যৌনমিলন যখন ‘সন্ত্রাস’; -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ২৮ নভেম্বর ২০০৯; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
ফুলশয্যার রাতে শরীরী-সখ্যে উপনীত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই যোনিপথে ফোঁড়া ফেটে যাওয়ার সময় যেরকম ব্যথা হয়, সেরকম ব্যথায় ককিয়ে উঠেছিলেন জুলি বয়ডি (২৬)। জুলির কথায়, ‘যোনির ভেতরটা এমনভাবে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল কেউ যেন লাগাতার সূচ বিঁধিয়ে চলেছে। এই জ্বলুনি-ব্যথা চলতেই থাকে। সপ্তাহেরও বেশি।’ দ্বিতীয় বার মিলনের পরও একই অভিজ্ঞতা।
এরপর স্বামী মাইককে নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। মাইকের শুক্রাণুকে জুলির শরীর ‘অনুপ্রবেশকারী প্রোটিন’ ভাবছে। তাই সেই শত্রু শুক্রাণু যোনিগর্ভে থেকেই সেগুলোকে মেরে ফেলা/ নিষ্ক্রিয় করার জন্য উঠে পড়ে আক্রমণ চালাচ্ছে জুলির শরীর। শুক্রাণু-সকল নিষ্ক্রিয় না হওয়া পর্যন্ত সেই আক্রমণ চালাতেই থাকছে।
যৌনমিলনেও স্মৃতি টাল খায়!
রাতে হালকা মাথাব্যথা নিয়েই শুয়েছিলেন, ওষুধ-টষুধ আর খাননি। ভোরের দিকে স্বামীর সঙ্গে যৌনমিলনের পর সকালে উঠে যখন চা খাচ্ছেন, তখন তাঁর বিভিন্ন প্রশ্নে চমকে ওঠেন স্বামী স্কট। দেখেন তাঁর স্ত্রী অ্যালিস কোথায় রয়েছেন তা বলতে পারছেন না। দেশের প্রেসিডেন্টের নাম ওবামার বদলে বিল ক্লিনটন বলছেন। টিভিতে খেলা দেখতে দেখতে বলছেন, আমরা তো এখন মাঠে বসেই অলিম্পিক দেখছি। ৫৯ বছর বয়সি স্ত্রীর স্মৃতির এই টাল খাওয়া দেখে হতভম্ব স্কট সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা অ্যালিসকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানান, ওঁর সম্ভবত স্ট্রোক হয়েছে। ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা আবিষ্কার করেন, ট্রানজিয়েন্ট গ্লোবাল অ্যামনেজিয়া-য় আক্রান্ত হয়েছেন অ্যালিস। যৌন উদ্দীপনার প্রাবল্যে স্নায়ুর পীড়নে এরকম হয়েছে। পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাদের ক্ষেত্রে কারও কারও এরকম হয়েই থাকে। স্মৃতিশক্তি সাময়িক টাল খায়। চিকিৎসার পর ঠিক হয়ে যায়।
শুধু যৌন সংসর্গের পরই হয় এমন নয়, কারও কারও ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করার পর হয়, কারও কারও হয় হঠাৎ করে বরফ ঠান্ডা জলে ডুব দিলে কিংবা খুব গরম জলে স্নান করলে। যাঁরা মাইগ্রেনের রোগী এবং মাঝেমধ্যেই মাথাব্যথায় ভোগেন, তাঁদেরও যৌনমিলনের পর এরকম সাময়িক আংশিক স্মৃতিলোপ হয়।
ঘুম কম হলেও
যাঁদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, ঘুম কম হয়, বিশেষত বয়স্কদের মধ্যে ঘুম হওয়ার জেরে টাইপ টু ডায়াবেটিস হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর গবেষকরা জানিয়েছেন, ঘুম কম হলে শরীরের মধ্যেকার বিপাকক্রিয়ায় নাটকীয় গোলোযোগ ঘটে। ইনসুলিনের উপাদান কমে যায়। বন্ধ হয়ে যায়। ইনসুলিন হরমোনের অভাবে সুগার থেকে এনার্জি তৈরির পথে প্রতিবন্ধকতা হয়। সুগার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতায় রক্তে গ্লুকোজ তথা সুগারের আধিক্য ঘটে। স্রেফ তিন রাত কম ঘুমোলেই ওজন অনেকটা বেড়ে যায়। বয়স বাড়তে থাকা, ঘুম কমতে থাকা, এরকম হতে হতে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেড়েই চলে। জার্নাল প্রসিডিংস অফ দি ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসে এই গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করে বলা হয়েছে, বয়স্ক হলে বিঘ্নহীন গভীর ঘুম যাতে হয়, সেদিকে মনোযোগ দিন। ৭ ঘন্টা নিরুপদ্রব ঘুম হলে শুধু ডায়াবেটিসের আশঙ্কাই দূর হবে তা নয়, উচ্চ রক্ত চাপে ভুগতে হবে না, স্মৃতি শক্তি হ্রাস পারে না। মুটিয়ে যাবেন না।