর কোন পদমর্যাদায় উন্নীত হয় নি।
তাই বলা যায়, সহজ সরকারি পরিসংখ্যানেই বানারহাটে ব্লক অফিস হওয়া উচিত। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক ব্যবস্থাটাকে গ্রামমুখী করতে উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে এই এলাকার মানুষের প্রত্যাশার পারদ স্বাভাবিকভাবেই উর্দ্ধমূখী।
-ডাঃ পার্থপ্রতিম।; আদর্শপল্লী, বানারহাট;