ভাগ্য ফেরাতে পরশ পাথর(নীলা)

ভাগ্য ফেরাতে পরশ পাথর(নীলা)

ভাগ্য ফেরাতে পরশ পাথর(নীলা) -ডাঃ পার্থপ্রতিম;১৪ ই জানুয়ারি, ১৯৯১(সোমবার); দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত
দিন-প্রতিদিনের জীবনধারায় আমরা জড়িয়ে আছি নানা সমস্যায়। কিছু সমস্যার সমাধানের পথ আমাদের জানা; আবার কিছুক্ষেত্রে তা অজানা। আমাদের সাধ্য ও সাধ্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। এর পাশাপাশি চলছে ভন্ড ব্যবসায়ীদের সরব প্রচার মাধ্যম। এই সব কিছু মিলিয়ে আমাদের যুক্তিহীন মন ছুটে যায় সেই রত্নের খোঁজে, যার পরশে হবে ধনলাভ, শত্রুনাশ, চাকরি বা ব্যবসায় উন্নতি, গুণবতী ভার্যা-লাভ, যৌন ক্ষমতার পুনরুদ্ধার আরও কত কী! কী আছে এই সব রত্নের মধ্যে? এর প্রভাব শারীরিক বা মানসিকভাবে কি হতে পারে? তার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

জ্যোতিষীদের মতে- শনিগ্রহ দুঃখবাদী ও মৃত্যুর কারণ। অশুভ ছায়া বা চিন্তাকুন্ডলী শনির সহচর। স্ত্রীর প্রতি সন্দেহশীলতা, বাতের আক্রমণ, গৃহ সম্পত্তি নাশ, বন্ধু এবং স্বজনের দ্বারা পরিত্যাগ, বুদ্ধিভ্রম এ সবই শনির কুদৃষ্টির ফল। এর প্রতিকার হলো-নীলকান্তমণি বা নীলা-র আংটি পরা।
নীলা আসলে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড নামক যৌগিক পদার্থের কেলাস বা কৃস্টাল। অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড খনির মধ্যের চাপ ও তাপের ফলে নীলাতে রূপান্তরিত হয়। কেলাসের আণবিক অবস্থানের মধ্যে টাইটেনিয়াম থাকে তাই এর রঙ নীল। বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া নীলার রঙের তফাত দেখা যায়। এর কারণ হলো টাইটেনিয়াম ছাড়াও জারক্যান ও বিভিন্ন গ্যাস থাকে। নীলা সমআয়তন জলের তুলনায় ৪-৪.২ গুণ ভারী। এর কঠিনাংক ‘মো-স্কেলে’-৯। বার্মার মৈনাক, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্স-ল্যান্ড, ব্রিটেনের সাউথ বেন্স ও ভারতের কাশ্মীরে নীলা পাওয়া যায়। এছাড়া রোডেশিয়া, শ্রীলংকা ও আমেরিকার কিছু কিছু জায়গায় নীলা পাওয়া গিয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী নীলাদি ‘স্টার অফ ইন্ডিয়া (৫৫৬ ক্যারেট)’ পাওয়া গিয়েছিল কাশ্মীরে, সেটি এখন আছে আমেরিকার ন্যাচারাল মিউজিয়ামে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নীলাটি ‘বুডম-স্পান সৈলর’ আছে প্যারিসের রাষ্ট্রীয় সংগ্রহালয়ে। অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড পাউডার থেকে কৃত্রিমভাবেও নীলা তৈরি করা যায়।  
  

  জীবরাসায়নিক প্রযুক্তিবিদেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ত্বকের মধ্য দিয়ে কেলাসাকার অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে না। নীলার কঠিনাংক খুব বেশি হওয়ার জন্য যাওয়ার সময় তা ক্ষয় হয়ে খাদ্যের মাধ্যমে শরীরের ভিতর পৌঁছায় না। তাছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তিকে টাইটেনিয়ামযুক্ত অ্যালু-মিনিয়াম অক্সাইড খাইয়ে তার মস্তিষ্কে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কিছু কিছু ব্যক্তি নীলার প্রভাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন-নীলা কস্মিক-রে বা মহাজাগতিক রশ্নি শোষণকরে শরীরে চালান করে দেয়, ফলে মস্তিষ্ক ভালভাবে কাজ করে। এই অপ-বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিতান্তই হাস্যকর। কারণ কসমিক-রে একই সাথে হাতের আংটি ও মানুষের দেহে সমানভাবে পরে। কস্মিক-রে শোষণ করে তা পরিবহন করার কোন বিশেষ ক্ষমতা নীলার মধ্যে বেতার পদার্থবিদরা পাননি। তা হলেই বোঝা যাচ্ছে নীলার ভাগ্য পরিবর্তনের বিশেষ ক্ষমতা আছে বলে জ্যোতিষীরা যা দাবি করেন; তা মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়।

Join our mailing list Never miss an update