আতস বাজি; -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ২৫ অক্টোম্বর ২০০৩; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
খাজনা আদায়ের কাছারি, গোলাঘর, মোষের খামার একে একে তলিয়ে গেল গোটা গ্রাম। হোয়াং হো-ইয়াং সিকিয়াং-এর জলে চারিদিক থৈ থৈ। এ নিশ্চয়ই সেই শয়তানের কারবার। দুর্যোগ থেকে বাঁচতে গেলে ভয় দেখাতে হবে অপদেবতাকে। পোড়াতে হবে বাজি পটকা।
না, এ বর্তমানের কোনো ঘটনার বিবরণ নয়। আজ থেকে দু’হাজার বছর আগেকার কথা। তখন চীনে রাজ করছে হ্যান বংশ। সে সময় চীনাদের ধারণা ছিল- বন্যা, ভূমিকম্প, অনাবৃষ্টি এগুলি হয় শয়তান বা অপদেবতার কান্ডকারখানার ফলে। তাই বাজি পটকা ফাটিয়ে তারা তাদের ভয় দেখাতো। এ বিশ্বাস তাদের মধ্যে বহুবছর বজায় ছিল। এমন কি ১২৩২ সালে যখন প্রবল পরাক্রমী মোঙ্গলরা চীন আক্রমণ করে তখন হাউইবাজির সাহায্যে তাদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপে বাজি পটকা লড়াই-যুদ্ধের কাজেই ব্যবহার করা হতো। হিস্ট্রি অব দ্য ইউরোপিয়ান ওয়ার্ল্ড বই থেকে জানা যায় ১৫০৯ সালে ইতালিতে প্রথম আনন্দ উৎসবে বাজি পোড়ানো হয়। তারপর ১৫৭২ সালে ইংল্যান্ডের রানি প্রথম এলিজাবেথ ওভারভিচ শহরে এক বিরাট বাজি উৎসব করেন। ১৬১৩ সালে প্রথম জেমস-এর মেয়ের বিয়েতে টেমস নদীর বুকে নৌকা থেকে মজার মজার বাজির ভেল্কি দেখানো হয়। এ দৃশ্য এতটাই আকর্ষণীয় ছিল যে বহু বছর ধরে সে গল্প লোকের মুখে মুখে ঘুরতো। অষ্টাদশ শতকে পঞ্চদশ লুই-এর উৎসাহে ফ্রান্সে নতুন নতুন বাজি পটকা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়।