প্রস্টেট এবং

প্রস্টেট এবং

প্রস্টেট এবং; -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
প্রস্টেট ক্যানসার থেকে মুক্তি দিতে যাঁদের প্রস্টেট গ্রন্থি কেটে বাদ দিতে হয়, পরে তাঁদের অধিকাংশেরই পুরুষাঙ্গের উত্থান ঘটে না। এই উত্থান ক্ষমতা ফেরাতে পারে অক্সিজেন চেম্বারে  শুশ্রুষা। আমেরিকার কানেকটিকাটে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড কেটে বাদ পড়া পুরুষদের অক্সিজেন চেম্বারে শুশ্রুষা করিয়ে উত্থান ক্ষমতা ফেরাতে পেরেছেন বিজ্ঞানী গবেষকরা। সমুদ্রতলের ৪০ ফুট গভীরে ডুবুরিরা যেভাবে অক্সিজেন ব্যবহার করেন, সমতলের অক্সিজেন চেম্বারে সেই ধরনের অক্সিজেন-চাপ তৈরি করে এই শুশ্রুষা চালাতে হয়। মোটামুটি দশ দফার শুশ্রুষাতেই পুরুষাঙ্গ উত্থানক্ষম হয়ে ওঠে। প্রস্টেট গ্ল্যান্ড যখন কেটে বাদ দেওয়া হয়, সেই অস্ত্রোপচারকালে কিছু কোষকলা এবং স্নায়ু নষ্ট হয়ে যায়। যার জেরেই পুরুষাঙ্গ উত্থান ক্ষমতা হারায়। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছোয় না বলেই এমনটি হয়। অক্সিজেন চেম্বারে উচ্চ চাপের অক্সিজেন শুশ্রুষার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেশি পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছায়। তাতেই উত্থান ক্ষমতা ফেরে। উল্লেখ্য, প্রস্টেট/ প্রস্টেট গ্ল্যান্ড হল-পুরুষ মূত্রাশয়ের গ্রীবালগ্ন বৃহৎ গ্রন্থি যা শুক্রকীট বহনকারী তরল উৎপাদন করে।

এদিকে  প্রস্টেট ক্যানসারের শুশ্রুষায় নিয়মিত এক গ্লাস করে বেদানার রস খেতে বলেছেন বিজ্ঞানীরা। এক গ্লাস বলতে ২০০ মিলিলিটার থেকে ২৫০ মিলিলিটার। বয়স্করা যেমন রস করে খাবেন, তেমনই বেদানার দানা যাঁরা চিবিয়ে খেতে ভালোবাসেন, তাঁরা চিবিয়েই খেতে পারেন। একবারে না পারলে দু-বারে খান। রস করে খেলেও তাই। লন্ডনের ক্লিনিক্যাল ক্যানসার রিসার্চ জার্নালে বেরিয়েছে এ সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিবেদন। তাতে বলা হয়েছে, পুরুষ মূত্রাশয়ে সুনির্দিষ্ট যে প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে প্রস্টেট ক্যানসার হয়, প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে তৈরি হওয়া সেই প্রোটিনের দাপাদাপিকে  নিয়ন্ত্রণ করে বেদানার রস। এই প্রোটিন প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন নামে পরিচিত। এছাড়া কালিক্রিন থ্রি সেমিনিন, সেমিনোপ্রোটিন এবং পি থারটি অ্যান্টিজেন হিসেবেও এটি পরিচিত। সুনির্দিষ্ট এই প্রোটিনটির পরিমাণ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন সন্দেহ করা হয় প্রস্টেট ক্যানসার হয়েছে। পঞ্চাশ বা তার বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে সেজন্য ফি বছর পরীক্ষা করিয়ে নিতে বলা হয়।

প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন প্রোটিনটি পুরুষ মূত্রাশয়ের এবং মূত্রনালির চারদিকের গ্রন্থির মধ্যেই তৈরি হয়। সেটির মাত্রা প্রতি মিলিলিটারে চার থেকে দশ ন্যানোগ্রাম হলেই সন্দেহ করা হয়। এরপরই সন্দেহ নিরসনে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষাদি করানোর নির্দেশ দেন চিকিৎসক। যদিও প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেনের মাত্রাধিক্য মানেই প্রস্টেট ক্যানসার হয়েছে ধরে নিতে হবে, এমন নয়। গবেষক ডা. অ্যালান প্যানটাক জানাচ্ছেন, পঁয়ষট্টি থেকে সত্তর বছর বয়সি যাঁরা, প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত বলে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে মন না চাইলেও ভবিতব্য ভেবে নিয়ে তৈরি হচ্ছিলেন, তাঁদের জন্য সুসংবাদ হল, বেদনার রস প্রস্টেটের ক্যানসার পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে পারে না ঠিকই, কিন্তু ক্যানসার কোষগুলির মস্তানি দমায়। জীবনের দৈর্ঘ্য বাড়ায়।

Join our mailing list Never miss an update