ঘরের ভেতর মহিরুহ- পর্ব-৭- বনসাইয়ের টব- ডাঃ পার্থ প্রতিম; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
বনসাই শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ হল অগভীর পাত্রে লাগানো গাছ। তাই বনসাই বলতে শুধু গাছকেই বোঝায় না। টবের বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে টবটি হবে অগভীর। বনসাই চর্চায় দু ধরনের টবের প্রয়োজন। প্রাথামিক অবস্থায় ট্রেনিং চলাকালীন যে পাত্র ব্যবহার করা হয় তুলনামূলক ভাবে বড় মাপের। এখানে গাছটির টেনিং বা তালিম চলে। এই পর্যায়ে শেকড় কাঁটা, ডালকাটা, ডাল বেঁকানো এসব করার পর গাছটি যখন মোটামুটি আকারে আসে তখন তাকে স্থায়ী টবে বসানো হয়। স্থায়ী টবকে চলতি কথায় আমরা বনসাই টব বলি।
বনসাই টবের যে সব বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার -
(১) ঝুলন্ত বা হেলানো ভঙ্গিমার বনসাই ছাড়া আর সব ক্ষেত্রেই টব হবে অগভীর।
(২) টবগুলি আয়তাকার, গোলাকার, বর্গাকার, ডিম্বাকৃতি, আটকোনা, ছয়কোনা, অনিয়তাকার, আরো বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে।
(৩) টব কখনোই উজ্জ্বল, নক্সাকাটা, কারুকাজ করা হবে না। দর্শকের দৃষ্টি গাছের চেয়ে টবের দিকে বেশি না যায় সে বিষয়ে নজর রাখা দরকার।
(৪) টবের নিচের জল বের হওয়ার ও বাতাস চলাচলের জন্য অবশ্যই একাধিক ছিদ্র বা ফুটো থাকা উচিত।
(৫) টবের নিচের দিকে আধা ইঞ্চি উঁচু খুঁটি লাগাতে হবে। এতে টবটি মাটি বা লাগোয়া তল থেকে কিছুটা ওপরে থাকবে। জল সহজে বেরিয়ে যাবে ও কেঁচো উই পোকা এসব ক্ষতিকারক প্রাণী টবের মাটিতে সহজে ঢুকতে পারবে না।
(৬) টবের নিচের বেড় বা গোলাই ওপরের চেয়ে কিছুটা কম থাকবে। যাতে শেকড় ছাটা ও টব বদলানোর সময় মাটি ও শেকড় সহ গাছটি টব থেকে আলাদা করতে অসুবিধা না হয়।
বনসাই টবের উপাদান বিভিন্ন হতে পারে পোড়ামাটি চীনামাটি বড় ঝিনুক পাথর সিমেন্ট কাঠ খোদাই করেও অনেকে বনসাই টব তৈরী করেন। এসব কিছু নির্ভর করে ব্যক্তির রুচি পছন্দ ও শিল্প ভাবনার ওপর। তবে গাছের স্বাস্থ্যের বিষয়টি প্রাধান্য দিলে পোড়ামাটির টবই সবচেয়ে ভালো। এতে মাটির সঠিক আর্দ্রতা বজায় থাকে, টবের গায়ে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে বলে শেকড় প্রয়োজনীয় হাওয়া বাতাস পায়। ঝুলন্ত বা আধা ঝুলন্ত বনসাইয়ের টব কতটা গভীর হবে তা নির্ভর করে গাছের আকার ও গাছটি কত ডিগ্রি কোনে হেলানো রয়েছে তার ওপর। অনেকে একটি পাত্রে একাধিক বনসাই বসিয়ে অরণ্য সদৃশ্য ভঙ্গিমা তৈরী করেন। এসব ক্ষেত্রে টবের আকার যে বড় হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গোলাকার না হয়ে ডিম্বাকার টবেই ফরেস্ট স্টাইল ভালো লাগে।
বনসাই টবের আকার কেমন হবে তা নিয়ে আগের থেকে চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন। টবের আকার বলতে টবের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত সর্বাধিক দৈঘ্যকে বোঝায়। তা সে গোলাকার ডিম্বাকার আয়তাকার যাই হোক না কেন। বড়সড় গাছ যেমন ছোট পাত্রে লাগালে মোটেই ভালো লাগবে না; ঠিক তেমনই আবার বড় টবের মধ্যে ছোট গাছও বেমানান।