ঠান্ডা লেগে সর্দিতে নাকবন্ধ? -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ৯ জানুয়ারি ২০১০; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
ঠান্ডা যত জাঁকিয়ে পড়তে থাকে, আমাদের নাক তথা নাসারন্ধ্র তত দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যায়। একদিকে কান, অন্যদিকে নাসিকার এই দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে ভাইরাসেরা শরীরে ঢুকে পড়ে চুড়ুইভাতি শুরু করে দেয়। একশোরও বেশি কোল্ড ভাইরাস বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। ফলে একবার আক্রান্ত হওয়ার পর ফের আক্রান্ত হন অনেকেই। চোখ চুলকায়, নাক দিয়ে জল ঝরে, হাঁচি, সর্দিতে সেঁটে যায় নাক। ব্যাপক অস্বস্তি। এ সময় কী করবেন? সেভাবে কোনো চিকিৎসা নেই। ডাক্তারি শাস্ত্রের পুরানো প্রবাদ বলছে, ঠান্ডা বসে যাওয়া/ লেগে যাওয়া আটকানোর চিকিৎসা করালে তা এক সপ্তাহে সারে। না চিকিৎসা করা হলেও এক সপ্তাহেই সারে! শুশ্রুষা না করে কি থাকা যায়? না। আর যায় না বলেই কেউ নাক দিয়ে ফুটন্ত জলের বাষ্প টানেন, কেউ অ্যাসপিরিন বা ইকোস্প্রিন খান, কেউ খান সলভিন কোল্ড ওষুধ, কেউ প্যারাসিটামল, কেউ আইবুপ্রোফেন। তবে সেঁটে যাওয়া নাসারন্ধ্র সাফাই করার সবচেয়ে ভালো দাওয়াই হল, এক লিটার ইষদুষ্ণ জলে আধ চা চা-চামচ সোডিয়াম বাই কার্বোনেট তথা খাওয়ার সোডা মিশিয়ে নিয়ে সেই জল টেনে টেনে নাক পরিষ্কার করা। কোনো ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করবেন, তিনি বলে দেবেন এতে কতটা উপকার হয়। সর্দি সংক্রামক ব্যাপার, তাই ভিড় বাসে- ট্রেনে ওঠার আগে নাক, কান ঢেকে নিন। ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে যখন অন্যান্যদের সঙ্গে অপেক্ষায় বসে থাকছেন, তখনও হাতে মোজা লাগান। নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। নাহলে বাসে দাঁড়াবার হাতল, দরজা এসব ছুঁয়ে নাক, কান, চোখে হাত ঘষলেই চলে আসবে ভাইরাস। কোল্ড ভ্যাকসিন ইনজেকশন নিতে যাবেন না, কারণ ওগুলি কোনো উপকারই করে না। তবে লেবু জাতীয় ফল সহ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার একটু বেশি খেতে পারেন এইসময়। কোল্ড ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন কম। খেতে পারেন কোবাডেক্স ট্যাবলেট-ঠান্ডা রুখবে।
মাথায় রাখুন, ঠান্ডায় আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিক বা পেনিসিলিন কোনো কাজই করে না। কারণ, অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ তো ব্যাকটিরিয়াদের মারা, ভাইরাসদের কিছুই করতে পারে না। গলায় খুশখুশ, গলা ফুলে যাওয়া রুখতেও পেনিসিলিন, অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। এই উপসর্গ যদি এক সপ্তাহের বেশি থাকে তাহলে চিকিৎসককে বলুন। অ্যান্টিবায়োটিক দরকার মনে করলে তিনিই পরামর্শ দেবেন। গলা খুশখুশে গলনালির স্ফীতি ও প্রদাহ তথা গলা খুশখুশ দূর করতে ইষদুষ্ণ গরম জলে নুন মিশিয়ে গার্গল করুন। রাতে শয্যাগত হওয়ার ঠিক আগ দিয়ে। গার্গলের মাধ্যমে যে নুন ঢুকছে গল-গহ্বরে সেগুলিই শুশ্রুষা করবে। কাপ ভরতি গরম জলের মধ্যে ৬ ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল ঢালুন। ফুটন্ত সেই জলের বাষ্প নাকে টানুন। যতক্ষণ সম্ভব। হালকা গরম জলে ৫-৬ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে গার্গল করতে পারেন। উপরের এইসব নিদান প্রয়োগ করে ব্রঙ্কাইটিসের ভোগান্তি আটকানো যায়। গলা খুশখুশের কষ্ট থেকে রেহাই পেতে গরম গরম খান রসুন, পেয়াঁজ, জিরে দিয়ে তৈরি মুরগির মাংসের ঝোল। ঠান্ডা লাগা আটকাতে এবং ঠান্ডা লেগে যাওয়ার পর নিত্য দুই চামচ করে মধু খান।
ব্রঙ্কাইটিসের কষ্ট লাঘবে: ছোটো এক কাপের এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ মধু নিন। তাতে সমপরিমাণ লেবুর রস এবং সমপরিমাণ হুইস্কি। ১০ সেকেন্ড মাইক্রোওয়েভে রেখে গরম করুন। নাড়ুন। ব্রঙ্কাইটিসের কষ্ট শুরু হওয়ার দিনই একবার খেয়ে নিন। রাত পেরলেই কষ্ট উধাও।
রাতে কফকষ্ট থেকে রেহাই পেতে হালকা গরম জলে পা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিয়ে দু-পায়ের নীচে ভিক্স ভেপোরার মলমের প্রলেপ নিন। এরপর মোজা পরে লেপ/ কম্বলের নীচে যান। চটপট আরাম মিলবে। বাচ্চাদেরও একইভাবে বুকে এবং পায়ে প্রলেপ দিয়ে কফকষ্ট লাঘব করা যেতে পারে।