প্রেসার হাই নিত্য লাউ খান

প্রেসার হাই নিত্য লাউ খান

প্রেসার হাই নিত্য লাউ খান; -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ২২ অক্টোবর ২০১১;  পৃষ্ঠা-ষোলো; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
লিভার ভালো রাখতে লাউ খান। লাউয়ে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে, তাই কুয়াশের মতো লাউও হাইপারটেনশন তথা উচ্চ রক্তচাপে ভোগান্তি চলছে যাঁদের, তাঁদের জন্য দারুণ শুশ্রুষাকারী। ১০০ গ্রাম লাউয়ে সোডিয়াম যখন মাত্র ১.৮ মিলিগ্রাম, তখন পটাসিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম। লাউয়ে অনেকটা আয়রন আছে। কাঁচা লাউ স্যালাডে খেতে পারলে কিংবা রস করে মেলে প্রচুর ভিটামিন সি। অনিদ্রার কারণে যাঁদের  পাগল প্রায় অবস্থা তাঁরা লাউয়ের রসের মধ্যে তিল/তিসির তেল মিশিয়ে টানা কিছুদিন যদি শোয়ার আগে পুরো খুলিজুড়ে মেখে শুতে যেতে পারেন তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই উপকার পেতে শুরু করবেন। লাউ হজম করা সহজ। সেজন্য লিভারের সমস্যার কারণে খাবার খেতে যখন অসুবিধা হয়, তখন কিছুদিন দুবেলা লাউ খেতে বলা হয় অনেকটা করে। ব্লাড প্রেসারের বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে যেমন লাউ খাবেন, তেমনই হার্টের রোগীরাও খাবেন লাউ। যখন অ্যাসিডিটি বেড়ে যাওয়ায় মূত্রপথে জস্কলুনি হয়, সেইসব দিনে দুবার একগ্লাস করে লাউয়ের রস খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা লাউয়ের রস খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা লাউয়ের রস যখন খাবেন, তার মধ্যে এক চা-চামচ পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে নেবেন। অকালে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা থেকেই রেহাই পেতে দিনে একবার ছোটো এক গ্লাস ( ২৫০ মিলিলিটার ) লাউয়ের রস খান। শরীরে পাথর হয়ে থাকলে লাউয়ের রস দুবেলা করে খেয়ে তা গলিয়ে ফেলা যায়। হজমের সমস্যা, পায়খানা পরিষ্কার হয় না যাঁদের, তাঁদের নিয়মিত লাউয়ের রস খাওয়া উচিত। রস না খেতে ইচ্ছে করে ডালে সেদ্ধ লাউই খান। দু-বেলা। লাউ মূত্রবর্ধক।

লাউয়ে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সও থাকে। শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বেড়িয়ে যাওয়া আটকায় লাউয়ের রস। সেদ্ধ লাউ বা লাউয়ের রসে তৃষ্ণা মেটে। শুধু গরমেই নয়, যখন অতিরিক্ত আর্দ্রতায় ঘেমেনেয়ে ওঠাটা আপনার জীবনে রুটিন হয়ে উঠছে, তখন সেই তৃষ্ণার্তি  দূর করতে লাউ মহৌষধ। ১০০ গ্রাম লাউয়ে ক্যালসিয়াম থাকে ২০ মিলিগ্রাম। ফসফরাস ১০ মিলিগ্রাম। ফ্যাট ০.১ মিলিগ্রাম। প্রোটিন ০.২ মিলিগ্রাম। আয়রন ০.৭ মিলিগ্রাম। কার্বোহাইড্রেট ২.৫ মিলিগ্রাম। ১০০ গ্রাম লাউ খেলে শরীর মাত্র ১২ ক্যালোরি শক্তি পায়। মূত্রনলিতে জস্কলনের জন্য যখন সালফার জাতীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে আপনাকে, তখনও আপনি দিনে একগ্লাস করে (২৫০ মিলিলিটার) করে লাউয়ের রস খেয়ে যেতে পারেন। এটা ক্ষারীয় দ্রবণ হিসেবে কাজ করে। ডায়ারিয়ার কারণে, ডায়াবেটিসের কারণে অতিতৃষ্ণার ভোগান্তি চলে যাঁদের, লাউ তাঁদের জন্য ব্যাপক শুশ্রুষাকারী। তবে কাঁচা লাউয়ের রস যাঁদের সহ্য হবে না, তাঁদের অনুরোধ করব সেদ্ধ লাউই খাবেন সে ডালে-ঝোলে-অম্বলে যেভাবে ইচ্ছে। এই ফাঁকে একটা কথা বলে রাখি, লাউপাতার রস জন্ডিসের দিনে খুবই উপকারী। লাউপাতার ঝোল ঝোল শাক রান্না করে খান আর তিলের তেল মেশানো লাউয়ের রস মেখে যান সমগ্র খুলিতেই।

নিয়মিত লাউ খেয়ে গেলে কোনোরকম ক্ষতির কোনো আশঙ্কা তো দূরের কথা, লাউ খেয়ে যাওয়া মানে জানবেন; আলসার হওয়ার  আশঙ্কা দূর হবে। হয়ে থাকলে শুশ্রুষা হবে। অ্যাসিডিটি থেকে উদ্ধার মিলবে। মৃগী, মাথা খারাপ রোগের শুশ্রুষা হবে এবং বদহজমের দাওয়াই হিসেবে কাজ করবে। শরীরে র‌্যাশ ওঠার কারণে যখন পাগলপ্রায় দশা, সে বাচ্চাই হোক বা বুড়ো লাউয়ের টুকরো থেঁতো করে প্রলেপ দিন /নিন।

    আগের রাতে পার্টিতে বেশি খানপান হয়ে গেছে। সকালে উঠে শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে, কোনো কিছুই ভালো লাগছে না, এমন যখন অবস্থা, তখন অল্প ডালে প্রচুর লাউ দিয়ে রান্না করুন। সেই ডালের মধ্যে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে খেয়ে নিন। প্রতিদিন সকাল সকাল যদি এক গ্লাস করে লাউয়ের রস খাওয়া যায়, তাহলে শরীর ঠান্ডা হয় নিমেষেই। চড়া রোদে কাজ করতে বেরোনোর আগে এক গ্লাস লাউয়ের রসে একটু নুন এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে বেরন। হিট স্ট্রোকের ভোগান্তি হবে না। গ্যাসের ভোগান্তি, অম্বলের ভোগান্তি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রেহাই মেলে নিয়মিত লাউ বা লাউয়ের রস খেয়ে গেলে। গ্যাসের সমস্যা তো দু-তিনদিনের মধ্যেই দূর হয়ে যায়। লাউয়ের রস শরীরে গেলে পুরো স্নায়ুতন্ত্রই উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। পুরো শরীরতন্ত্র চনমনে হয়ে ওঠে কিছুক্ষণের মধ্যেই। সে রসই হোক আর সেদ্ধ, লাউ খান নিয়মিত। শরীরে চটজলদি বয়সের ছাপ পড়বে না। ত্বকে ভাঁজ পড়বে না, তকতকে থাকবে বছরের পর বছর। লাউয়ের রস খেলে শরীরের প্রতিরোধী শক্তি চাঙ্গা হয়।
   দাঁতের ব্যথায় যখন ভুগছেন, তখন লাউয়ের  রস খান। লাউ থেঁতো করে মাড়ি এবং ব্যথাযুক্ত দাঁতের আশেপাশে ঘষুন। জন্ডিসের সময় লাউ খান। কিডনিতে প্রদাহ হচ্ছে টের পাওয়ার দিন থেকেই লাউ খান নিত্য। লাউয়ের ৯৬ শতাংশই জল। অতএব লাউ খেলে যে শরীরের জলখামতি পূরন হয় তা আর বলতে। লাউয়ে অনেকটা কোলিন থাকে। এই কোলিন খামতির কারণেও পুরুষদের মধ্যে প্রজনন অক্ষমতা তৈরি হয়।     

 

Join our mailing list Never miss an update