ঘরের ভেতর মহিরুহ- পর্ব-৯

ঘরের ভেতর মহিরুহ- পর্ব-৯

ঘরের ভেতর মহিরুহ- পর্ব-৯- বনসাইয়ের মাটি - ২- ডাঃ পার্থ প্রতিম; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত

বনসাই টবের মাটি সাধারণ ভাবে দু’তিন বছর পর পর বদলানো হয়।  টবে যেহেতু মাটির পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে কম থাকে তাই মাটি তৈরীর সময় বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
 প্রথমত, দেখতে হবে দীর্ঘদিন থাকা সত্ত্বেও মাটি যেন জমাটবেঁধে না যায়।
দ্বিতীয়ত, গাছের জন্য সুষম খাদ্য দীর্ঘদিন ধরে সরবরাহ করতে পারে।
তৃতীয়ত, মাটির উপাদানগুলির মাপ এমন হবে যাতে অতিরিক্ত জল টবের নিচে থাকা ছিদ্র দিয়ে ঠিকমতো বেরিয়ে যায়। মাটির মধ্যে থাকা ফাঁক ফোঁকর দিয়ে হাওয়া বাতাস চলাচল করতে পারে।
মাটি, মোটা বালি, ইটের গুঁড়ো, গোবরসার, পাতাপচা সার, হাড়গুঁড়ো, কাঠের ছাই এই সব বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে বনসাইয়ের মাটি তৈরি করা হয়।
 মাটির উপাদানের আকার মোটামুটি তিন মাপের হলে ভালো হবে - মোটা মাঝারি ও ছোট। মোটা টুকরোর আকার হবে কাবলি ছোলার মতো, মাঝারি দানাগুলি গোলমরিচের মাপে, আর ছোট দানাগুলি মুগডালের মতো হবে,  বিভিন্ন জালের চালুনি দিয়ে চেলে দানার মাপগুলি বেছে নেওয়া উচিত। টবের নিচের দিকে থাকবে মোটাদানাগুলি, এটি মাটির মোট আয়তনের ১০ থেকে ২০ শতাংশ জুড়ে থাকবে। এক্ষেত্রে মোটা দানা বলতে নুড়ি ও ইটের  টুকরো বোঝায়। এরপর থাকে মাঝারি মাপের মাটি, এটি সারমাটি, মোটাবালি,  হাড়ের গুড়ো এসব দিয়ে তৈরী। এই অংশটি টবের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তি করবে। একদম ওপরে পাতা পচাসার, গোবর সার, খইল পচা থাকবে। মাটির গুনাগুন নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আর একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ; সেটি হল পি.এইচ.ভ্যালু। এটি একটি সাংকেতিক চিহ্ন, যা হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। শূন্য থেকে চোদ্দো পর্যন্ত এই স্কেল থাকে। পি. এইচ দিয়ে পরিমাপ করা হয় কোন দ্রবণ কতটা আম্লিক বা ক্ষারকীয়। পি. এইচ ভ্যালু সাত হলে তা আম্লিক বা ক্ষারকীয় নয়। সাতের কম হলে আম্লিক ও সাতের বেশি হলে তা ক্ষারকীয় হয়। গাছ সাধারণ ভাবে কিছুটা অম্লধর্মী মাটি পছন্দকরে। তবে খুব আম্লিক বা ক্ষারকীয় মাটিতে গাছ বাঁচতে পারে না। কারণ নাইট্রোজেন সংগ্রহ কষ্টকর হয়ে পড়ে। পি. এইচ মাপ ৭.৩ এর কম থাকলে তবেই গাছ তার প্রয়োজনীয় ফসফরাস গ্রহণ করে। পটাসিয়াম অঙ্গীকরনের জন্য পি. এইচ ৮ এর কম হওয়া প্রয়োজন। কোন মাটির পি.এইচ ভ্যালু কত তা জানার জন্য সহজ রাস্তা আছে। রাসায়নিক বিক্রেতাদের কাছে পি. এইচ লিটমাস পাওয়া যায়। কোন মাটিকে একটু জলে গুলে সেই জলকে ফিস্টার পেপার দিয়ে ছেকে নিতে  হবে। সেই জলে পি. এইচ লিটমাস ভেজালে তার রঙ পালটে যায়। তারপর পি. এইচ সরনীর সাথে লিটমাসের রঙ মেলালে বোঝা যাবে মাটি কতটা আম্লিক বা ক্ষারকীয়। এছাড়াও বিভিন্ন মাটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে মাটির বিস্তারিত গুনাগুন আরো নিখুঁতভাবে জানা সম্ভব। অম্লত্ব কমাতে মাটিতে চুন মেশাতে হয়। আর ক্ষারত্বের মাত্রা কমাতে জিপসাম বা ক্যালশিয়াম সালফেট, গন্ধক গুঁড়ো মেশানো যেতে পারে।

এবার বিভিন্ন গাছের সুষম বৃদ্ধির জন্য মাটির প্রয়োজনীয় পি. এইচ মানগুলি জেনে নেওয়া যাক।

গাছ                                                     মাটির পি. এইচ ভ্যালু
(১) বট, অশ্বথ, পাকুড়                                    ৫.০- ৬.০
(২) পাইন (পাইনাস)                                       ৫.০ - ৬.০
(৩) বাবলা (এ্যাগাসিয়া এ্যারাবিকা )                 ৬ . ৫-৭ . ৫
(৪) দেবদারু ( পলিয়ালথিয়া লঙ্গিফলিয়া )       ৫ . ০ - ৬ .০
(৫) আম (ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা )                      ৫ .০ - ৬ .০
(৬) বিভিন্ন প্রজাতিক বাঁশ                               ৫ .০ - ৭ .০
(৭) পাতিলেবু (সাইট্রাস অর‌্যানটিয়াম)             ৭. ৫ - ৮ . ০
(৮) কমলা লেবু (ওরেঞ্জ)                                  ৫ . ০- ৭ . ০
(৯) জুঁই (জ্যাসমিনিয়া)                                     ৬ . ০ - ৮ . ০
(১০) বোগেনভেলিয়া                                         ৫ . ৫ - ৭ . ৫



 

Join our mailing list Never miss an update