বাজি থেকে বিপত্তি

বাজি থেকে বিপত্তি

বাজি থেকে বিপত্তি; -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ১৯ কার্তিক ১৩৯৮(মঙ্গলবার); বর্তমান পত্রিকায় প্রকাশিত

দীপাবলী মানেই যেন বাজি-পটকা। এরমধ্যেই চারদিকে পুড়তে শুরু করেছে- চকলেট বোম, হাউইবাজি, তুবড়ি, ফুলঝুরি, দোদমা আরও কত নাম জানা না জানা আতসবাজি।
    এইসব বাজির মধ্যে থাকে একটি সহজ দাহ্য মিশ্রণ, যেটি বাতাসের অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই জ্বলতে পারে। আসলে অক্সিজেনের জোগান দেওয়ার জন্য বাজির মিশ্রণে থাকে সোরা বা পটাসিয়াম নাইট্রেট অথবা কোনও কোনও ক্ষেত্রে পটাসিয়াম ক্লোরেট। এই যৌগ দু’টিতে আগুন লাগলেই তা থেকে অক্সিজেন বেরিয়ে আসে। দাহ্য পদার্থ হিসাবে বাজির মধ্যে থাকে কাঠকয়লার গুঁড়ো, গন্ধক বা সালফার।
   

তারাবাজি, ফুলঝুরি, তুবড়িতে স্ফূলিঙ্গ বা ফুলকি তৈরির জন্য সীসার যৌগ, অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার গুঁড়ো মিশিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কয়েক বছর হল বাজারে এসেছে রঙ-বেরঙের আলো সৃষ্টি করা বাজি। এসব বাজিগুলিতে বিভিন্ন রঙের আলোর জন্য বিভিন্ন ধাতব লবণ ব্যবহার করা হয়। যেমন- অ্যান্টিমনি ও আর্সেনিক যৌগ থাকে বলে তুবড়ির আলো হয় উজ্জ্বল সাদা। বেরিয়াম লবণ সবুজ, সোডিয়াম সল্ট হলুদ, পটাসিয়ামের লবণ হালকা সাদা ও তামার সল্ট নীল আলো তৈরি কর

বাজি পটকাতে যে জ্বালানি সালফার ও কার্বন থাকে তা পুড়ে সালফারডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়। সালফার ডাই অক্সাইড শ্বাসনালী ও ফুসফুসে ঘা বা ক্ষত সৃষ্টি করে। এই গ্যাস বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে তৈরি করে সালফিউরাস ও সালফিউরিক অ্যাসিড। এসব অ্যাসিড ত্বকের ক্ষতি করে। তবে সে পরের কথা। কার্বন মনোক্সাইড ফুসফুসের মধ্য দিয়ে প্রাণীর রক্তের সাথে মিশে পরিণত হয় সুস্থির কার্বক্সিহিমোগ্লোবিনে। ফলে জীবকোষে ঠিক মতো অক্সিজেন সরবরাহ হতে পারে না। এজন্য মাথাধরা, ক্লান্তিভাব ও আরও বহু উপসর্গ দেখা দেয়।

    বাজি পটকার মিশ্রণের সীসা বা লেড অক্সাইডের বিষক্রিয়ায় রক্তাল্পতা, দেহের অঙ্গগুলির অসাড়তা দেখা দিতে পারে। দেখা গেছে- শিশুদের ক্ষেত্রে সীসার বিষক্রিয়া বেশি। অ্যান্টিমনি দূষণের ফলও সীসার মতোই। আর্সেনিক থেকে দুরারোগ্য চুলকানি, যকৃতের গোলযোগ দেখা দেয়। অনেক ফিজিওলজিস্টের মতে আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। ম্যাগনেসিয়াম, বেরিয়াম প্রভৃতি ধাতু আমাদের শরীরের জৈবিক ক্রিয়া চালানোর জন্য অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হলেও; এদের মাত্রা বাড়লে শরীরে দেখা দেয় নানারকম অসুবিধা। বাজির ধোঁয়ার সঙ্গে এসব পদার্থ প্রথমে ফুসফুসে যায়, তারপর রক্তে মেশে।
    পটকার সবচেয়ে মারাত্মক দিক হল শব্দ দূষণ। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার’ হিসাব অনুযায়ী দিনে ৪৫ ডেসিবেল ও রাতে ৩৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ আমাদের শরীর ও মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এরফলে কান-মাথা ঝাঁঝাঁ, গা বমি বমি ভাব, অল্পতে রেগে যাওয়া, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে  নানা রোগ দেখা যায়। আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ এন্ড ওয়েলফেয়ারের গবেষকরা সমীক্ষা করে দেখেছেন গর্ভপাত ও অপরিণত শিশু জন্মের জন্য এ ধরনের আচমকা আওয়াজই বেশি দায়ী। তবে কি বাজি ফাটাবেন না। তা নয়, তবে সবই রয়ে সয়ে ভাল।      

Join our mailing list Never miss an update