ভাগ্য ফেরাতে পরশ পাথর(গোমেদ)

ভাগ্য ফেরাতে পরশ পাথর(গোমেদ)

ভাগ্য ফেরাতে পরশ পাথর(গোমেদ); -ডাঃ পার্থপ্রতিম; ১৮ মার্চ, ১৯৯১ (সোমবার); দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত

দিন-প্রতিদিনের জীবনধারায় আমরা জড়িয়ে আছি নানা সমস্যায়। কিছু সমস্যার সমাধানের পথ আমাদের জানা; আবার কিছুক্ষেত্রে তা অজানা। আমাদের সাধ্য ও সাধ্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। এর পাশাপাশি চলছে ভন্ড ব্যবসায়ীদের সরব প্রচার মাধ্যম। এই সব কিছু মিলিয়ে আমাদের যুক্তিহীন মন ছুটে যায় সেই রত্নের খোঁজে, যার পরশে হবে ধনলাভ, শত্রুনাশ, চাকরি বা ব্যবসায় উন্নতি, গুণবতী ভার্যা-লাভ, যৌন ক্ষমতার পুনরুদ্ধার আরও কত কী! কী আছে এই সব রত্নের মধ্যে? এর প্রভাব শারীরিক বা মানসিকভাবে কি হতে পারে? তার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
জ্যোতিষীদের মতে-রাহু অশুভ হলে বা পাপদুষ্ট হলে বিনা কারণে ভ্রমন, উন্মাদনা, কর্মচ্যুতি, আত্মীয়হানি, নীচ সংসর্গ, দৈহিক রোগ-ব্যাধি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। গোমেদ রত্ন ধারণ করলে রাহুর দোষ কেটে যায়।
    গোমেদ জারকনিয়াম সিলিকেট নামে যৌগিক পদার্থের কেলাস বা কৃস্টাল। এই কেলাসগুলি পিরামিডাকার, প্রিজিমাকার, আয়তঘনাকার প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির হয়। গোমেদ সমআয়তন জলের তুলনায় ৪ থেকে ৪. গুণ ভারী। মো- স্কেলে এর কঠিনাঙ্ক হয় ৭ থেকে ৭.৫। গোমেদ সাধারণত উজ্জ্বল, স্বচ্ছ, বাদামী রঙের হলেও লাল, কমলা ও বর্ণহীন গোমেদও দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন রঙের আলোকরশ্নি প্রতিসরণের মাত্রা বা রি-ফ্যাকটিভিটি গোমেদের ১.৯৫। রঙিন গোমেদকে খুব গরম করলে তা বর্ণহীন, স্বচ্ছ ও চকচকে হয়ে যায়। একে ম্যাচুরা ডায়মন্ড বলে।
    শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউসাউথ ওয়েলস থেকে পাওয়া গোমেদ খুবই দামী। নরওয়ের আরইনজন, রাশিয়ার উরাল পর্বতে, কানাডার কিউবেক ও ওন্টারিয়াতে খুব স্বচ্ছ গোমেদ পাওয়া যায়। ভারত ও ব্রাজিলে যে গোমেদ পাওয়া যায় রত্নের বাজারে তার দাম খুব কম।
    পূর্ব ও উত্তর ভারতে যে সব জ্যোতিষ-রত্ন ব্যবহৃত হয় তার ৪৬ শতাংশ হলো গোমেদ। নৃতত্ত্ববিদেরা বলেন- বংশগত কারণেই এই অঞ্চলের মানুষের হাতের গড়নে এই বৈশিষ্ট্য থাকে। এজন্য জ্যোতিষীরা বেশিরভাগ লোককেই বলেন, রাহুর স্থান খারাপ। কেমিক্যাল বায়োলজিস্ট বা জীব রসায়নবিদদের মতে, গোমেদ বা জারক-নিয়াম সিলিকেটের আংটি পরা বা কাচের আংটি পরা একই ব্যাপার। কারণ জীবকোষে এদের প্রভাব একই রকম। সবচেয়ে মজার বিষয়-রাহু গ্রহের বাস্তব অস্তিত্ব নেই। পৌরাণিক গ্রন্থে আছে- রাহু কেতু নামে দুই গলা কাটা দৈত্য সূর্য ও চন্দ্রকে বার বার গ্রাস করে ও কাটা অংশ দিয়ে সূর্য-চন্দ্র বার বার বেরিয়ে যায়। এ জন্যই সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ হয়। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের প্রকৃত কারণ আজ আমাদের অজানা নয়। তা হলেই বোঝা যাচ্ছে কাল্পনিক রাহুর দোষ কাটানোর জন্য গোমেদ ধারণ করা উচিত, ‘এটা নিরেট ধাপ্পাবাজি’।

Join our mailing list Never miss an update