চিন পারে, আমরা পারি না

চিন পারে, আমরা পারি না

চিন পারে, আমরা পারি না; -ডাঃ পার্থপ্রতিম;৭ জুলাই ২০০৭;উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত উত্তরবঙ্গ সংবাদ
 দেশের তাবৎ কৃষিজীবীদের জন্য সুলভ চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু হয়ে গেল চিনে। কৃষকদের চিকিৎসা খরচের অর্ধেক বহন করছে সরকার। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে কোনো অসুস্থ কৃষক বা তার পরিবারের কাউকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাছাকাছি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হলে, সেই পরিবারকে একটা শূকর বিক্রি করে অ্যাম্বুলেন্স খরচ মেটাতে হতো। আর কেউ যদি কিছুদিন হাসপাতালে শয্যাশায়ী থাকতেন, তাহলে কৃষিখামার থেকে এক বছরে যা আয় হতো, তাঁর সবটাই চিকিৎসার জন্য খরচ হয়ে যেত। আর গুরুতর রোগভোগে ১০ বছরের সঞ্চয়-ভাঁড়ার খালি হয়ে যেত। এখন আর তা হচ্ছে না। যে চিকিৎসা বিমা চালু হয়েছে, তাতে একজন বিমাকারী কৃষক ৫৫ টাকা দিলে, সরকার দেবে আরো ৫৫ টাকা। যেসব চিকিৎসার জন্য পঁচাশি হাজার  টাকা পর্যন্ত  খরচ হবে, তার ৩০ শতাংশ স্থানীয় প্রশাসন মিটিয়ে দেবে। তার ওপরে, ২ লাখ  ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হলে ৪৫ শতাংশ দেবে সরকার। যাঁদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তারও বেশি খরচ হবে, যে টাকা খরচ হবে, তার অর্ধেক দেবে সরকার। আশির দশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারযজ্ঞ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত চিনে কৃষকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করত কমিউন। সেই পরিসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে খাওয়ার ব্যয়ভার বহন করতে পারতেন না। চিকিৎসাই করাতেন না।

এইসব গ্রামীণ জনসাধারণের ৮০ শতাংশকে স্বাস্থ্য শুশ্রষা বিমার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও। মার্চে জাতীয় সংসদে বক্তৃতা দিয়ে বলেছিলেন, তিনি চান, ডিসেম্বরের মধ্যে এই বিমার সুযোগ দেশের প্রান্তে-প্রত্যন্তে পৌঁছে দেওয়া হোক। চিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এই আদেশ পালন করে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে তাঁরা সময় নিয়েছিলেন মাত্র এক মাস। বার্ষিক ৫৪৬০ কোটি টাকার এই স্বাস্থ্য শুশ্রষা বিমা চালু করায় দেশের ভেতরে এবং বাইরে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে চিন। পাশাপাশি সমালোচনাও শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চিনের নগর এবং শহরগুলির জন্য স্বাস্থ্য পরিসেবায় যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয়, দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ গ্রামীণ অধিবাসীর ক্ষেত্রে সেই বরাদ্দ মাত্র ২০ শতাংশ। হিউম্যানিটারিয়ান অর্গানাইজেশন প্ল্যান ইনটারন্যাশনালের প্রতিনিধি জেমস মুরে জানাচ্ছেন, গ্রামের মানুষের জন্য চিকিৎসা যেমন সহজলভ্য করতে হবে, তেমনই চিকিৎসা সম্পর্কে ওঁদের প্রাথমিক শিক্ষাও দিতে হবে।

Join our mailing list Never miss an update