ঘুমের সাতকাহন

ঘুমের সাতকাহন

ঘুমের সাতকাহন; -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
একজন পুরুষের তুলনায় একজন মহিলার অন্তত ২০ মিনিট বেশি ঘুম দরকার। তার যে মহিলাকে ঘরের এবং বাইরের কর্মজগতের কাজ সমানভাবে সামাল দিতে হয়, তাঁর যদি ঘুম আর একটু বেশি হয়, ক্ষতি নেই, বরং লাভই লাভ। কারণ, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মস্তিষ্ক ব্যবহারের জেরে ব্রেনের কর্টেক্স তথা বহিঃস্তরে যে ক্ষয় হয়, তা পুনরুদ্ধার হয় ঘুম-বিশ্রামের মাধ্যমে। স্মৃতি ভাষা, বোধ এসব উজ্জীবিত হয়। জানিয়েছেন লাউবোরো ইউনির্ভাসিটির স্লিপ রিসার্চ সেন্টারের ঘুম বিশেষজ্ঞ অধিকর্তা প্রফেসর (ডাঃ) জিম হোরনি। তাঁর কথায়, যে সমস্ত পুরুষ দিনভর নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ করেন, চিন্তাভাবনায় নিমজ্জিত থাকেন, তাঁদেরও গড়পড়তা কর্মজীবীর চেয়ে একটু বেশি ঘুমই দরকার। অন্যদিকে গড়পড়তা মহিলাদের ক্ষেত্রে গড়পড়তা পুরুষদের চেয়ে বাড়তি ঘুম দরকার মহিলা মস্তিষ্কের গঠনগত কারণেই। কেননা, মহিলা মস্তিষ্কের গড়ন পুরুষ মস্তিষ্কের তুলনায় জটিল। এদিকে মহিলা মস্তিষ্ক বুড়ো হয় পুরুষ মস্তিষ্কের চেয়ে দেরিতে। যেমন ৭৫ বছর বয়সি একজন মহিলার মস্তিষ্কের বয়স ৭০ বছর, অথচ পুরুষের মস্তিষ্কের বয়স তার শরীরের বয়সেরই সমান। ডাঃ হোরনির সুপারিশ, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমনো দরকার। কেউ কেউ ৬ ঘন্টার আগেই জেগে যান, কাজকর্মও শুরু করে দেন। এরা ব্যতিক্রম। জিন বৈচিত্র্যের কারণে কারো কারো ৩-৪ ঘন্টা ঘুম হলেই যথেষ্ট মনে হয়। তবে এরকম মানুষের সংখ্যা তো খুব বেশি নয়। অন্যদিকে মহিলারা যদি পুরুষদের চেয়ে গড়ে আধ ঘন্টা বেশি ঘুমিয়ে নিতে পারেন, তাহলে পরিবারেরই লাভ। অথচ বাস্তবে যেটা হয় স্বামী এবং ছেলে পুলেদের কাজ সামাল দিতে গিয়ে ঘুম বঞ্চিত থেকে যান মহিলারা! আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিনে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মহিলারা পরম নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন কমই, অধিকাংশেরই ঘুম পাতলা হয়। মহিলাদের ঘুম হালকা হওয়ার অন্যান্য কারণগুলি যেমন গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে পেটে সন্তান থাকা এবং সেই সন্তানের পজিশনের কারণে ঘুম কম হয়। স্বামী নাক ডাকেন, সেই সিংহনাদের কারণেও ঘুম বঞ্চিত হন স্ত্রীরা।

আবার মেনোপজ তথা ঋতুজরা অধ্যায়ে ঢুকে পড়ার সময় কান নাক গরম হওয়া তথা হট ফ্লাশের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তবে এই অধ্যায় পেরিয়ে যাওয়ার পর ঘুম ঠিক হয়ে যায়। মহিলাই হোন আর পুরুষ, একবার বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার পর চোখ জুড়িয়ে যে ঘুম নামে, সেই ঘুম পর্ব যত স্থায়ী হয়, ততই ব্রেনের লাভ। এই গভীর ঘুমপর্ব চটকে গেলে যেমন ক্ষতি হয়, তেমনই এর পরের ঘুমপর্ব ক্রমাগত হালকা হতে থাকে। সামান্য শব্দেও হালকা ঘুম ভেঙে যায়। অন্যদিকে শিশু কেঁদে উঠলে মা জেগে ওঠেন, অথচ বাবা সেই কান্নাকে উপেক্ষা করেই ঘুমিয়ে থাকতে পারেন। নানা ধরনের ঘুম অভ্যাস জরিপ করে দেখা গেছে, একই বিছানায় যদি একজন ভারী মানুষ এবং একজন পাতলা মানুষ পাশাপাশি ঘুমোন, তাহলে পাতলা মানুষটি ঘুমের মধ্যে নাড়াচাড়া করার কারণে ভারী মানুষটির গায়ে গিয়ে পড়েন। ঘুম ভেঙে যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রেই এরকম বেশি হয়। এদিকে ইউনিভার্সিটি অফসারে-র গবেষণা জানিয়েছেন মহিলাদের ঘুম যদি একবার চটকে যায়, তাহলে সেই ঘুমাবস্থা ফিরে পাওয়া কঠিন হয়।

Join our mailing list Never miss an update