মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয় তার কাজ কর্ম ও আর্থসামাজিক অবস্থার দ্বারা

মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয় তার কাজ কর্ম ও আর্থসামাজিক অবস্থার দ্বারা

কুসংস্কারবিরোধী আন্দোলন ও প্রবীর ঘোষ প্রায় সমার্থক হয়ে গেছে। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। শতাধিক জ্যোতিষী ও আলৌকিক ক্ষমতাশীল ভন্ড বাবাজির তিনি মুখোশ খুলেছেন। চল্লিশটির বেশি গ্রন্থের লেখক। তাঁর লেখা ‘আলৌকিক নয় লৌকিক’ বইটি সপ্তাহের পর সপ্তাহ বেস্ট সেলার ছিল বাংলা প্রকাশনার জগতে। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের কিছু প্রশ্ন নিয়ে শ্রীঘোষের মুখোমুখি হয়েছেন ডাঃ পার্থপ্রতিম।  ১১ আগস্ট, ২০০৫ ; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত

ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ-বিজ্ঞান আন্দোলন চললেও আবার পৃথকভাবে যুক্তিবাদী আন্দোলন কেন?
প্রবীর ঘোষঃ- ৭০ এর দশকের আগে বিজ্ঞান আন্দোলন বলতে মনে করা হত বিজ্ঞানের তৈরি, মডেল প্রদর্শনী, দু-একটি কর্মশালা এমন কিছু অনুষ্ঠান। এর বাইরে সাধারণ মানুষের সমস্যাকে কেন্দ্র করে তেমন কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। কোনো রকম বড় উত্তোরণকেই আমরা বিপ্লব বলতে পারি। আসলে যুক্তিবাদী মন বা মানসিকতা ছাড়া কোনো রকম উত্তোরণ বা বিপ্লব সম্ভব নয়। নকশাল আন্দোলনের ক্ষেত্রে সমাজ পালটে দেওয়ার মানসিকতা থাকলেও গ্রাম্য ও শহরের মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানমানসিকতার বিকাশ না ঘটার জন্য সামগ্রিকভাবে আন্দোলনটি ব্যর্থ হয়।

ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ- আমাদের দেশে যুক্তিবাদী আন্দোলনের পটভুমি কেমন?
প্রবীর ঘোষঃ-ভারতবর্ষে যুক্তিবাদী চেতনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। চার্বাকদের দর্শনে কার্যকারণ সম্পর্কের উল্লেখ আছে। তাছাড়া, গৌতম বুদ্ধ এক বিরাট ব্যক্তিত্ব, যিনি যুক্তিমনষ্ক; ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না। পরবর্তীকালে জাতকের গল্প হিসাবে প্রচার লাভ করে। কিন্তু প্রাচীন বৌদ্ধপুথিপত্র ঘাঁটলে দেখতে পাব গৌতমবুদ্ধ ছিলেন যুক্তিবাদী, যিনি বলেছেন অপৌরুষের গ্রন্থ হয় না। অর্থাৎ ঈশ্বরের মুখনিঃসৃতবাণী বলে কিছু নেই। এইভাবে একটু একটু করেই কৌতুহলী-যুক্তিবাদী মন এগিয়েছে। একদিনে রাতারাতি কিছু হয়নি।

ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ- ভারতবর্ষের যুক্তিবাদী আন্দোলনের অন্তরায়গুলি কী কী ?
প্রবীর ঘোষঃ- ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষ বহু প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন জাত-ধর্ম-বর্ণে বিভক্ত। সমাজের কিছু ক্ষমতাশীল মানুষ দলিত-অবহেলিতদের সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করে এসেছে। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র এই সব বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করে নিয়ে; বর্গের মানুষকে বোঝানো হতো আজ তারা যে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছে এ সবাই ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঘটেছে। এসব পূর্বজন্মের পাপের ফল। এই জন্মে যদি তারা সততার সঙ্গে জীবনযাপন করে, প্রভুর অনুগত থাকে তবে পরজন্মে তার সুফল ভোগ করবে। তারা মৃত্যুর পর পাবে স্বর্গীয় সান্নিধ্য। এই যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতি আস্থা, এই যে ভাগ্য নির্ভরতা-বিশ্বাস এটা এখনো বিভিন্ন রূপে বর্তমান। বিভিন্ন ক্ষমতাসিন রাজনৈতিক দলও চায় যে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধরনের অবৈজ্ঞানিক মানসিকতা বজায় থাকুক। তাতে শাসক বা শোষকের শাসনকার্ষ চালাতে সুবিধা হয়।

ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ- আপনাদের সংগঠনের মূল কাজটি কী ?
প্রবীর ঘোষঃ- আমাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য জ্যোতিষী নয়। আমরা সাধারণ মানুষের সেই মানসিকতাকে বদলাতে চাই যা তাদের জ্যোতিষী অভিমুখী করে তোলে। আমরা তাদের বলতে চাই, হাতের রেখা বা দূর আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র নয়-মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয় তাদের কর্ম ও আর্থসামাজিক অবস্থান দ্বারা। জ্যোতিষশাস্ত্র বলে বাজারে যা প্রচলিত তা পুরোপুরি ভাঁওতা। এখন অনেক জ্যোতিষী এটাও দাবী করেন, তারা দুরারোগ্য ব্যাধি সারিয়ে দিতে পারে। এ ধরনের বিজ্ঞাপনও প্রকাশিত হয় বহুল প্রচারিত পত্রিকার পাতায়। ভারত সরকারের ‘ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমোডিস আইন ১৯৬৩ আইন অনুসারে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া জামিন অযোগ্য অপরাধ। তাছাড়া যে-কোনও রোগ গ্যারান্টি দিয়ে সারাবার নামে যারা তাবিজ, কবজ ইত্যাদি বিক্রি করে, তাদের এই তাবিজ-কবজ ইত্যাদি আইনগতভাবে ‘ওষুধ’ হিসাবেই বিবেচিত হবে। বিনা লাইসেন্স এই জাতীয় ওষুধ বিক্রি অবশ্যই অপরাধ। এই তাবিজ কবজে অসুখ না সারলে বা রোগীর মৃত্যু হলে, ইন্ডিয়ান পিনাল কোড-এস ৩২০ ধারামতে বিক্রিতা শাস্তি পাবে। শাস্তির পরিমাণ কমপক্ষে ৫ বছরের জেল থেকে আজীবন কারাদণ্ড, সঙ্গে জরিমানা কম করে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু আমাদের দেশে বিশেষত এই রাজ্যে এ ধরনের বেআইনি কারবার রমরমিয়ে চলছে।
 
ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ- আপনারা বহু জ্যোতিষীও আলৌকিক ক্ষমতাশালীর মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে কিছু বলুন।
প্রবীর ঘোষঃ- বিভিন্ন টিভি চ্যানেল মারফত আমরা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি, এইসব জ্যোতিষী বা অবতারদের। প্রায় সব ক্ষেত্রেই তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছি। তাছাড়াও আমাদের স্বেচ্ছাসেবক ও সংগঠনের কর্মীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘লৌকিক নয় আলৌকিক’ প্রদর্শনীর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে দেখান কীভাবে দেশলাই-বারুদ ছাড়া আগুন জ্বালানো যায়, কী কৌশলে মানুষ শূন্যে ভাসে, আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে চলা যায়, আরও বহু কিছু।

ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ- জ্যোতিষী পেশাকে বেআইনি প্রমাণ করার বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলুন।
প্রবীর ঘোষঃ- জ্যোতিষীদের বৃত্তিকর দেওয়া বন্ধ করার পেছনে আমরা সফল পদক্ষেপ নিয়েছি। আসলে ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ট্যাক্স অন প্রফেশন, ট্রেডস, কলিং অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট ১৯৭৯-এ আইনসম্মত পেশার যে তালিকা আছে তাতে জ্যোতিষী ব্যাবসা নেই। জ্যোতিষী আইন স্বীকৃত পেশা নয়। জ্যোতিষী ভৃগু আচার্য (তার প্রকৃত নাম মণীশশঙ্কার দাশগুপ্ত) বৃত্তিকর জমা দিতে আসেন তিনি তার পেশার প্রমাণ হিসাবে সার্টিফিকেট জেরক্স কপি জমা দেন। সার্টিফিকেট দিয়েছেন ‘অ্যাসট্রোলজিক্যাল রিসার্চ প্রজেক্ট’ ৭০, কৈলাস বোস স্ট্রীট, কলকাতা-৭০০ ০০৬। এটি সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট ১৯৬১ অনুসারে রেজিস্ট্রিকৃত। এটা কোনো বিধিবদ্ধ আইনসম্মত সংস্থা নয়, যারা কোনো পেশাকে লাইসেন্স দিতে পারে। আমাদের সদস্য ও সহযোগীরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। শেষমেশ সরকারি তরফ থেকে জ্যোতিষী ভৃগু আচার্য-এর বৃত্তিকর প্রত্যাখ্যান করা হয়।

ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ- বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে জ্যোতিষ পড়ানোর বিষয়ে আপনারা কীভাবে প্রতিবাদ করেছেন ?
প্রবীর ঘোষঃ- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউ জি সি ) এ দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্কুলার পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিল-‘আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি ও মাস্টার ডিগ্রি শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান বিভাগে জ্যোতিষ পড়াতে চান কী না ? চাইলে ৩১ মার্চের মধ্যে আমাদের জানান। জ্যোতিষ পড়ানোর প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ইউ জি সি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তৈরি করে দেবে। ’... এই সংবাদ আমাদের কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তৎকালীন মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী মুরলীমনোহর যোশীর কাছে প্রতিবাদ জানাই। আমরা চ্যালেঞ্জ জানাই-‘যোশীজি আপনি প্রমাণ করুন জ্যোতিষশাস্ত্র বিজ্ঞান।’.... এর পাশাপাশি দেশজুড়ে জনমত তৈরির চেষ্টা চালাই। প্রচন্ড চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে যুক্তিবাদীদের জয় পুরোপুরি এসে গেছে এটা ভাবা ঠিক নয়। কারণ কিছু দিন আগেও বর্তমান মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী অর্জুন সিং জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে প্রকাশ্যে সাফাই গেয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, যোশির বিরুদ্ধে এ রাজ্যের মানুষ যতটা সরব ছিল, অর্জুন সিং-এর ক্ষেত্রে ততটাই নীরব।

ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ- এ রাজ্যে যুক্তিবাদী আন্দোলন কোন পর্যায়ে সাফল্য পেয়েছে ?
প্রবীর ঘোষঃ- এটা খুবই দুঃখের বিষয়, এ রাজ্যে এতদিন বামপন্থী বা মূলত মার্কসবাদী সরকার থাকা সত্ত্বেও এখানেই জ্যোতিষী ও অবতারদের রমরমা বাজার। পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে টিভি চ্যানেল যে দিকেই নজর দিন তা স্পষ্ট চোখে পড়বে। এ রাজ্যে ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারি ও জ্যোতিষীর সংখ্যা কয়েকহাজার। তবে এইসব নবকলেবরধারী ভগবানেরা একজনও এগিয়ে এসে নোবেল চুরি সমস্যার সমাধান করে দিলেন না। এটা খুবই দুঃখের বিষয়। তারপরেও এরা দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে সরকার পরিবর্তনের পর সাংস্কৃতিক যে আন্দোলন হওয়া উচিত ছিল -তা একেবারেই হয়নি। দলের কর্মীসংখ্যা দ্রুত বাড়ানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই আপস করা হয়েছে। কোয়ান্টিটি বেড়েছে আর নেমেছে কোয়ালিটি। আজ অনেক বামপন্থী নেতাকে দেখা যায়, বাবার ধামে গিয়ে চরণামৃত খেতে, পূজা কমিটির প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি হতে।

ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ- এটা তো জনসংযোগের অঙ্গ বা উৎসবের মিলনমেলায় অংশগ্রহণ হতে পারে।
প্রবীর ঘোষঃ- না, ধর্মীয় পরিমন্ডল ছাড়াও উৎসব করা যায়। কবিগুরু বহু বছর আগেই শান্তিনিকেতনে বর্ষাবরণ, পৌষমেলা, বসন্ত উৎসবের প্রচলন করেছিলেন। আজও তা সমানতালে চলছে। যেখানে কোনো ঠাকুর দেবতার মূর্তি নেই, নেই কোনো পির মাজার। এমনকি বাংলাদেশেও শুধু ভাষাকে ঘিরে ২১শে ফেব্রুয়ারি যে দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে, এ রাজ্যে তার ছিটেফোঁটা নাই। আসলে এখন যাদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা এসেছে তাদের মধ্যে অনেকেরই মানসিক উত্তরণ ঘটেনি।

ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ- বর্তমানে ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’-ও কিছু সাংগঠনিক অসুবিধার কথা শোনা যাচ্ছে-এর কারণ কী ?
প্রবীর ঘোষঃ- আমাদের সংগঠনের কাজকর্মে বিশেষত জ্যোতিষকুল ও অবতারেরা একেবারেই ক্ষুদ্ধ। তারা সব সময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের ওপর আঘাত হানার। আমাদের সংগঠনের মধ্যে ভাঙন ধরাতে ও পালটা সংগঠন তৈরি করার চক্রান্তে মেতেছে। এ কাজে তারা বহু টাকা ব্যয় করছে। আমাদের কিছু কর্মীকে তারা অর্থ দিয়ে প্রলুব্ধ করতে চাইছে। তবে এটা সাময়িক সমস্যা। এভাবে কোনো আন্দোলনকে রোখা যায় না। অন্তত ইতিহাস তাই বলে। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমিতি নিবন্ধকরণ আইন অনুসারে 'ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি'-র বিকল্প কোনো অস্তিত নেই।
 
ডাঃ পার্থপ্রতিমঃ- উত্তরবঙ্গের যুক্তিবাদী মানসিকতার সামগ্রিক চিত্রটি আপনি কীভাবে দেখেছেন ?
প্রবীর ঘোষঃ- উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। যাদের মধ্যে ডাইনি, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবজের কুসংস্কার প্রবলভাবে বিরাজ করেছে। এদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালানো দরকার। প্রয়োজনে পথনাটিকা, যাত্রা, পুতুল নাচ এইসব গণমাধ্যমকে বেছে নিতে হবে। ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ পত্রিকা আপন পরিকাঠামোর মধ্যে বেশ ভালো কাজ করে চলেছে। এই পত্রিকাতে নিয়মিত বিজ্ঞানের পাতা প্রকাশিত হয়। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন স্বরূপ ২০০৩ সালে ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ পত্রিকা-কে র‌্যাশনালিস্টস্ অ্যাওয়ার্ড দিয়েছি। তবে মঞ্জিল বহুত দূর, জোরসে কদম বাড়াও।

Join our mailing list Never miss an update