পৃথিবী দিবসের ভাবনা

পৃথিবী দিবসের ভাবনা

পৃথিবী দিবসের ভাবনা;- ডাঃ পার্থপ্রতিম;২০শে এপ্রিল ১৯৯২ (৭ই বৈশাখ, ১৩৯৯);দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত
শীতের শেষে প্রকৃতির বুকে গ্রীষ্মের আমেজ। হাসিখুশি দমাল মন নিয়ে কিশোর-কিশোরীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে ‘কাহোগা’ নদীর সুনীল জলে। বাবা-মা সারা শরীরে ট্যান অয়েল মেখে অলস সময় যাপন করছে আলো ঝল-মল নদীতীরে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ছোট্ট শহর ক্লিভল্যান্ড। শহরের বুক চিরে রয়ে গেছে কাহোগা নদী। একটু হাত বাড়ালেই ‘ইরি হ্রদ’। সপ্তাহ শেষের ছুটি কাটানোর পক্ষে এর চেয়ে আর ভালো কি হতে পারে? এপ্রিল-মে মাসে গোলাপ বনে রঙ লাগার সাথে সাথে এখানে ভীড় জমায় অলস ভব ঘুরে, প্রকৃতি-প্রেমী ও রোমান্টিক পাগলের দল।
 

   না-না, এ আজকের কথা নয়। অতীতের স্মৃতি রোমন্থন। এরপর পৃথিবী বহুবার পাক খেয়েছে সূর্যের চার পাশে। শহর জুড়ে গড়ে উঠেছে কল-কারখানা কংক্রিটের জঙ্গল। আকাশ-পানে হাত বাড়িয়েছে বড় বড় অট্টালিকা। নদীর স্বচ্ছ নীল জল ক্রমে ঘোলা থেকে পঙ্কিল হয়েছে। বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থ মিশেছে নদীতে। জল দূষণের পরিমাণ এমনস্তরে পৌঁছে গেল যে- স্থানীয় অনেক শহরবাসীই বিভিন্ন জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হলেন। শেষে ১৯৬৯ সালে নদীতীরের বন্দরে আগুন লাগাতে দূষণ আরো মারাত্মক রূপ নিল। শুধু কাহাগো নদীতেই নয়, ইরি হ্রদের নাম জানা-না জানা বহু মাছ, পাখী, জলজপ্রাণী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বিদায় নিল ধরাধাম থেকে।
  ভোগবাদী নাগরিক চেতনায় পড়ল হাতুড়ির ঘা। পরিবেশপ্রেমী গেলর্ড নেলসন আওয়াজ তুললেন-‘আই অ্যাম অনলি ওয়ান, বাট উই ক্যান ডু সামথিং’। বছর ঘুরতেই ১৯৭০ সালের ২২শে এপ্রিল সারা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে পালিত হল প্রথম পৃথিবী দিবস। মমতাময়ী বসুন্ধরাকে নবজাতকের বাসযোগ্য করে তুলতে হবে, এই আহ্বানে চলল বৃক্ষরোপন, পরিবেশ চেতনা শিবির, পথসভা-আরো কত কি।
    ১৯৯০ সালে পৃথিবী দিবসে নিউ-ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে বসে পরিবেশ বিদদের আলোচনা সভা। পৃথিবীর ১৪০টি দেশের প্রতিনিধিরা তাতে অংশ নেন। ২২তম পৃথিবী দিবসে আমাদের লক্ষ্য হোক- নির্মলবায়ু, সুস্বাস্থ্য ও আনন্দউজ্জ্বল পরমায়ুর পানে।    

Join our mailing list Never miss an update