ঘরের ভেতর মহিরুহ; পর্ব-৫

ঘরের ভেতর মহিরুহ; পর্ব-৫

ঘরের ভেতর মহিরুহ; পর্ব-৫; বনসাইচর্চার উপকরণ - ডাঃ পার্থপ্রতিম; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
 যে কোন শিল্পচর্চার জন্য তার কিছু উপকরণ বা যন্ত্রপাতি লাগে। যেমন-আপনি যদি প্রকৃত গায়ক হতে চান তবে আপনার হারমোনিয়াম, তানপুরা এসব দরকার। অঙ্কন শিল্পীর দরকার রঙ, তুলি, ইজেল, ক্যানভাস। ভাস্কর্য সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন ছেনি, বাটালি, হাতুড়ি বিভিন্ন খোদাই-পালিসের সাজ সরঞ্জাম। তেমনই বনসাই তৈরীর জন্য দরকার কিছু বিশেষ যন্ত্রপাতি।
    বিদেশে বনসাইচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি একটি বাক্সের মধ্যে সেট হিসাবে পাওয়া যায়।  এদেশে এখনো সেরকম কিছু আছে বলে জানা নেই। নার্সারীতে খোঁজ করলে কিছু সরঞ্জাম অবশ্যই পাওয়া যাবে। তাছাড়া একটু মাথা খাটিয়ে স্থানীয় কামারকে দিয়েও কাজের উপযোগী জিনিসপত্র বানিয়ে দেওয়া তেমন কঠিন ব্যাপার  নয়।
(১)    চালুনি- সার, মাটি ও বালি চালবার জন্য চালুনি দরকার। বিভিন্ন মাপের ছিদ্রযুক্ত চালুনি থাকলে ভালো তাতে কাজের সুবিধা হয়।
(২)    বিভিন্ন ধরনের কাঁচি- গাছের ডালছাটা,পাতাকাটা, শেকড় ছাঁটা এসবের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাঁচি থাকলে অল্প পরিশ্রমে কাজ করা যায়। ডালকাটার জন্য ব্রাঞ্চ প্রুনার (*), শেকড় ও শাখা প্রশাখা কাটার কাজে প্রুনিং সিজার এরকম আরো বহুকিছু আছে। তবে কাজ শুরু করার জন্য এতসব না হলেও চলে।
(৩)    তামা, অ্যালুমিনিয়ামের তার- গাছের ডাল বাঁকানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই তার বাঁধতে বা জড়াতে হয়। প্রয়োজন মতো বিভিন্ন গেজের মোটা ও সরু তার হাতের কাছে রাখতে হবে।
(৪)    তার কাটার কাঁচি বা প্লাস - তার কাটার কাজে প্রয়োজন মতো এটি লাগে।
(৫)    ঘূর্নায়মান টুল বা টার্ন টেবিল - বনসাই পরিচর্যার সময় এই টুলের ওপর টবটিকে বসালে ইচ্ছামত এদিক সেদিক ঘোরানো যায়। গাছে বেশি ঝাঁকি লাগে না। শিল্পীকেও বারবার এপাশ ওপাশ সারতে হয় না। বুদ্ধি খাটিয়ে কাঠমিস্ত্রিকে দিয়ে এটি তৈরী করা যায়। ঘোরানো কাজে পাটাতনের নিচে বলবেয়ারিং লাগানো যেতে পারে।
(৬)    জ্যাক অথবা স্ক্রু ক্ল্যাম্প- গাছের মোটা, শক্ত ডাল বাঁকানোর জন্য এগুলি ব্যবহার করা হয়। এর সাহায্যে দীর্ঘদিন ধরে অল্প অল্প করে চাপ বাড়িয়ে শক্ত ডাল বাঁকানো যায়। তবে হাতের কাছে এসব না পেলেও তার বা দড়ি বেঁধে তাতে ওজন ঝুলিয়ে কাজ চালানো যেতে পারে।

(৭)     ছোট্টকরাত বা হ্যাকস- পুরানো গাছ এনে তাকে বনসাই করার সময় মোটা ডাল কাটতে হতে পারে। এই মোটা ডাল কাটার কাজে অনেক সময় ছোট হ্যাকস  ব্যবহার করা হয়।
(৮)     তারের ডাল বা মশারি নেটের টুকরো - বনসাই তৈরীর টবের নিচে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্র বা ফুটোর সাহায্যে টবের অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।  টবের মাটি দিয়ে অনেক সময় ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে দেখা যায়। ফল গাছের গোড়ায় জল জমে বনসাইটি মরে যেতে পারে। সে কারণে টবে মাটি ভরার আগে ছিদ্রের ওপর তার বা নাইলনের জাল বিছিয়ে দিলে এই অসুবিধা সৃষ্টি হয় না। তাছাড়া জালের ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে বলে গাছের শেকড় ঠিক মতো বাড়তে থাকে।
(৯)     জলের ঝাঝারি- বনসাইতে জল দেবার জন্য বা গাছের ডাল পাতা ধুয়ে দেবার জন্য জলের ঝাঝারি খুবই ব্যবহৃত হয়। যারা ফুলের বাগান করেন তাদের কাছে এটি এক অতি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
(১০)    স্প্রেয়ার - গাছে কীটনাশক দেওয়া, তরল সার প্রয়োগ করা, গাছের পাতা ধুয়ে দেওয়ার কাছে স্প্রেয়ারের প্রয়োজন। বিভিন্ন নার্সারীতে এই স্প্রেয়ার কিনতে পাওয়া যায়। তাছাড়া অন্য দোকানেও এটি পাওয়া যেতে পারে। চুলকাটার সেলুনে চুল ভেজাতে এধরনের স্প্রেয়ার ব্যবহৃত হয়ে থাকে।  
(১১)    কাঠের গোঁজা বা কাঠি- বনসাই টবের মাটি খুঁচিয়ে দেওয়ার জন্য এই কাঠি দরকার। লম্বা স্ক্র ডাইভার দিয়েও এ কাজ করা যেতে পারে।
বনসাই চর্চা শুরু করার পর কাজ করতে করতে প্রয়োজন মতো আরো কিছু যন্ত্রপাতি আপনি নিজেই যোগার করে নিতে পারেন। তবে যে যন্ত্রপাতিই আপনার কাছে থাকুক না কেন তার রক্ষণাবেক্ষণটা খুবই জরুরী। কাজের পর সব ধুয়ে মুছে পরিস্কার  করে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে আলসেমী করা চলবে না। বিশেষত কাটাকাটি করার যন্ত্রপাতিতে নিয়মিত ধার দেওয়া দরকার।
   সত্য কথা বলতে কী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব কোন শিল্পীর কাজেই কোন কালে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। শিল্পের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসাটাই আসল।

Join our mailing list Never miss an update