কারণবারির ব্যাকরণ

কারণবারির ব্যাকরণ

ভ্যবসা গরম, সাথে রিম-ঝিম-ঝিম বৃষ্টি। এই অম্বরঘন কুঞ্জছায়ায়, যারা লকডাউনের বিষাদ কাটাতে বিপিনবাবুর কারণসুধার রসাস্বাদন করেন; তাদের শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য গবেষণাধর্মী প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলেন- ডাঃ পার্থপ্রতিম। নীলপাখি পত্রিকার প্রস্তুতি সংখ্যা আগস্ট ২০১৩ প্রকাশিত
বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল. . .  নয় । ভরা ভদরে বৃষ্টিধারার আমেজ ... আমাদের বলাকা মনকে নিয়ে যায় বিরহ কল্পলোকে। বর্ষা হৃদয়কে নষ্ট্যালজিক করে। মন টানে সুদুর রামগিরিতে।  এ লগনে যারা আড্ডা-সুর-সঙ্গীতেই মাতোয়ারা, যাদের আর কোন মাদকতার প্রয়োজন নেই, অমৃতে যাদের অরুচি -তারা নমস্য। কিন্তু যারা আমার মতো অন্যরকম মৌতাতে মাতেন; তাদের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কিছু ব্যাকরণ মেনে চলতে হবে।

    ব্যাকরণ জানার আগে, সুরা বা মদের ইতিকথাটা একটু নাড়াচাড়া করে দেখা যাক্ । আর্যদের কাছে যে সোমরস এক উত্তেজক পানীয় ছিল সে অনেকেরই জানা। ঋক্বেদে সোম নামে এক লতাজাতীয় গাছের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই লতা একটু গরম করে পাথরে ছেঁচে, হাতের দশ আঙ্গুলে নিংড়ে তা থেকে রস বার করা হতো। তারপর ভেড়ার রোম থেকে তৈরী এক বিশেষ ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে; দুধের সাথে মিশিয়ে পান করা হতো সোমরস। এর রঙ ছিল সাদা, খেতেও একটু টক টক। শরীরে মাদকতা ও উত্তেজনা তৈরী করতো এই ঋক্বেদের নবম মন্ডলে এই সোমরসের বর্ণনা রয়েছে। প্রায় ১২০টি সূক্তে সোমরসের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর্যদের পূজা ও যাগযজ্ঞে এটি ছিল অত্যাবশ্যক উপাদান।
   তবে প্রাচীন সোমরসই বর্তমানের মদ এমন একটি ধারণা অনেকের মধ্যেই রয়েছে। এটা একেবারেই ভ্রান্ত। শুধু নেশার বিষয়টি ছাড়া সোমরসের সাথে বর্তমানে প্রচলিত মদের কোন সম্পর্ক নেই। সোমলতা আসলে কোন্ গাছ; ঐতিহাসিক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা তা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্ণিত করতে পারেননি। প্রাচীন ইরান অঞ্চলে যাগযজ্ঞে সোমরসের ব্যবহার ছিল বলে বিভিন্ন পুঁথিতে উল্লেখ পাওয়া যায়। এখনো পার্সীদের কিছু সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় উৎসবে এফিড্রা গাছের রস পান করেন। যার মধ্যে এফিড্রিন নামক মাদক থাকে। ঋক্বেদের অনেক পরে লেখা ঐতরেয় ব্রাহ্মণে স্পষ্ট লেখা আছে মদ বা সুরা এবং সোমরস আলাদা। হয়তো পরবর্তী সময়ে পার্বত্য সোমলতা তেমনভাবে মিলতো না তাই কিছু ব্রাহ্মণ সুরা বা মদকে সোমরসের মতো ব্যবহার করার বিধান দিয়েছিলেন। তন্ত্রমতে কালিপূজার অন্যতম উপকরণ কারণবারি। বিভিন্ন উপজাতি ও জনজাতির ধর্মীয় আচার- অনুষ্ঠানে দেবতার উদ্দেশ্যে মদ বা সুরা উৎসর্গ করার প্রচলন রয়েছে।

   প্রাচীন আয়ুর্বেদের চরক ও সুশ্রুতের গ্রন্থে বিভিন্ন মদের হদিস পাওয়া যায়। চরকসংহিতায় ৮৪ ধরনের মদ বা সন্ধিত পানীয় বা ‘আসব’-এর উল্লেখ রয়েছে। তৈরীর উপাদান অনুসারে এদের বিভিন্ন প্রকারভেদ ছিল। যেমন- ধান জারিত করে তৈরী হতো ধান্যসব, ফল থেকে ফলাসব, ফুল থেকে পুষ্পাসব, গুড় থেকে শর্করাসব আরো কত কিছু। চরক সুশ্রুতের আমলে রোগীর চিকিৎসায় ও দুর্বল মানুষকে চাঙ্গা করার জন্য এইসব আসব পানের বিধান দেওয়া হতো। বর্তমানে মদ সারা পৃথিবীতে অ্যালকোহল নামেই পরিচিত। ‘অ্যালকোহল’ শব্দটি এসেছে আরবী থেকে। আসলে আরবীয়রাই ৮০০ খ্রীষ্টাব্দে বানিজ্যিক ভাবে ব্যাপক পরিমাণে মদ তৈরীর কলাকৌশল রপ্ত করে। তারপর ইউরোপে লাভজনক ব্যবসা গড়ে তোলে। হাল আমলে প্রচলিত যেসব মদ রয়েছে; যেমন- হুইস্কি, রাম, ব্রান্ডি, ভদকা, জিন, বীয়ার সবারই মূল মাদক এই অ্যালকোহল। আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে ইথাইল অ্যালকোহল। সব মদ তৈরীর মূল উপাদান কার্বোহাইড্রেট বা শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যবস্তু। সুরা বা ইথাইল অ্যালকোহল পানের পর তা পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে সরাসরি রক্তে মেশে। অর্থাৎ পৌষ্টিকতন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সময় ইথাইল অ্যালকোহলের তেমন কোন রাসায়নিক পরিবর্তন হয় না। প্যারাসিটামল ওষুধের মতো মদও পাকস্থলীর ভেতরের দেওয়াল থেকে শোষিত হয়ে রক্তে মিশে যায়। সেকারণেই সুরাপানের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রক্ত পরীক্ষা করলে ইথাইল অ্যালকোহলের উপস্থিতি ধরা পড়ে। তবে অ্যালকোহল শোষনের বেশীরভাগটাই হয় ক্ষুদ্রান্ত্রে। মদ্যপানের এক থেকে দেড়ঘন্টার মধ্যে রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায়। তারপর তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। রক্তে কী পরিমাণে অ্যালকোহল মিশবে তা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। গবেষণা থেকে জানা গেছে বেশীমাত্রায় মদ খেলে রক্তে সেই অ্যালকোহল মিশতে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলি বাধা দেয়। উচ্চমাত্রার অ্যালকোহল পাকস্থলীর সংকোচন-প্রসারণ হারকে কমিয়ে দেয়। তাছাড়া পাকস্থলী থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে যাওয়ার পথে যে দরজা বা পাইরোলিক স্পিংটার আছে তা সংকুচিত হয়ে পড়ে। মদ্যপদের সেসময় বমিভাব হয়। তখন বমি হয়ে গেলে শরীর থেকে অ্যালকোহল বেরিয়ে যায়।

মদের সাথে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অথবা মিষ্টি খেলে পাকস্থলী থেকে অ্যালকোহল রক্তে ঠিক মতো মিশতে পারে না। সেটি ক্ষুদ্রান্ত্রে চলে যায়। সেক্ষেত্রে ধীর গতিতে নেশা জমে। এই ধীর গতিতে নেশা জমার জন্য অনেকে আবার বেশী পরিমাণ মদ খেয়ে বিপদ ডেকে আনেন। সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে যারা নিয়মিত মদ খান তাদের ক্ষেত্রে অ্যালকোহল শোষণহার ও হজম করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। হজমও হয় তাড়াতাড়ি। আরো দেখা গেছে যে নিয়মিত একই ব্রান্ডের মদ খান তার ক্ষেত্রে সেই ব্রান্ডের মদ হজম করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। যেমন- যিনি নিয়মিত হুইস্কি খান তার তাতে তেমন প্রভাব দেখা দেয় না; তবে তিনি যদি আবার রাম বা ভদকা খান সেক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যরকম হবে।
    পরিপাকতন্ত্র থেকে মদ রক্তে মিশলে তা দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। ফুসফুস শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে অ্যালকোহল বের করে দিতে থাকে। কিডনি প্রস্রাবের মধ্যে দিয়ে ও ঘর্মগ্রন্থি ঘামের মাধ্যমে অ্যালকোহল দেহের বাইরে বের করে। অ্যালকোহলের মূল বিপাক প্রক্রিয়া হয় লিভার বা যকতে।ৃ অ্যালকোহল যুক্ত রক্ত লিভার দিয়ে যাওয়ার সময় লিভারের বেশ কিছু এনজাইম বা উৎসেচক অ্যালকোহলকে অ্যাসিট্যালডিহাইডে পরিণত করে। যকতকোষেরৃ সাইটোপ্লাজমে থাকা অ্যালকোহল ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইম ও নিকোটিনাইড অ্যাডেনিন ডাইনিউক্লিওটাইড উৎসেচক অ্যালকোহলকে অ্যাসিট্যালডিহাইডে পরিণত করে। যারা নিয়মিত সুরাপান করেন তাদের ক্ষেত্রে যকতৃ কোষে থাকা মাইক্রোসোমাল ইথাইল অক্সিডাইজিং সিস্টেম বা এম.ই.ও.এস অ্যালকোহল বিপাকে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেকারণে সামান্য পরিমাণ মদ তাদের আচরণে তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না।

    সুরা শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছালেও সবচেয়ে বেশী প্রভাব ফেলে আমাদের মস্তিষ্কে। মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা পরিবর্তন করে দেয়। নিউরোট্রান্সমিটার একধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন কাজ কারবারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। মদ্যপানের মিনিট দশেকের মধ্যেই রক্তের মাধ্যমে মদ মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সে সবচেয়ে প্রথম দেখা দেয় সুরাপানের প্রভাব। এই সেরিব্রাল কর্টেক্স থেকেই আমাদের চেতনা, স্বভাব, আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয়। এই সেরিব্রাল কর্টেক্সের স্নায়ুবিক গঠনের জন্যই আমাদের নবীন মাষ্টার লাজুক- মুখচোরা আর সুকল্যাণবাবু হামবড়া ও অতিমাত্রায় এক্সট্রোভার্ট। পরিমিত মদ্যপানে সেরিব্রাল কর্টেক্স বা গুরু মস্তিষ্কে কিছু ভালো প্রভাব দেখা যায়। হীনমন্যতা ও নার্ভাসনেস কাটে। অনেক গায়ককে দেখা যায় মদ্যপানের পর গলাছেড়ে -প্রাণখুলে গান করেন। অনেক শল্য চিকিৎসক সুন্দরভাবে জটিল অপারেশন করেন।
    সেরিব্রেলাম বা লঘু মস্তিষ্ক থেকে দেহের মোটর নার্ভগুলি নিয়ন্ত্রিত হয়। আমাদের হাঁটা-চলা, নড়াচড়া, শারীরিক ভারসাম্য কন্ট্রোল হয় সেরিব্রেলাম অঞ্চল থেকে। অতিমাত্রায় মদ্যপানে এই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। সেকারণেই আমাদের বিজয়বাবু প্রায় রাতেই টলমল পায়ে বাড়ি ফেরেন। সন্ধ্যার পর কৌশিকদার কথাগুলি কেমন জড়িয়ে জড়িয়ে যায়।
   আমাদের দেহের হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে আসা হরমোনগুলি দেহ ও মনের বিভিন্ন আবেগ- অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। মদ্যপানের পর এই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে আসে। তাই বেশীরভাগ মানুষের মধ্যে সুরাপানের পর যৌন আকাঙ্খা বেড়ে যেতে দেখা যায়।

    মদ আবার ব্রেন স্টেম বা মস্তিষ্কের মজ্জায় প্রভাব ফেলে। ফলে ঠান্ডার অনুভূতি কমে যায়। এ কারণে শীতপ্রধান দেশে সুরাপানের প্রচলন বেশী। সেদেশে মদ্যপান সামাজিকভাবেও নিন্দনীয় নয়। মদ বা সুরা বিভিন্ন রকমের রাম, হুইস্কি, ভৎকা, জিন, বাঙলা আরো কত কী ! প্রতিটি মদ তৈরীর উপকরণও আলাদা। যেমন- সিডার তৈরী হয় আপেল থেকে এর মধ্যে আয়তন অনুপাতে অ্যালকোহল থাকে শতকরা ১-২ ভাগ। ওয়াইন এর উপাদান আঙ্গুর। এতে অ্যালকোহল থাকে ৮- ১০ শতাংশ। অনেকের ধারণা বীয়ার তৈরী হয় চিরতার রস থেকে; এটা একেবারেই ভ্রান্ত। বার্লি থেকেই তৈরী হয় বীয়ার; তবে এর মধ্যে হপস ও গ্লিসারিন মেশানো থাকে। সেকারণে এটি খাওয়ার সময় কোন গলা বা বুকজ্বালা হয় না, খেতে একটু তেতো লাগে। স্বাভাবিকভাবে বীয়ারে অ্যালকোহলের মাত্রা থাকে তিন থেকে ছয় শতাংশ, তবে কিছু কিছু কোম্পানি তা বাড়িয়ে আট শতাংশ করেছে। সিডার, বীয়ার, ওয়াইন, শ্যামপেন এসবগুলিই তৈরী হয় অপাতিত বা আনডিস্টিলড পদ্ধতিতে তাই এইসব মদে কিছু পরিমাণ ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ও প্রোটিন থাকে।
    এছাড়াও পাতিত বা ডিস্টিলড্ মদ রয়েছে। যেমন- হুইস্কি, রাম, ব্রান্ডি, ভৎকা আরো সব। রাম তৈরী হয় গুড় থেকে, ব্রান্ডি আঙ্গুর থেকে, বার্লি থেকে হুইস্কি ও জিন-এর উপাদান ভুট্টা। কিছু কিছু মদে আবার কোন কোন অঞ্চলের আইকন হয়ে গেছে যেমন- ভৎকা- রাশিয়া, মাওতাই- চীন।

কারণবারি সেবায় যে ব্যাকরণগুলি মেনে চলা দরকার-
সূর্য ডোবার আগে কখনোই পানের আসরে বসবেন না। আয়ুর্বেদের প্রাচীনগ্রন্থ ‘মাধবনিদান’- এ এই নিষেধের বিস্তারিত উল্লেখ আছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানী পি.এল হফম্যান ও বি.তবাকফ্ তাদের গবেষণাধর্মী বই- ‘অ্যালকোহল ডিপেন্ডেন্স: এ কমেন্ট্রী ওন মেকানিজিম’-এ গ্রীষ্মপ্রধান দেশে দিনের বেলায় মদ্যপান ত্যাগ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। কারণবারি পানের আধাঘন্টা থেকে একঘন্টা আগে মুড়ি, চিড়া বা সেঁকা খাবার দিয়ে হাল্কা টিফিন করুন। তেলেভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রতি পেগ মদের সাথে দেড়শো মিলিলিটার জল/সোডা বা কোলা মেশান। হুইস্কির সাথে সোডা, রামের সাথে কোলা, জিনের সাথে সোডা ও লেবুর রস মিশিয়ে লাইম কর্ডিয়াল বানাতে পারেন। ফরেন লিকার খাওয়ার ক্ষেত্রে যাদের পকেট পারমিট করে না, যারা ‘বাঙলা’ খান; তারা বাঙলার মদের সাথে বেশ পরিমাণ ডাবের জল মেশাবেন। বাঙলা মদের অ্যালকোহল ঠিক মতো পরিশ্রুত থাকে না। ইথাইল অ্যালকোহলের সাথে আরো কিছু রাসায়নিক থাকে যা স্নায়ু ও রক্তসংবহনতন্ত্রের ক্ষতি করে। ডাবের জলে বেশ কিছু ট্রেস এলিমেন্ট ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার হৃদযন্ত্র ও রক্তসংবহনকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে। আর দেশীয় পানীয় যেমন- চোলাই, তাড়ি, হাঁড়িয়া এসব কোন অবস্থাতেই খাবেন না। এগুলি তৈরীর ক্ষেত্রে কোন প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এসবের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর ঘটনা খুবই শোনা যায়।
পানের টেবিলে কখনোই তাড়াহুড়া করবেন না। ইয়ার-দোস্তদের কাছে কেতা নেওয়ার জন্য এক চুমুকে পেগ শেষ করতে যাবেন না। প্রতি পেগ শেষ করতে কম পক্ষে ২০ মিনিট সময় নিন। প্রতি চুমুকে অল্প অল্প করে আমেজ নিয়ে পান করুন। মদের সাথে বেশি ভাজাভুজি না খাওয়াই ভালো। শশা, মুড়ি, সেঁকা পাঁপড় চলতে পারে। তেল মশলা দেওয়া মুখরোচক খাবার খাবেন না। পানের টেবিলে যেসব খাবার খাবেন তার ক্যালোরিটিক ভ্যালু কম থাকা দরকার। রাতের খাওয়ার আধঘন্টা আগেই পান শেষ করুন; বটম আপ করে দিন। পার্টি বা আড্ডায় কারণবারি সেবার পর কোনরকম বিতর্কে যাবেন না। আগেই বলেছি এসময় স্নায়ুতন্ত্র উত্তেজিত থাকে। সামান্য কথা থেকে বড়সড় ঝামেলা বাধতে পারে। যা সবার কাছেই অস্বস্তিকর। পানপেয়ালা হাতে মেলোডিক গান শুনুন বা হাল্কা খোশগল্প করুন।
পানের মাত্রাটা দু’ থেকে আড়াই পেগের মধ্যে রাখুন। মনে রাখতে হবে অ্যালকোহল বা মদ পান তেমন কিছু খারাপ বিষয় নয়; যদি সেটা মাত্রার মধ্যে রাখতে পারেন। বহু প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসায় ও স্বাস্থ্য উদ্ধারে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে মাত্রা ছাড়ালে সব কিছুতেই বিপদ। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এই সত্য প্রকাশমান। প্রাচীন প্রবাদ বলে-
        “অতিদর্পে হতা লঙ্কা         অতি মানে চ কৌরবাঃ।
        অতিদানে বলিবর্দ্ধঃ         সর্বমত্যন্ত- গহির্তাম্ ।।”

Join our mailing list Never miss an update