রোগ: যোগ বিয়োগ, আস্থা-অনাস্থা; ডাঃ পার্থপ্রতিম; ২১ মে ২০০৫; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
রিপোর্ট দেখে তো চক্ষু চড়ক গাছ। প্রশ্ন করলাম, ওষুধগুলি ঠিকমতো খাচ্ছেন তো? হ্যাঁ মানে না, অ্যাঁ, আসলে গত মাস থেকে ওষুধ খাওয়া বন্ধ রেখেছিলাম। টিভি দেখে যোগ করছিলাম তো তাই। না, শুধু এল. আই. সি-র অধিকারী বাবু নয়, আমার পাড়ার ঘোতনদা, রুবি বউদি অনেককেই দেখছি এই আশ্চর্য হুজুকে মেতে উঠেছেন। ব্যাপারটা ঠিকমতো বুঝে না নিয়ে, শুধুমাত্র টিভি দেখে সকলেই রাতারাতি যোগী হয়ে উঠেছেন। একটি টিভি চ্যানেলের দৌলতে পেপসি-পপকর্ন খাওয়ার সঙ্গে যোগ প্রাণায়াম করার তেমন কোনো আর পার্থক্য নেই। প্যাকেট খুলে গলায় ঢাললেই হল।
যোগব্যায়াম বা প্রাণায়াম করবেন তাতে ক্ষতি নেই। এ ব্যাপারে বাগড়াও দিচ্ছি না। তবে সব কিছু জেনে বুঝে তারপর শুরু করাটাই ভাল। নাহলে আপনার দশা সেই বিক্রম অধিকারীর মতো হতে পারে। কথা না বাড়িয়ে গোড়া থেকে শুরু করা যাক।
অনেককালের কথা। তপোবনবাসী ঋষিমুনিরা ঈশ্বরের আরাধনা করতে গিয়ে দেখলেন, শরীর সুস্থ না থাকলে ভগবানের সাধনা কেন, কোন কাজই ঠিক মতো করা সম্ভব নয়। তাঁরা উপলদ্ধি করলেন, শরীর মাদ্যম খলু ধর্মসাধনম্ ।
শুরু হল দেহকে সুস্থ-সবল রাখার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। একদল গাছ, লতাপাতা, ফল-মূল, শেকড়-বাকড়ের ভেতর খুঁজেতে শুরু করলেন ঔষধি গুণাগুণ। আর একদল ঋষি শারীরিক কসরতের মধ্য দিয়ে অনুসন্ধান চালালেন স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম কানুন তৈরির। দীর্ঘদিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আন্তরিক পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে তারা উপলদ্ধি করলেন কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে চললে মানুষ যে শুধু রোগমুক্ত থাকতে পারে তাই নয়, মানব ব্যক্তিত্বের সঠিক বিকাশ ও আধ্যাত্মিক উন্নতি হওয়া সম্ভব। তখনকার প্রচলিত ধর্মমত ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তাঁরা এইসব পদ্ধতির নাম দিলেন যোগ বা যোগা। পরমাত্মার সঙ্গে অন্তরাত্মার মিলন বা যোগসাধন হবে এই ধারণা থেকেই এ ধরনের নামকরণ। অনেকে যোগ বলতে শুধু আসন বা যোগাসনকেই বোঝেন। আসলে যোগ হল একটি দর্শন। মহর্ষি পতঞ্জলি এই দর্শনকে প্রথম গ্রন্থাকারে সংকলিত করেন।
পতঞ্জলির যোগসূত্র অথবা পতঞ্জল সূত্র যোগদর্শনের আকরগ্রন্থ। এছাড়াও রয়েছে ব্যাসদেব রচিত যোগভাষ্য বা ব্যাসভাষ্য, বাচস্পতির তত্ত্ববৈশারদী, ভোজরাজের বৃত্তি ও যোগমণিপ্রভা, বিজ্ঞানভিক্ষুর যোগবার্তিক ও যোগসার সংগ্রহ আরো বহু পত্র-গ্রন্থাদি।
পতঞ্জলির মতে আমাদের দেহের ভেতর যে আত্মা বিরাজ করেন তা শুদ্ধ চৈতন্য। প্রাচীন ভারতীয় দর্শনে বলা হয়েছে আমাদের প্রত্যেকের দেহের ভেতর রয়েছে এক মহাশক্তির অংশবিশেষ। পার্থিব শরীর ধ্বংস না হলেও তা বিনষ্ট হয় না, যা জন্মায় না, যার মৃত্যু হয় না। শ্রীমদ্ভগদগীতার সাংখ্যযোগ-এ বলেছে- অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ংপুরানো না হন্যতে হন্যমানে শরীরে ।। ভ্রান্ত বিবেকবুদ্ধি ও অজ্ঞানতার জন্য আমরা মনে করি দেহটাই সব। আত্মার কথা ভুলে যাই। আত্মার চারপাশে বিরাজ করা এই বিপুলা প্রকৃতি হল সত্ত্ব, রজ ও তম এই তিনটি গুণ বা কোয়ালিটির সাম্যবস্থা।
সাংখ্যদর্শন ও পতঞ্জলির মতে, যোগের লক্ষ্য হল আত্মার স্বরূপ উপলদ্ধি করা। উপলদ্ধি করতে গেলে চিত্তের শুদ্ধি প্রয়োজন। চিত্তশুদ্ধির পথ হিসেবে তাঁরা অষ্টাঙ্গ যোগের কথা বলেছেন। অষ্টাঙ্গ যোগে যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি এই আটটি সোপান বা ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে রয়েছে যম। যম কথাটির অর্থ হল অহিংসা। এক্ষেত্রে অহিংসা বলতে কেবল প্রাণীহত্যা থেকে বিরত থাকা বোঝায় না, কথা- চিন্তা ও কাজে মানুষ বা মনুষ্যেতর কোনো প্রাণীকে আঘাত না করা বোঝায়। দ্বিতীয় সোপান নিয়ম বলতে বোঝায় শুদ্ধ হওয়া। এই দর্শনে বলা হয়েছে শুচি দু-রকমের। সাত্ত্বিক আহার, স্নান, এসবের সাহায্যে দেহকে শুদ্ধ রাখা হল বাহ্যশুচি। এর পাশাপাশি মৈত্রী, দয়া, সন্তোষ, কুচিন্তা, ত্যাগ- এসবের সাহায্যে মনের শুচিতা বজায় রাখা দরকার। আধুনিক গবেষণায় জানা গেছে মনের সঙ্গে দেহের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। ঈর্ষা, রাগ এইসব মানসিক বিকারের ফলে দেহের বিবিধ অসুবিধা দেখা দেয়।
রক্তে অ্যাড্রিনালিন, নর- অ্যাড্রিনালিন, কার্টিজল, টেস্টোরোন এইসব হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে বেড়ে যায় ব্লাডপ্রেসার, করোনারি ধমনির রোগের সম্ভাবনা। কমে আসে ঘুম, হাজির হয় হরেক রকম বিপত্তি। যোগদর্শন আরো বলেছে- শীত- উষ্ণ, সুখ-দুঃখ এইসব বিপরীত অবস্থায় মনের সাম্য বজায় রাখা শুচিতার অঙ্গ।
তৃতীয় স্তরে আসছে আসন। মহর্ষি পতঞ্জলি বলেছেন স্থিরে সুখমাসনম, অর্থাৎ স্থিরভাবে সুখকর অবস্থানই আসন। প্রাচীন ঋষিরা দেখেছিলেন দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়িয়ে-ঘুরিয়ে বিভিন্ন অবস্থানে রেখে কিছু সময়ের জন্য থাকলে শরীরের লক্ষ্যণীয় উন্নতি হয়। দেহের এই বিশেষ অবস্থানগুলিকে আসন বা যোগাসন বলে। হঠযোগ প্রদীপিকা-য় ৮৪ টি আসনের উল্লেখ আছে। ঘেরন্ড সংহিতা-য় বলেছে, দেবদাদিদের মহাদেব চুরাশি লক্ষ আসন জানতেন। আরো বলা আছে এইসব আসনের মধ্যে ১৬০০ টি শ্রেষ্ঠ আসন। তবে গৃহীদের জন্য ৩২ টি আসন উপযোগী।
আধুনিক গবেষণা বলছে, যোগাসনে আমাদের দেহের ভেতর থাকা বিভিন্ন অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি বা হরমোনাল গ্ল্যান্ডগুলি-কে উদ্দীপ্ত করে। শুধু রোগমুক্তিও নয়, দেহের অভ্যন্তরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও গড়ে ওঠে। মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
আসনের পরবর্তী সোপান হল প্রাণায়াম। প্রাণায়াম বলতে বোঝায় প্রাণশক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখা। যোগী যাজ্ঞবল্ক-র ভাষায়-প্রাণাপান সমাযোগঃ প্রাণায়াম ইতীরিতঃ। প্রাণায়াম ইতি প্রক্তো রেচপূরকুম্ভকৈঃ।।
প্রাণ ও অপান বায়ুর পরস্পর সংযোগ। সহজ কথায় বলতে গেলে নির্দিষ্ট আসনে বসে নিশ্বাস, প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের নামই হল প্রাণায়াম। বর্তমানে টিভি দেখে অনেকে যেটা করছেন সেটা মূলত প্রাণায়াম। প্রাণায়ামের তিনটি অবস্থা পূরক, কুম্ভক ও রেচক। গভীরভাবে প্রশ্বাস টেনে ফুসফুসকে বায়ুপূর্ণ করাকে বলে পূরক। এই বায়ুকে ফুসফুসের ভেতর নিশ্চলভাবে ধারণ করাকে বলে কুম্ভক । তারপর ধীরে ধীরে বায়ুকে বের করে দেওয়াকে রেচক বলে।
মোটামুটি হিসেবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুসে সর্বাধিক ছয় লিটার বাতাস থাকতে পারে। একে বলে মোট বায়ুক্ষমতা বা টোটাল লাং ক্যাপাসিটি। আমরা যখন বিশ্রাম করি তখন যে পরিমাণ বায়ু বহন করি ও ত্যাগ করি তাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় টাইডাল ভলিউম বা বাংলায় বলতে পারি প্রবাহী বায়ু। এর পরিমাণ ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিলিটার।
শ্বাসগ্রহণ বা প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমরা ফুসফুসে সর্বাধিক যে পরিমাণ বাতাস গ্রহণ করতে পারি তাকে ইনসিপিরেটরি ক্যাপাসিটি বলে। এর পরিমাণ তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার।
অর্থাৎ আমাদের ফুসফুসের মোট যা বায়ুধারণ ক্ষমতা তার অনেকটা অংশ অকার্যকর থেকে যায়। যাঁরা নিয়মিত প্রাণায়াম করেন তাঁদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বহু অংশে বেড়ে যায়। বাড়ে রক্তের পুষ্টি পরিবহণ ক্ষমতা, কোষ বা কলারসের জলসাম্য বজায় থাকে সঠিক থাকে অল্মক্ষারের সাম্যবস্থা এবং আরো বহু কিছু।
আমরা যখন মাতৃগর্ভে থাকি তখন আমাদের শ্বসন হার মিনিটে ১৪০-১৫০ বার। জন্মের পর তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। শিশুদের প্রশ্বাস-নিশ্বাস হার ৩০-৩৫ বার। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-ব্যক্তির স্বাভাবিক শ্বসন হার ১৪-১৮ প্রতি মিনিট। অবস্থা ও লিঙ্গভেদে এটি পরিবর্তিত হতে পারে। যাঁরা সঠিক পদ্ধতিতে সব নিয়ম মেনে প্রাণায়াম করেন তারা ইচ্ছানুসারে এই শ্বসনহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
না, এসব ডাক্তারি তত্ত্ব শুনিয়ে আর আপনার মাথা ভারি করব না। পরবর্তী পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে। তবে যে কথাটি আগে বলেছিলাম, প্রাণায়াম করার আগে সে সংক্রান্ত সঠিক নিয়ম-কানুন জেনে নিতে হবে। যা শুধু টিভি দেখে শেখা সম্ভব নয়। দরকার অভিজ্ঞ শিক্ষক। তার সঙ্গে প্রয়োজন উপযুক্ত স্থান, বিহিত সময়, পরিমিত আহার ও নাড়িশুদ্ধি। তা নাহলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই-বেশি হতে পারে। ঘেরন্ড সংহতিা-র ৫ম অধ্যায়ের দ্বিতীয় শ্লোকে স্পষ্ট সতর্কবাণী রয়েছে- আদৌ স্থানং ততা কালং মিতাহারং তথ পরম।
নাড়ি শুদ্ধিঞ্চ তৎ পশ্চাৎ প্রাণাময়ঞ্চ সাধয়েৎ।।
রোগ: যোগ বিয়োগ, আস্থা-অনাস্থা; ডাঃ পার্থপ্রতিম; ২৮ মে ২০০৫; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
হ্যাঁ, যে কথাগুলি বলছিলাম। তেমনভাবে কিছু না বুঝে শুনে অনেকেই টিভি দেখে রাতারাতি যোগীপুরুষ বনে গেছেন। এর ফল যে খুব ভালো হয়েছে, সে কথা বলা যায় না। অনেকেই বিপদে পড়েছেন, তার নমুনাও পাচ্ছি। আসলে জীবনে কোনো কিছু পেতে গেলে তার জন্য কিছু ছাড়তে হয়। বহুকাল আগেই বিবেকানন্দ বলে গেছেন, চালাকির দ্বারা মহৎ কার্য হয় না। পাঠ্যপুস্তক না পড়ে শুধুমাত্র গৃহশিক্ষকের তৈরি নোট মুখস্থ করে কেউ যদি ভাবেন ভালো ফল করবেন, তবে তাকে মুর্খ ছাড়া আর কী বলা যায়। যোগ ব্যায়াম বা প্রাণায়াম হল প্রাচীন যোগ দর্শনের অষ্টাঙ্গ যোগের একটি। যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম নিয়ে আগে আলোচনা করেছি। এবার আসা যাক পরবর্তী সোপান প্রত্যাহার-এর বিষয়ে। আমাদের ইন্দ্রিয় বা মন বিভিন্ন সময় বহু অহিতকর বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। যেমন ধরা যাক ধূমপানের কথা। প্যাকেটের উপর স্পষ্ট লেখা থাকে সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। সবাই জানেন, তামাকে ক্যানসার হতেই পারে। ধূমপায়ীরা তা জানেনও। অনেকে হয়তো মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন, কাল থেকে আমি আর সিগারেট ছোঁব না। কিন্তু দিনের পর দিন চলে যায় সেই কাল আর আসে না। নিরন্তর অভ্যাস ও দৃঢ় সংকল্পের সাহায্যে মন ও ইন্দ্রিয়কে অহিতকর বস্তু থেকে সরিয়ে রাখা হল প্রত্যাহার। অষ্টাঙ্গ যোগের যে পাঁচটি সোপানের কথা আলোচনা করলাম, এদের একসঙ্গে বলে বহিরঙ্গ সাধনা। বাকি তিনটি ধারণা, ধ্যান ও সমাধি-কে বলা হয় অন্তরঙ্গ সাধনা। এক্ষেত্রে দেহের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। মন বা অন্তরের নিয়ন্ত্রণটাই মুখ্য । অন্তরঙ্গ সাধনা-র প্রথম সোপান হল ধারণা। এর অর্থ হল চিত্তকে অভীষ্ট বস্তুর উপর রাখা। এই অভীষ্ট বস্তু দেব-দেবী মূর্তি, বিগ্রহ, পুস্তক, ছবি যে কোনো কিছু হতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধক তার দেহের কোনো অংশে (নাভিকুন্ডল, আজ্ঞাচক্র বা দু-ভ্রূর মধ্যবর্তী স্তানে।) মনোনিবেশ করে থাকেন।
অষ্টাঙ্গ যোগের সপ্তম ধাপ হল ধ্যান। অর্থাৎ যে বস্তুর ধারণা হয় তার উপর নিরবচ্ছিন্নভাবে মনকে অবস্থান করানোটাই ধ্যান। স্বামী বিবেকানন্দ বিষয়টিকে কলসিতে জল ভরার সঙ্গে তুলনা করেছেন। প্রথমে কলসিটাকে সঠিক জায়গায় রাখতে হবে; তারপর এক নাগাড়ে জল ঢেলে তা পূর্ণ করতে হয়। কলসিকে সঠিকস্থানে রাখার নাম ধারণা ও তাতে ছেদবিহীনভাবে জল ঢালার নাম ধ্যান। এক্ষেত্রে সঠিক ভাবে ঢালতে না পারলে জলের অপচয় হতে পারে। অহেতুক ক্ষয় হতে পারে আপনার মানসিক শক্তির। নিরন্তর অভ্যাসের ফলে মন এমন একটা শক্তি অর্জন করে যখন ধ্যানের বস্তু সাধকের কাছে আপাত প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। মনের সঙ্গে সেই বস্তুর সহজে বিচ্ছেদ ঘটে না। প্রাণায়ামের সঙ্গে ধ্যান-এর এক গভীর সম্পর্ক রযেছে। বিভিন্ন প্রাণায়ামে কুম্ভককের সময় কী চিন্তা করতে হবে তার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ রয়েছে যোগগ্রন্থ গুলিতে।
যোগের শেষ সোপান হল সমাধি। সমাধিতে ধ্যানের বস্তু ও সাধক একীভূত হয়ে যায়। দুইয়ের মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকে না। সমাধি নামক ক্রিয়া দ্বারা কোনো বিশেষ অবস্থায় ব্যক্তির চেতনা থাকে না। সাধক সমাধি অবস্থায় নিজের সত্ত্বাকে সম্পূর্ণভাবে ইপ্সিত বস্তুর মধ্যে বিলীন করে দেন।
যোগ হল আমাদের ভারতীয় দর্শনের প্রাচীন সম্পদ। এ বিষয়ে আরো ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার। ঈশ্বর বিশ্বাসী-ভাববাদী বলে এগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিত নয়। তাতে আমাদেরই ক্ষতি। কবিগুরু তাঁর কাব্যে বলেছিলেন- স্বদেশের কুকুর ধরি বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া। আমরা এতদিন এর উল্টোটাই করে চলেছি। স্বদেশি সম্পদকে দূরে সরিয়ে রেখে, লালমুখো সাহেবদের অন্ধ অনুকরণ করেছি। পাপের পল অনেকটাই এখন হাতেনাতে পাচ্ছি । আর বেশি দেরি হওয়ার আগে আমাদের স্বস্থানে ফিরে আসা উচিত।
যোগাসনের কথায় আবার ফিরে আসা যাক। পাশ্চাত্যের যে সব ব্যায়াম বা এক্সাসারসাইজ রয়েছে তা মূলত শ্রমসাধ্য বা যন্ত্র নির্ভর। দেহের পেশিতে অতিরিক্ত সঞ্চালন ঘটিয়ে তার মধ্যে রক্ত সংবহনের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে পেশির ভেতরে থাকা মেদ বস্তু জারিত হয়ে তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। দেহপেশি হয় মেদযুক্ত ও সুদূঢ়। সাইড টুইস্টিং, ওয়েট নিয়ে সাইড বেন্ডিং, ওয়াকার, ভাইব্রেটার, রোলার স্পট রানিং-এইসব বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্যে এ ধরনের ব্যায়াম করা যায়।
যোগাসন কাজ করে অন্যভাবে। এক্ষেত্রে পেশির কার্যকারিতা বৃদ্ধি মুখ্য নয়। মূলত দেহের ভেতর থাকা বিভিন্ন হরমোনাল গ্ল্যান্ড বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিকে দীপ্ত করা এই ব্যায়ামের লক্ষ্য।