রসুন খেলেই কোলেস্টেরল কমে

রসুন খেলেই কোলেস্টেরল কমে

রসুন খেলেই কোলেস্টেরল কমে; -ডাঃ পার্থপ্রতিম। ৫ জুন ২০১০; পৃষ্ঠা- নয়; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
খারাপ কোলেস্টেরল কমবে দিনে ৬০০ মিলিগ্রাম করে রসুন খেয়ে গেলেই। তবে খেতে হবে নিয়মিত। রসুন ইনসুলিনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়ে ডায়াবেটিকদের ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে আনে। রসুন থেঁতো করে রেখে মিনিট দশেক বাদে খান, সে জল দিয়ে গিলেই হোক কিংবা সাঁতলে নিয়ে, একই উপকার। খেতে পারেন কোয়া রসুন, এক কোয়া করে। না হলে বড় রসুনের দুটো করে কোয়া ছাড়িয়ে থেঁতো করে নিয়ে দুবেলা খান। রসুন অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল, অ্যান্টি-ফাংগালও অর্থাৎ জীবাণুনাশক এবং ছত্রাক নাশক। রসুনে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। একশোরও বেশি জৈব রাসায়নিক থাকে রসুনে। রসুন কামোদ্দীপক। পুরুষের কামোদ্দীপনা পর্ব বৃদ্ধি পায় দু বেলা ধারাবাহিক দু কোয়া করে রসুন খেয়ে গেলে। রসুন পুরুষাঙ্গের চোঙে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দিয়ে সম্ভোগের স্থায়িত্ব বাড়ায়। অস্ত্রোপচারের আগে রসুন খেতে নেই। খুব লোকেরই হয়, কিন্তু রসুনখেলে কারও কারও শরীরে স্কিন-র‌্যাশ বেরয়, কারও কারও জ্বর আসে, কারও কারও মাথাব্যথা হয়। তাই যাঁদের অ্যালার্জি হয়, তাঁরা একটু একটু করে সইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। অন্যদিকে উপকারী বলে মুঠো মুঠো করে রসুনের কোয়া খাওয়া শুরু করে দিলেন, তাও একদম ঠিক নয়। তাতে হজমপ্রণালির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা।

    রসুন সম্পর্কে লোককাহিনি হল, আচমকা ঠান্ড লাগা, ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) তে ভোগা থেকে শুরু করে প্লেগের শুশ্রুষায়ও রসুন দারুন দাওয়াই। অ্যাকনে ব্রণতে রসুন থেঁতো করে রাখার ১০ মিনিট পর লাগানে দারুণ শুশ্রুষা হয়। রসুন শরীরের প্রতিরোধী তন্ত্রকে চাঙ্গা করে ক্যানসার সৃষ্টিকারীদের টুটি চেপে ধরে। রক্তে হোমোসিস্টিন এবং সিরিঅ্যাকটিভ প্রোটিনের মাত্রাধিক্য ঘটে যেতে থাকলে হার্টের রোগভোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। রসুন এদের বাড়াবাড়ি রোখে। সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার অর্থাৎ উপর এবং নীচের দিকের পারদস্তম্ভ কমায় রসুন। ঠান্ডা বসে যাওয়ার পর থেঁতো রসুন সাঁতলে খেলে দ্রুত রেহাই মেলে ভোগান্তি থেকে। ৪১ হাজার মধ্যকারী মহিলার খাওয়া দাওয়া জরিপ করে দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত রসুন খান এবং পর্যাপ্ত সবজি, ফলটল খেয়ে চলেন, তাঁদের মলাশয়ে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা ৩৫ শতাংশ হারে কম, যাঁরা ওইরকম খান না তাঁদের নিরিখে। পায়ুমুখের ক্যানসার হোক আর লিভার কিংবা প্যানক্রিয়াটিক অর্থাৎ অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার, এরকম রোগীদের যদি টানা ৬ মাস পরিণত রসুন থেঁতো খাইয়ে চলা যায়, এঁদের প্রতিরোধী তন্ত্র অনেকটাই চাঙ্গা করে তোলা যায়। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলতে বিশেষ করে খিদে কমে যাওয়া, ক্লান্তি-অবসাদে লাট খাওয়া। রসুন কাঁচা থেঁতো করে খেলে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়। জার্মানির প্রখ্যাত মেডিসিন বিজ্ঞানী প্রফেসর (ডাঃ) গুয়াউটনটের সিগেল রসায়নগারে পরীক্ষায় দেখেছেন, রসুন শরীরকে ভালো কোলেস্টেরল ধমনিতে খারাপ কোলেস্টেরল জমতে দেয় না এই ভাবেই হার্টের রোগভোগ হওয়া আটকায় রসুন।

যাঁরা নিয়মিত রসুন খেয়ে যেতে পারেন জানবেন তাঁদের হার্টের রোগভোগ হওয়া আটকে দিচ্ছে রসুনে থাকা সেলেনিয়াম। এই খনিজ পদার্থটি ক্যানসার এবং ভারি ধাতুর বিষক্রিয়াকে প্রতিহত করে। পেপটিক আলসারে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের ব্যাকটিরিয়া ঘটিত রোগের ক্ষয়ক্ষতি কমায় রসুন। ফারাওদের মমিতে রসুনের কোয়া ছড়িয়ে দেওয়া হত রসুন পবিত্র বলে। আর পিরামিড বানাতেন যে ক্রীতদাসেরা, তাঁদের রসুন খাওয়ানো হত বলবৃদ্ধি করতে। গ্রিসে এবং রোমে অ্যাথলিটরা মাঠে নামার আগে রসুন খেতেন। সৈন্যরা যুদ্ধে যাওয়ার আগে নিয়মিত রসুন খেতেন। এক আউন্স আর্থাৎ ২৮.৩৫ গ্রাম রসুনে ক্যালোরি ৪২.২৪। প্রোটিন ১.৮০ গ্রাম। কার্বোহাইড্রেট ৯.৩৮ গ্রাম। খাদ্যআঁশ ০.৬০ গ্রাম। ফ্যাট ০.১৪ গ্রাম। জলীয় ভাগ ১৬.৬১ গ্রাম। অ্যাশ ০.৪৩ গ্রাম। থিয়ামিন তথা ভিটামিন বি ওয়ান ০.৬০ মিলিগ্রাম। রাইবোফ্ল্যাভিন তথা ভিটামিন বি টু ০.০০৩ মিলিগ্রাম। নিয়াসিন তথা ভিটামিন বি থ্রি ০.২০ মিলিগ্রাম। নিয়াসিন সমতুল ০.২০ মিলিগ্রাম। ভিটামিন বি সিক্স ০.৩৫ মিলিগ্রাম। ভিটামিন সি ৮.৮৫ মিলিগ্রাম। ফোলেট ০.৮৮ মাইকোগ্রাম। প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ০.১৭ মিলিগ্রাম। ক্যালসিয়াম ৫১.৩১ মিলিগ্রাম। কপার ০.০৮ মিলিগ্রাম। আয়রন ০.৪৮ মিলিগ্রাম।

Join our mailing list Never miss an update