মধুমাসে মধুবনে বসন্তবাসর; সুকন্যা আচার্য; ৯ মার্চ ২০০৪, পৃষ্ঠা- ৬; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
ডুয়ার্সের ছোট্ট জনপদ বানারহাটের আদর্শপল্লীতে রয়েছে মধুবন বিতান। ফুল, গাছপালা, খড়ছাওয়া কুটির-আদ্যোপান্ত আশ্রমিক পরিবেশ। গত মার্চ ডুয়ার্স এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট রিভেলি (ডিয়ার)-এর ব্যবস্থাপনায় ও নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সন্মেলন-এর সহযোগিতায় এখানেই বসেছিল বসন্তবাসর। সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে কবিতাপাঠ, স্মৃতিচারণ, মজার আড্ডা ও নাচগান।
অনুষ্ঠানে প্রদীপ প্রজ্বলন করে প্রবীণ শিক্ষক শৈবাল ভট্টাচার্য বলেন, এ ধরনের গুণীজনের সমাবেশ এর আগে কখনও হয়নি। বানারহাটের ইতিহাসে এটি একটি নজির হয়ে থাকল। এই আসরে অংশ নেন কোচবিহার, মাথাভাঙ্গা, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি, চ্যাংরাবান্ধা, জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি, অসম, চট্টগ্রাম থেকে আসা কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, প্রাবন্ধিক, সাহিত্যপ্রেমী মানুষেরা। ‘ডিয়ার’- এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষ স্বাগত ভাষণে বলেন, ‘দীর্ঘ তেরো বছর ধরে বিজ্ঞান সচেতনামূলক কাজ করে চলেছে এই সংগঠন। তাই ঋতু বন্দনার মধ্য দিয়ে এই বাসন্তিক অনুষ্ঠানের অয়োজন।’ এই বসন্তবাসর উপলক্ষ্যে ‘ডিয়ার’-এর মুক্তমঞ্চ ‘সেজুঁতি’-র উদ্বোধন করেন আকাশবাণী শিলিগুড়ির কেন্দ্র অধিকর্তা শ্রীপদ দাস। এ অঞ্চলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এখানে এসে নাচগান, আবৃত্তির মহড়া দেবে। তাদের মঞ্চভীতি কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা। শ্রীদাস তাঁর ভাষণে উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। জনপ্রিয় অবৃত্তিকার স্বর্ণকমল চট্টোপাধ্যায় অতীতের কাব্য সাহিত্যের কথা আলোচনা করেন। উদ্দাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করে শোনান আকাশবাণী শিলিগুড়ির ঘোষক অতনু চৌধুরি।
সম্মানীয় অতিথিরা ছিলেন অধ্যাপক অর্ণব সেন, গবেষক ডঃ রমাপ্রসাদ নাগ, ‘কিরাতভূমি’র সম্পাদক অরবিন্দ কর, মাথাভাঙ্গার মানসাই টাইমস-এর সম্পাদক বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়, খ্যাতনামা শায়ের অসিত সরকার, উত্তরবঙ্গ নাট্যজগতের সম্পাদক বিপদভঞ্জন সরকার, কবি পুণ্যশ্লোক দাসগুপ্ত, জেলা বাস্তুকার ও ‘উত্তরের হাওয়া’ পত্রিকার সভাপতি কবি গোপাল মন্ডল।
অনুষ্ঠানে শিশু শিল্পীদের পরিবেশিত বসন্ত বিষয়ক বর্ণাঢ্য নৃত্য উপস্থিত সকলের মন কেড়ে নেয়। ছড়াকার অমিতকুমার দে স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য ফুটিয়ে তোলেন। উপস্থিত ছিলেন ‘মুক্তচিন্তা’র সম্পাদক শচীমোহন বর্মন, ভ্রমণ সাহিত্যিক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য, ‘প্রবাহ তিস্তা তোর্সা’র সম্পাদক ডঃ কৃষ্ণ দেব, ডাঃ বিজয়ভূষণ রায়। কাজি গোলাম কিবরিয়া তাঁর শায়েরি শুনিয়ে অনুষ্ঠানে অন্যমাত্রা যোগ করেন। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের তূর্যবাদক ও ভূপর্যটক আশিস মুখোপাধ্যায়ের এই বাসরে নানান দেশের কথাসাহিত্যের প্রসঙ্গ টেনে এনে তুলনামূলক আলোচনা করেন। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার উল ইসলাম বলেন, ভাষা সাহিত্যকে কেন্দ্র করে দু’বাংলার মেলবন্ধন আরো সুদৃঢ় করা যেতে পারে। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সন্মেলন জলপাইগুড়ি শাখার সম্পাদক ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালযের অধ্যাপক ডঃ আনন্দগোপাল ঘোষ সুষ্ঠু সাহিত্য সংস্কৃতি প্রসারের কাজে নবীন প্রজন্মকে আরো ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
‘ডিয়ার’-এর সভাপতি ডাঃ পার্থপ্রতিম বলেন ‘উত্তরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকদের মধ্যে নিয়মিত মত বিনিময় ও ভাবের আদান-প্রদান খুবই জরুরি। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এই বসন্তবাসর। সাহিত্যপ্রেমী সুবিমল দাসগুপ্ত এই আসরে তাঁর স্বরচিত গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কবি সুনীলকুমার চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে উপস্থিতি সকল অতিথি ‘ডিয়ার’-এর স্বেচ্ছাসেবকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ‘ডিয়ার’-এর পক্ষ থেকে কবি-সাহিত্যিকদের হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হয়। নাচ, গান, আড্ডা, কাব্যপাঠ, বসন্ত বিষয়ক বিভিন্ন পোস্টার, সবকিছু মিলিয়ে এই আসর অভিনবত্বের দাবি রাখে।